
ওঙ্কার ডেস্ক : কাশ্মীরে চেনাব নদীর উপর বিশ্বের সর্বোচ্চ সেতু- অঞ্জী ব্রিজ। শুক্রবারই যার আনুষ্ঠ্যানিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন, দৃষ্টিনন্দন এই সেতু ইতিমধ্যে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সারা বিশ্বকে। অথচ এর নির্মাণের জন্য লেগে গেল ১৭ বছর। ২৭২ কিলোমিটার দির্ঘ উঢমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেলওয়ে লিঙ্কের সংযোগকারী এই ব্রিজটি নির্মাণের জন্য কেন্দ্রের অনুমোদন পায় সেই ২০০৩ সালে। অটল বিহারী বাজপেয়ী তখন প্রধানমন্ত্রী। তারপর নিঃশব্দে চলেছে এর কাজ। আজ যা সকলের কাছে বিস্ময়, তার নির্মাণের পিছনে অপরিসীম অবদান এক মহিলার, নাম- অধ্যাপক জি মাধবী লাথা। বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সেস-এর অধ্যাপিকা। ১৭ বছর ধরে যিনি চেনাব সেতু প্রকল্পে ভূ-প্রযুক্তিগত পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।

জি মাধবী লাথা সেতুর ঠিকাদার আফকনসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করে গেছেন। কাঠামোর পরিকল্পনা, নকশা এবং নির্মাণে ভূতলের বাধাগুলো কিভাবে কাটিয়ে তোলা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বর্তমানে আইআইএসসি-তে এইচএজি অধ্যাপিকা। ডঃ লথা ১৯৯২ সালে জওহরলাল নেহেরু টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি. টেক করেন। যেখানে তিনি ডিস্টিনশনের সঙ্গে ফার্স্টক্লাস পান। এরপর ওয়ারাঙ্গলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে এম.টেক করেন। গোল্ড মেটালিস্ট। তার বিশেষত্ব ছিল জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। ডঃ লথা ২০০০ সালে আইআইটি-মাদ্রাজ থেকে জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডক্টরেট করেন। ২০২১ সালে, ইন্ডিয়ান জিওটেকনিক্যাল সোসাইটি তাঁকে সেরা মহিলা জিওটেকনিক্যাল গবেষক হিসেবে পুরস্কৃত করে। ২০২২ সালে তিনি ভারতের স্টিমের শীর্ষ ৭৫ জন মহিলার তালিকায়ও স্থান পান।
চ্যালেঞ্জিং ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া এবং চেনাব সেতুর দূরবর্তী অবস্থানের কারণে এই অঞ্চলে নির্মাণ কাজ কঠিন হয়ে পড়েছিল। ডঃ লাথার টিম সমস্ত বাধা অতিক্রম করার জন্য “নকশা-অ্যাজ-ইউ-গো” পদ্ধতি গ্রহণ করেছিল। এর অর্থ ছিল ভগ্ন শিলা, লুকানো গহ্বর এবং বিভিন্ন ধরণের শিলা বৈশিষ্ট্যের মতো ভূতাত্ত্বিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে তাকে সময়োচিত করে তোলা, যা প্রাথমিক জরিপে স্পষ্ট ছিল না।

নির্মাণের সময় ডঃ লাথার টিম প্রকৃত শিলা ভরের অবস্থাকে ঘিরে কাজ করার জন্য জটিল গণনা করে। নকশারও পরিবর্তন করা হয়। স্থিতিশীলতা উন্নত করার জন্য শিলা নোঙ্গরের নকশা এবং স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছিলেন ডঃ লাথা। তিনি সম্প্রতি ইন্ডিয়ান জিওটেকনিক্যাল জার্নালের মহিলাদের বিশেষ সংখ্যায় “ডিজাইন অ্যাজ ইউ গো দ্য কেস স্টাডি অফ চেনাব রেলওয়ে ব্রিজ” শিরোনামে একটি গবেষণাপত্রও প্রকাশ করেছেন।, সেতুর নকশা কীভাবে ক্রমাগত অয়াধুনিকীকরণ করা হয়েছে তা রয়েছে এই গবেষণাপত্রে।
সেতুটি নির্মাণের জন্য খরচ হয়েছে ১,৪৮৬ কোটি টাকা। চেনাব সেতুটিকে সরকার “সাম্প্রতিক ইতিহাসে ভারতের যেকোনো রেল প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বড় সিভিল-ইঞ্জিনিয়ারিং চ্যালেঞ্জ” হিসাবে বর্ণনা করেছে। ৩৫৯ মিটার লম্বা এই সেতুটি আইফেল টাওয়ারের চেয়ে ৩৫ মিটার লম্বা।