
নিজস্ব প্রতিনিধি,ওঙ্কার বাংলাঃ ইতিহাসে পিএইচডি করার জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভিউ দিলেন জেল বন্দী মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। বুধবার সকালে তাঁকে হুগলি সংশোধনাগার থেকে পুলিশি প্রহরায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ইন্টারভিউের জন্য। এর আগে অর্ণব জেলে বসেই ইগনু থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। জেলে বসেই সেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সে।
চুঁচুড়া সংশোধনাগার সূত্রে খবর, অর্ণবের পিএইচডি করার ইচ্ছার কথা সংশোধনাগার কতৃপক্ষকে জানায়। সেই মত যোগাযোগ করা হয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ জানায় আইন মেনে তিনি পিএইচডি করতেই পারবেন জেল বন্দী মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম।
প্রসঙ্গত, অর্ণবের বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক। সে ছোট থেকেই মেধাবী। ১৯৯৮ সাল নাগাদ খড়্গপুর আইআইটিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষে পড়াকালীন হঠাৎই ক্যাম্পাস ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান অর্ণব। যোগ দেন মাওবাদী সংগঠনে।
পুরুলিয়া-ঝাড়খণ্ডের পাহাড়ে-জঙ্গলে ছিল তাঁর গোপন আস্থানা। সংগঠনে কমরেড বিক্রম নামে পরিচিত ছিল তার। এছাড়া মাস্টারদা, ভানু, সূর্য নামেও ডাকা হতো অর্ণবকে। পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত মাওবাদী নেতা পলিটব্যুরো নেতা কিষেনজির অত্যন্ত স্নেহের পাত্র ছিলেন অর্ণব। লালগড় আন্দোলনের সময় অযোধ্যা-বাঘমুন্ডির পাহাড়-জঙ্গলে অর্ণবের নেতৃত্বে গেরিলা বাহিনী নাজেহাল করে দিয়েছিল যৌথবাহিনীকে। শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলা থেকে শুরু করে একাধিক মাওবাদী হামলায় অভিযুক্ত অর্ণব। ২০১২ সালে আসানসোল থেকে ধরা পড়েন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। জেলবন্দি হওয়ার পর থেকেই অসম্পূর্ণ থাকা উচ্চশিক্ষায় মন দেন তিনি। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সাজা ঘোষণার পর প্রথমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেল তারপর গত ১৭ মার্চ থেকে হুগলি জেলা সংশোধনাগারে বন্দি রয়েছেন অর্ণব।
উল্লেখ্য, আদালতে পিএইচডি করার সুযোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন অর্ণব। বিচারক সেটা তাঁর আদেশে নথিভুক্তও করে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে তা বিবেচনা করতে বলেছিলেন। কিন্তু হুগলী জেল কতৃপক্ষ তার আবেদনকে বিশেষ সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ। উচ্চ শিক্ষার জন্য অর্ণব অনশন শুরু করবেন ঘোষণা করেন। এর পর মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর অর্ণবের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে হুগলি জেল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানায়। এবার জেল বন্দী মাওবাদী নেতা অর্ণব দামের উচ্চ শিক্ষার ইচ্ছা পূরণ হতে চলেছে!