
বিশ্বজিৎ হালদার, ওঙ্কার বাংলা : শহরের বুক থেকে হারিয়ে যেতে চলেছে কলকাতার ঐতিহ্য। শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রায় ১৫২ বছরের উজ্জ্বল ইতিহাস। যে ট্রামকে বর্তমানে অবহেলার চোখে দেখা হচ্ছে, ব্রিটিশ কলকাতায় এই ট্রাম ছিল কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ যান। সত্যজিৎ রায়ের মহরনগর থেকে রণবীর কপূরের বরফি সহ হিন্দি ও বাংলায় বহু সিনেমা চিত্রিত হয়েছে এই ট্রামে। এভাবে কলকাতার ট্রামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজারো নস্টালজিয়া। গত শতকের ৯০ দশক পর্যন্ত ট্রাম ছিল কলকাতার আইডেন্টিটি। বহু খুশির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির এক বেদনাদায়ক কাহিনী। ট্রামের তলায় চাপা পড়ে মারা গিয়েছিলেন বাঙ্গালার প্রাণের কবি জীবানন্দ দাশ।
ভারতের মধ্যেই প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলে কলকাতায়। শিয়ালদহ থেকে সার্কুলার রোড হয়ে বৌবাজার এবং ডালহৌসী হয়ে তৎকালিন আর্মেনিয়ায় ঘাট পর্যন্ত প্রথম ট্রাম লাইন পাতা হয়। ট্রাম চালাতে অস্ট্রেলিয়া থেকে ঘোড়া নিয়ে আসেন তৎকালিন পুর কর্তা জাস্টিস অফ পিস। প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলে ১৮৭৩ সালের ২৪ ফ্রেরুয়ারি। এরপর কলকাতার রাস্তায় বৈদ্যুতিন ট্রাম চলে ১৯০২ সালে ২৭ মার্চ থেকে। এই দীর্ঘ ইতিহাসের গৌরব মুছে এবার কলকাতা থেকে চিরদিনের জন্য উঠে যেতে বসেছে ট্রাম।
ট্রাম বন্ধের পিছনে রাজ্য সরকারের যা যুক্তি দিয়েছে তা এরকম, ধীর গতির ট্রামের জন্য যানজট তৈরি হচ্ছে ব্যাস্ত কলকাতার রাস্তায়। ট্রাম লাইনের জন্য শহরে দুর্ঘটনা বাড়ছে। ট্রামের লাইনে ফেঁসে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে গাড়ির চাকা। ট্রাম চালাতে বছরে ৫ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। যদিও সরকারে যুক্তি মানতে নারাজ কলকাতা ট্রাম ইউজার অ্যাসোশিয়নের সভাপতি দেবাশীষ
ভট্টাচার্য্য। তাঁর সাফ কথা, ট্রাম ডিপোগুলো বেচে দিতে চাইছে রাজ্য সরকার।
ট্রাম সংক্রান্ত মামলায় একটি অ্যাডভাইসারি কমিটি গঠন করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবঞ্জানম ও বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে অ্যাডভাইসারি কমিটির রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত পিচ ঢেলে শহরের কোন ট্রাম লাইন বন্ধ করা যাবে না। বর্তমানে কলকাতায় মাত্র দুটো রুটে চলাচল করে ট্রাম। ২৫ নম্বর রুট (গড়িয়াহাট-ধর্মতলা) ও ৫ নম্বর রুট (শ্যা মবাজার-ধর্মতলা)। কলকাতায় মোট সাতটি ট্রাম ডিপো রয়েছে। যা হল- বেলগাছিয়া, রাজা বাজার, পার্ক সার্কাস, গড়িয়াহাট, টালিগঞ্জ, কালিঘাট, খিদিরপুর। এছাড়া ট্রামের ওয়াকশপ রয়েছে নোনাপুকুরে।
ভিডিও দেখুন-