
শুভাশিস চট্টোপাধ্যায়ঃ রাশিয়া-ইউক্রেন, ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন যুদ্ধের পর এবার মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা। যুদ্ধের আঁচ এবার ভারতের প্রতিবেশি দেশ ইরানে। গতকালই প্রায় দুশোটি ড্রোন নিয়ে ইজরায়েলের উপর হামলা চালায় ইরান। এই ঘটনায় ফের যুদ্ধের কালো মেঘ পশ্চিম এশিয়ায়। গতকাল রাতেই উদ্বিগ্ন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ফোনে কথা বলেন ইরান এবং ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে। আর্জি জানান আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের। পশ্চিম এশিয়ায় ফের যুদ্ধের কালো মেঘ। আর এবার তা ভারতের নাকের ডগাতেই। দামাস্কাসে ইরানি দূতাবাসে হামলার পাল্টা হিসেবে রবিবার দুই শতাধিক ড্রোন নিয়ে ইজরায়েলের উপর হামলা চালায় তেহেরান। মার্কিন এবং বৃটেনের সেনাবাহিনীর সাহায্যে প্রায় সব কটি ড্রোনকেই গুলি করে নামায় ইজরায়েলি সেনা। ইজরায়েলের তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি না হলেও তারপর থেকেই উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে পশ্চিম এশিয়ায়। ইতিমধ্যেই পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেলআভিবও। ইজরায়েলি সেনার মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি জানিয়েছেন আমাদের পাল্টা পদক্ষেপ কি হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। ইজরায়েলি সংবাদ মাধ্যমের একাংশের দাবি ইজরায়েলি সেনা সেদেশের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে পাল্টা প্রত্যাঘাতের পরামর্শ দিয়েছে। এরপরই দুদেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা গাঢ় হতে থাকে। উত্তেজনা প্রশমনে ভারতের বিদেশমন্ত্রী গতকাল গভীর রাতে ইরান এবং ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রীকে ফোন করেন। দুই বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গেই তাঁর বিস্তারিত কথা হয়েছে বলে এক্স হ্যান্ডে পোস্ট করে নিজেই জানান এস জয়শঙ্কর। ইরান এবং ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রীকে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার আর্জি জানিয়ে জয়শঙ্কর বলেন নয়া দিল্লি চায় আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান। এই সংকটে ভারত নিরপেক্ষ অবস্থান নিলেও পশ্চিম এশিয়ায় নতুন করে উত্তেজনায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে নয়া দিল্লি। ভারত তার প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলের ৮০ শতাংশই বাইরে থেকে আমদানি করে। তার একটা বড় অংশই আসে ইরান থেকে। সেখানে যুদ্ধ শুরু হওয়া মানে জ্বালানির যোগানে টান পড়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি। বর্তমানে ব্যারেল প্রতি অশোধিত তেলের দাম ৯০ ডলার। যুদ্ধ শুরু হলে তা ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের। ফলে তেল আমদানি করতে হলে ভারতকে গাঁটের কড়ি বেশি খরচ করতে হবে। তার প্রভাব পড়বে বাজারে। বাড়বে জিনিষপত্রের দাম, ঘটবে মুদ্রাস্ফিতি। আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে যেটা মোটেও কাম্য নয় মোদি সরকারের কাছে। তাই ভারতের আগ বাড়িয়ে এই শান্তির আবেদন বলে মত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের। ইতিমধ্যেই অবশ্য পশ্চিম এশিয়ায় অশান্তির আঁচ এসে পড়েছে শেয়ার মার্কেটে। এদিন স্টক এক্সচেঞ্জ খুলতেই নিফটির পতন হয় প্রায় ৯০০ পয়েন্ট। এয়ার ইন্ডিয়াও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইজরায়েলের সঙ্গে বিমান পরিষেবা বন্ধের ঘোষণা করেছে। সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিজেদের এয়ারপোর্ট বন্ধ করে দিয়েছে কুয়েতও। আমেরিকা এবং রাষ্ট্রপুঞ্জও অবশ্য ইরানের নিন্দার পাশাপাশি ইজরায়েলকে পাল্টা হামলার পথে না যেতে আর্জি জানিয়েছে। এখন কোথাকার জল কোথায় গড়ায় সেটাই দেখার।