
অমিত দাস, কলকাতাঃ সন্দেশখালিতে সাংবাদিক সন্তু পান গ্রেফতার মামলায়, কলকাতা হাইকোর্টের তীব্র ভর্ৎসনা মুখে পুলিশ। জামিনে মুক্ত রিপাবলিক বাংলার সাংবাদিক সন্তু পান। জামিনের পাশাপাশি তদন্তে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ।
সন্দেশখালি কাণ্ড নিয়ে প্রায় দুমাস ধরে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি।সন্দেশখালির উত্তাপ পৌছেঁচে গোটা দেশে। গত সোমবার এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন সন্তু পান। সেদিন বিকেল ৫ টা নাগাদ আচমকাই সাংবাদিক সন্তু পানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার তাকে বসিরহাট আদালতে তোলা হয়। আদালত সন্তুকে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। পরবর্তী জামিনের আর্জি নিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন সন্তু। বুধবার ধৃত সাংবাদিক হয়ে আদালতে সওয়াল করেন মহেশ জেঠমালানি।
আদালতে মহেশ: অভিষেক সিংয়ের স্ত্রী আরো এক মহিলাকে ইন্টারভিউ করেন সাংবাদিক। মহিলাদের ইন্টারভিউ সব রেকর্ড করা আছে। সেখানে নাইটি ধরে টানাটানির কিছু বিষয় নেই।
রাজ্যের আইনজীবী: মহিলাদের গোপন জবান বন্দী দেখা হোক।
রাজ্যকে বিচারপতি কৌশিক চন্দ: FIR এ কি আছে? আর আগে ভিডিও রেকর্ডিং দেখি। (ল্যাপটপে মহিলাদের ইন্টারভিউয়ের ভিডিও দেখে আদালত) পরে সেই ভিডিও রাজ্যের আইনজীবীকে দেখানো হয়।
বিচারপতিঃ এই ভিডিও ঠিক কি? রাজ্যের আইনজীবীর কাছে জানতে চান বিচারপতি।
রাজ্যের আইনজীবীঃ আমি এই ভিডিও স্বীকার বা অস্বীকার কিছুই করছি না।
বিচারপতিঃ যদি এই ভিডিও সত্যি হয় তাহলে FIR মিথ্যে । আইও কোথায়? ভিডিও যদি ঠিক হয় তাহলে FIR আযুক্তিক। এজি বলুন, FIR এর কি ব্যাখ্যা দেবেন?
রাজ্যের আইনজীবীঃ এটা নিয়ে বলার আগে আমার কিছু বলার আছে।
বিচারপতিঃ কি আর বলবেন, আপনার আইও এজলাসে দাড়িয়ে বলছেন, ভিডিও সত্যি। আমি তো দেখছি।
বিচারপতিঃ FIR করার আগে প্রাইমারি অনুসন্ধান করেছেন?
এজি: সেটা পারিবারিক গোলমাল সহ কিছু ক্ষেত্রে করতে হয়। এই ক্ষেত্রে সরাসরি FIR করা দস্তুর।
বিচারপতিঃ তাহলে কি অন্য কোনো ক্ষেত্রে অনুসন্ধান করার কোনো জায়গা নেই? এই FIR কেনও এর কিন্তু ব্যাখ্যা পাচ্ছিনা।
রাজ্যের আইনজীবীঃ যে ভিডিও বা ইন্টারভিউ কোর্ট কে দেখানো হলো সেই ভিডিও আইও কে দেখানো হয়নি। (আদালতের নির্দেশের সন্তু কে গ্রেপ্তারের মূহুর্ত্তের ভিডিও ও মহিলাদের ইন্টারভিউ নেওয়ার ভিডিও দেখা হয় এজলাসের সব মনিটরে)
রাজ্যের আইনজীবীঃ এত সাংবাদিক যাচ্ছেন সেখানে একজনকে কেনো পুলিশ গ্রেফতার করবে? আর তাকে প্রথমে ভালোভাবে যেতে বলা হয়েছে। জোর করে হয়নি।
বিচারপতিঃ তার মানে যদি সব সাংবাদিক গ্রেফতার হতো তাহলে ঠিক ছিল। কিন্তু যেহেতু একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে তাই তার অভিযোগ মিথ্যে?
(রাজ্য মোবাইলে একটি ভিডিও দেখায় বিচারপতিকে। যেখানে অভিযোগকরি মহিলা প্রতিবেশীদের কাছে অভিযোগ করেছেন তার বাড়ির দরজায় ধাক্কা মেরে ঢুকেছে সন্তু।)
বিচারপতিঃ এখানে কোথায় অভিযোগ ৩৫৪ ধারার যোগের মতো? কোথায় কোথায়? আপনাকে সেই জায়গাটা দেখাতে হবে তো যার জন্য এই ধারা যোগ করলেন।
বিচারপতিঃ কেনো FIR খারিজ করবো না!
রাজ্যের আইনজীবীঃ এটা খুব প্রাথমিক অবস্থা তদন্তের। এখনই এটা করা যায় না।
( সন্তু পানের জামিন মামলাতেই উঠে আসে সুমন দে র মামলার প্রসঙ্গ। জেঠ মলানি আদালতে জজকে বলেন, শুধু এই সাংবাদিক নয়, একটু পরে আপনার কাছে আরো একটা মামলা উঠবে, যেখানে সুমন দে র বিরুদ্ধেও FIR করা হয়েছে সন্দেশ খালি ইস্যুতেই)
মহেশ: মহিলার যে ভিডিও রাজ্য দেখিয়েছে তার জন্য ওনার সাজা হওয়া উচিত। কারণ প্রথম ওই ভিডিও তে কোনো অভিযোগ ছিল না শ্লীলতাহানির। কিন্তু গ্রেফতারির এত তাড়া ছিল পরে গিয়ে তড়িঘড়ি একটা অভিযোগ দাড় করানোর চেষ্টা হয়েছে। সব জামিন যোগ্য ধারার মধ্যে ওই ধারা যুক্ত করা হয়েছে জামিন অযোগ্য করার জন্য। সাজার মেয়াদ যেখানে সাত বছর বা তার কম, সেখানে আগে নোটিস পাঠানোর কথাও ভাবে নি পুলিশ। সাংবাদিকের কাজ যা চলছে তাই তুলে ধরা।
বিচারপতিঃ sorry to say পুলিশ অফিসার সিস্টেমের সঙ্গে ছেলে খেলা করছেন। কোনো আইডিয়া আছে ভোট পরবর্তী হিংসায় কি কি হয়েছে? আপনার আই ও যা খুশি লিখে মামলা দার করাচ্ছেন। আমি আবার বলছি, আপনার পুলিশ অফিসারদের কাজকর্ম দেখে আমি দুঃখিত।