
সুমিত চৌধুরী: মঙ্গলবার টিভির পর্দা জুড়ে একের পরা ঘটনার ঘনঘটা ছিল। মুখ্যমন্ত্রী দিল্লির বিরুদ্ধে আরো একবার জেহাদ ঘোষণা করেছেন উত্তরবঙ্গে। তার লাইভ সম্প্রচার ছিল। শুভেন্দু অধিকারী উত্তর কন্যার গেটে ব্যাপক হাঙ্গামা পাকিয়েছেন। জমজমাট নাটক ছিল। রাজ্যসভা এবং লোকসভায় তাফাল হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর মধ্যে একটা ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ খবর অনেকেরই চোখ এড়িয়ে গেছে।
মঙ্গলবার একটি অনুষ্ঠান শেষে মহানাগরিক ববিকে, দলে নবীন-প্রবীণ বিতর্ক প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে ববি সংক্ষেপে উত্তর দিয়েছেন, দ্যট চ্যাপ্টার ইজ ওভার। আমাদের দলের একজনই নেত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে দল চলবে। কথাগুলো প্রচন্ড তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ কদিন আগেই বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, কংগ্রেসের হারের কারণ, অন্তত অন্যতম কারণ ,নবীনদের নেতৃত্বে না আনা। এইটুকু বলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেমে থাকেন নি। এইটুকু বলে অভিষেক থেমে থাকেননি। তিনি বলেছেন এই কথা কংগ্রেস সম্পর্কে যেমন সত্যিই সিপিএম সম্পর্কে সত্যি তৃণমূল কংগ্রেস সম্পর্কেও সত্যি।
তারপরও ববি যখন বলছেন দ্যট চ্যাপ্টার ইজ ওভার, তখন বুঝতে হবে, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে কিছুদিন আগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীসভা হয়েছিল। ইদানিং তৃণমূল কংগ্রেসের যেকোনো সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি অনিবার্যভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর ছবি লাগানো টা নিয়মিত চল। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার ছিল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের ওই সভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর কোন ছবি ছিল না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকতে পারেননি চিকিৎসার কারণে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা খেয়াল করেছিলেন অভিষেক শিবিরের বিশ্বস্ত সেনাপতি তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষ কর্মীসভার ৮ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট হাজিরা দিয়ে বেরিয়ে যান। এমনকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা শোনার প্রয়োজনও কুনাল ঘোষ সেদিন অনুভব করেননি।
সেই সভাতেই মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেন, নবীনদের পাশাপাশি প্রবীনদেরও দলে গুরুত্ব এবং সম্মান দিয়ে রাখতে হবে। তখনই গুঞ্জন উঠে গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বার্তা অভিষেক শিবিরের জন্য কিনা!
এই বিতর্কের আবহে বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে অভিষেকের ওই মন্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
আমাদের ভুলে যাওয়ার কোন কারণ নেই. অভিষেক শিবিরের নেতারা প্রত্যেকেই নেতৃত্বের প্রশ্নের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক নিঃশ্বাসে অভিষেকের নাম উচ্চারণ করছেন। কিন্তু সৌগত রায় থেকে ফিরহাদ হাকিম থেকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, এই লাইন আপে নেই।
রাজনৈতিক শিবিরে আরও একটা গুঞ্জন স্পষ্ট, অভিষেকের অপছন্দের তালিকায় থাকা সত্ত্বেও এই নেতাদের সকলকে এখনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাম্প করতে নারাজ। রাজনীতির কারবারীরা এটাও খেয়াল রেখেছেন, শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যেই করছেন নারদা স্ট্রিং অপারেশনটা পুরোটাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেডি সিংকে সঙ্গে নিয়ে সংগঠিত করেছিল। নারোদার হুল যাদেরকে কামড়ে ছিল তাদের মধ্যে প্রায় ৯০% অভিষেক বিরোধী নেতা হিসেবে পরিচিত।
সেখানে নেতাজী ইন্ডোরে কর্মীসভা ডেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বার্তা দিয়েছেন তাতে তৃণমূলের মধ্যে অভিষেক বিরোধী শিবির উদ্দীপিত। ববি যদি তাঁর এই বক্তব্যে, “আমাদের দলে একমাত্র নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় “নির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হিট করবার জন্য বলে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে দ্যট চ্যাপ্টার ইজ নট ওভার। ইট ইজ ভেরি মাচ ওপেন!