
স্পোর্টস ডেস্ক :টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে একাধিকবার পিছিয়ে থাকার পরও শেষ পর্যন্ত পাঞ্জাব এফসিকে হারিয়ে ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিল মোহন বাগান সুপার জায়ান্ট। টুর্নামেন্টের তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের নিষ্পত্তি হয় সাডেন ডেথে।
শুক্রবার বিকেলে জামশেদপুরের জেআরডি টাটা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে নির্ধারিত সময়ে ম্যাচের ফল ৩-৩ থাকার পর, পেনাল্টিতে পাঞ্জাব এফসিকে ৬-৫ ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছয় গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। তাদের স্কটিশ ডিফেন্ডার থমাস অ্যালড্রেড শেষ পেনাল্টি শটটি জালে জড়িয়ে দেওয়ার পরেই এই কষ্টার্জিত সাফল্য পায় কলকাতার দল।
সেমিফাইনালে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের বিরুদ্ধে খেলবে বেঙ্গালুরু এফসি। শুক্রবার কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে শেষ মুহূর্তে পেরেইরা ডিয়াজের গোলে কেরালা ব্লাস্টার্সকে ১-০-য় হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয়।
এ দিন প্রথমার্ধের শুরুতেই লুকা মাজসেনের পেনাল্টি গোলে এগিয়ে যায় পাঞ্জাব এফসি। কিন্তু সবুজ-মেরুন বাহিনীর সুহেল ভাট এবং মনবীর সিং-এর গোলে তারা এগিয়ে যায়। এর পর ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার ফিলিপ ম্রজ্লাক এবং আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ড নরবের্তো ভিদালের গোলে আবারও এগিয়ে যায় পাঞ্জাব, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড জেসন কামিংসের গোলে ৭৯তম মিনিটে সমতা ফিরে আসে, যা ম্যাচটিকে টাইব্রেকারে নিয়ে যায়। অতিরিক্ত সময়ের কোনও ব্যবস্থা ছিল না।
যদিও কামিংস দলের প্রথম স্পট-কিকটি মিস করেন। পাঞ্জাবের ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার নোভোসেলেক দলের পাঁচ নম্বর কিকটি থেকে গোল করতে পারেননি। এই গোলটি হলে পাঞ্জাবই জয়ের হাসি হাসত। গ্রেগ স্টুয়ার্ট মোহনবাগানকে সমতায় ফেরান।
সাডেন-ডেথে মেলরয় অ্যাসিসি পাঞ্জাবের হয়ে গোল করেন এবং শুভাশিস বোস, অ্যালড্রেড কলকাতারৃ দলকে গোল এনে দেন। কিন্তু ধনচন্দ্র মিতেই-এর শট আটকে মোহনবাগানের জয় নিশ্চিত করে ফেলেন বিশাল কয়েথ। এটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় সেভ। মোহনবাগানের অন্যান্য স্কোরারদের মধ্যে ছিলেন মনবীর, লিস্টন কোলাকো এবং দিমিত্রিয়স পেট্রাটস। বিনীত রাই, ভিদাল, বাকেঙ্গা এবং ম্রজ্লাক গোল করেন পাঞ্জাবের পক্ষে। নির্ধারিত সময় ও পেনাল্টি মিলিয়ে ১৭টি গোল হয় এ দিন, যা এই স্তরের ফুটবলে বড় একটা দেখা যায় না। ফলে ফুটবলপ্রেমীরা এ দিন সারা ম্যাচে ভরপুর মনোরঞ্জন পান।
মোহনবাগানের কোচ হোসে মোলিনা আগের ম্যাচের প্রথম এগারোয় চারটি পরিবর্তন করে দল নামান। পাঞ্জাবের নতুন গ্রিক প্রধান কোচ পানাগিওতিস দিলেম্পেরিস গত ম্যাচের দলে দু’টি পরিবর্তন করেন। শুরু থেকেই আক্রমণে প্রভাব বিস্তার করে মোহনবাগান, কিন্তু প্রথমে গোল করে লিড নেয় পাঞ্জাব।
লুকা এবং বিনীতের মধ্যে চমৎকার ওয়ান-টু পাসের পর প্রতিপক্ষের পেনাল্টি এরিয়ায় প্রবেশ করেন বিনীত এবং শট নেওয়ার সময় স্প্যানিশ সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার আলবার্তো মার্টিনেজ তাঁকে ফাউল করেন। ফলে ১৭ মিনিটের মাথায় পোনাল্টি পায় পাঞ্জাব। পেনাল্টি শট থেকে কোনো ভুল করেননি লুকা মাজেন (১-০)।
প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে সমতা আনার গোলটি আসে সুহেল ভটের পা থেকে। বাঁদিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা কোলাসো গ্রেগ স্টুয়ার্টকে পাস দেন। তাঁর গোলমুখী শটটি সুহেলের গায়ে লেগে গোলরক্ষক রবি কুমারকে ধোঁকা দিয়ে গোলে ঢুকে যায় (১-১)।
বিরতির সময় দু’টি পরিবর্তন করেন মোলিনা, জেসন কামিংস ও মনবীর সিংকে নামান দীপেন্দু বিশ্বাস এবং গোলদাতা সুহেলের পরিবর্তে। পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামার পরই গোল করেন মনবীর। ৪৮ মিনিটের মাথায় সহাল তাঁকে ডান দিক থেকে পাস দেন। পাঞ্জাবের গোলরক্ষক রবিকে পরাস্ত করে ডানদিকের নীচের কোণ দিয়ে বল গোলে পাঠান মনবীর (১-২)।
এই গোলটি পাঞ্জাবের কোচ পানাগিওতিসকে দ্রুত পরিবর্তন করতে বাধ্য করে এবং তিনি নবাগত নরওয়ের ফরোয়ার্ড বাকেঙ্গাকে লুকা মাজেনের পরিবর্তে নামান। কয়েক মিনিটের মধ্যেই, ৬৩ মিনিটের মাথায় পাঞ্জাব সমতায় ফিরে আসে, যখন ডান দিক থেকে বিনীত রাইয়ের একটি ক্রস পৌঁছয় ম্রজ্লাকের কাছে। ম্রজ্লাক একটি তীব্র বাঁ-পায়ের শটে সোজা বল জালে জড়িয়ে দেন (২-২)।
পাঞ্জাব ফের এগিয়ে যায় ভিদালের অসাধারণ গোলে। ৭১ মিনিটে ম্রজ্লাক মাঝমাঠে বলের দখল নেন এবং এগিয়ে যান। তিনিই ভিদালকে গোলের পাস দেন এবং আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ড দুর্দান্ত মাপা ও কোণাকুনি শটে গোলটি করেন (৩-২)।
সমতা আনার জন্য মরিয়া মোহনবাগান সফল হয় ৭৯ মিনিটের মাথায়, যখন লিস্টনের ক্রস মনবীরের মাথায় লেগে গোলের সামনে কামিংসের কাছে পৌঁছে যায় এবং বাঁ পায়ের ভলি মারেন, যা নেটের উপরের অংশে আঘাত করে (৩-৩)। এই গোলের ফলে ম্যাচ টাইব্রেকারে চলে যায় এবং শেষে জয়ের হাসি হাসেন সবুজ-মেরুন তারকারাই।