
বিপ্লব দাশ : হরিয়াণার ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রাকে নিয়ে কয়েকিদন ধরে বেশ সরগরম গোটা দেশ। তার গুপ্তচরবৃত্তির কাহিনীর পাশাপাশি হুমড়ি খেয়ে পড়ছে শরীর ও সম্পর্কের নানান গল্প। গল্প নাকি সত্য, সেসব এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। বিষটা হল- গুপ্তচরবৃত্তি। আরও বড় কথা হল- এ দেশে আইএসআই-এর নেটওয়ার্ক কতটা বিছিয়েছে। কারণ, জ্যোতিকাণ্ডের সূত্র ধরে ১১ জনকে পাকড়াও করেছে পুলিশ। পাক গুপ্তচর সংস্থার বহর দেখে নড়ে চড়ে বসেছে গোয়েন্দারাও। কথা হল, যত সহজে এদের ধরা গেল, আগে ওদের হদিশ পাওয়া কী তত কঠিন ছিল ? সকলেই তো চোখের সামনে ঘুরে বেড়িয়েছে এতদিন !
যে সব ঘটনা প্রবাহ একের পর এক উঠে আসছে, তার হদিশ কেন গোয়েন্দারা রাখেনি আগে ? বেশ তো বোঝাই যাচ্ছে, কী ভাবে পাকিস্তানের হাই কমিশন ধাপে ধাপে এই গুপ্তচরবৃত্তি পরিচালনা করে আসছিল। তাদের লক্ষ্য যে শুধু জ্যোতি মালহোত্রার উপর গিয়ে পড়েছিল, তা তো নয়। হয়তো জ্যোতির মতো আরও কত উচ্চাকাঙ্ক্ষী, ঐশ্চর্য বিলাসী ভারতীয় তরুণ তরুণীরা এর জালে জড়িয়ে আছে !
মাধুরী গুপ্তার কথা বোধ হয় ভুলে গেছেন সবাই। পাকিস্তানের হয়ে যার গুপ্তচরবৃত্তির কাহিনি হার মানায় জেমস বন্ডের “দ্য স্পাই হু লাভড মি” ছবিকেও। অথচ এই মাধুরী ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনে প্রেস অ্যান্ড ইনফর্মেশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি। একসময়ের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। ফরেন সার্ভিসেস পাশের পর ইরাক, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া ও ক্রোয়েশিয়ায় কাজ করেছিলেন। উর্দুতে পারদর্শী বলে ২০০৭ সালে তাঁকে পাঠান হয় ইসলামাবাদে। তখন তাঁর বয়স ৫২ বছর। এক পাকিস্তানি তরুণের প্রেমে পড়েন, যার আবার বয়স ৩০ বছর। যে ছিল আইএসআই-র চর। তাঁর প্রেমে মাধুরী এতটাই মশগুল ছিলেন যে ভারতীয় সেনা, র-এর কাজ, ভারত-মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, এমন কি ২৬/১১ মুম্বই হানার তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ নথিও তুলে দিতে দ্বিধা করেননি। পরে অবশ্য দিল্লিতে ডেকে এনে মাধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। অপরাধমূলক চক্রান্ত ও চরবৃত্তির জন্য দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।
তাহলে বোঝা যাচ্ছে পাকিস্তানের হয় চরবৃত্তির ট্রেডিশান এখনও চলছে সমানে। কিন্তু এই নেটওয়ার্কটা যে পরিচালিত হচ্ছিল পাকিস্তান হাইকমিশন থেকে তা জানতে এত দেরী হল কেন ? পাকিস্তানে যাওয়ার একটি সরল ভিসা প্রক্রিয়া থেকে কীভাবে এরা জড়িয়ে পড়ছে পাকিস্তানি গুপ্তচরদের জালে তা বোঝা উচিত ছিল। যেমন জ্যোতি মালহোত্রার জেরে এখন পরিষ্কার হচ্ছে এদেশে আইএসআই-র চক্রজাল কতটা। এবার নিশ্চয়ই টনক নড়বে ভারতীয় গোয়েন্দাদের !