
স্পোর্টস ডেস্ক :ঘরের মাঠে প্রায় ষাট হাজার সমর্থকের সামনে মুম্বই সিটি এফসি-কে হারিয়ে প্রথমবার আইএসএল শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হলেও আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেতে রাজি নয় মোহনবাগান শিবির। শিল্ডের পর তাদের লক্ষ্য এ বার নক আউট চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখা। সোমবার লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে আইএসএলের ইতিহাসে প্রথমবার মুম্বই সিটি এফসি-কে হারানোর পর মোহনবাগানের অধিনায়ক শুভাশিস বোস জানিয়ে দেন, এই সাফল্য উদযাপনের পরই ফের কাপ জয়ের প্রস্তুতি শুরু করবেন তাঁরা।
সোমবার রাতে ২-১ জয়ের পর সাংবাদিকদের সবুজ-মেরুন অধিনায়ক শুভাশিস বলেন, “গত আট-ন’মাস ধরে আমরা এই খেতাব পাওয়ার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছি। সে জন্যই এই সাফল্য পেলাম। এখন আমাদের উপভোগ করার, সাফল্য উদযাপন করার সময়। নক আউটে জেতার জন্যও আমরা উজ্জীবিত। পরের তিনটে ম্যাচে জিতে যদি আমরা কাপ জিততে পারি, তা হলে উজ্জীবিত না হওয়ার কোনও কারণ নেই। এই আনন্দ উদযাপন করে তরতাজা হয়ে আমরা আবার মাঠে ফিরব এবং ফাইনাল খেলব, যেখানে আমরা নিজেদের উজাড় করে দেব। আরও একটা খেতাব জিততে চাই আমরা”।
এ দিন ডাগ আউটে হেড কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস থাকলেও সাংবাদিকদের সামনে তিনি পাঠান সহকারী মানুয়েল কাসকালানাকে। তিনি বলেন, “গত ১৫ জানুয়ারি আন্তোনিও হাবাস ও আমি দলে যোগ দিই যখন, তখন আমরা এফসি গোয়ার চেয়ে ৯ পয়েন্ট পিছনে ছিলাম। তখন আমরা চার নম্বরে ছিলাম। গোয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের (১-০-য় জয়) পর হেড কোচ দলের ছেলেদের বলেন, তোমরা যদি আমার ওপর ভরসা রাখতে পারো, যদি আমার কথা অনুযায়ী খেলতে পারো, তা হলে আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারি। দেখুন শেষ পর্যন্ত সেটাই হল”।
গত মাসের শেষ দিন, এই যুবভারতীতেই চেন্নাইন এফসি-র কাছে হেরে যাওয়া মোহনবাগান এসজি ও সোমবারের সবুজ-মেরুন বাহিনীর মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক ছিল। এ দিন রীতিমতো দাপটের সঙ্গে ঘরের মাঠে লিগখেতাব জেতে তারা। চাপ সামলানোর অভ্যাস হয়ে গিয়েছে বলে জানান বলে জানান শুভাশিস। বলেন, “ডুরান্ড কাপের শেষ দিকে যেমন আমাদের পরিস্থিতি ছিল যে, নক আউটের প্রতি ম্যাচ জিততে হবে, আইএসএলে চেন্নাইনের বিরুদ্ধে হারার পরও সেই একই পরিস্থিতিতে পড়ি আমরা। প্রতি ম্যাচকেই নক আউটের মতো নিয়েছিলাম। সে রকম মানসিকতা নিয়েই প্রতি ম্যাচে আমরা মাঠে নামি। সে জন্যই শিল্ড জিততে পেরেছি। আজ আমরা পুরো দল একসঙ্গে খেলেছি, একসঙ্গে ডিফেন্স করেছি, একসঙ্গে আক্রমণেও উঠেছি। সেই জন্যই এই ফল পেলাম”।
মরশুমের মাঝখানে টানা তিনটি ম্যাচে হেরে যে বিপর্যস্ত অবস্থা হয়েছিল দলের, সেই অবস্থা থেকে হাবাসই টেনে তোলে সবুজ-মেরুন বাহিনীকে। হাবাস ও জনি কাউকোর প্রত্যাবর্তন তাদের শিবিরের চেহারাটাই পাল্টে দেয়। ভাল-খারাপ সব সময়ে দলের সঙ্গে থাকা শুভাশিস বলেন, “মরশুমে চড়াই-উতরাই থাকেই। আমাদের দলে অনেক সিনিয়র খেলোয়াড় রয়েছে, দায়িত্ব নেওয়ার মতো অনেকেই আছে। দৃঢ়চরিত্রের খেলোয়াড়ও রয়েছে আমাদের দলে। আমার বিশ্বাস ছিল সবাই মিলে একসঙ্গে ঘুরে দাঁড়াবে। আমি সব সময় দলকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছি”।
চলতি ক্লাব মরশুমে সব টুর্নামেন্টই জিতল বাংলার ক্লাবগুলি। ডুরান্ড কাপে মোহনবাগান এসজি, সুপার কাপে ইস্টবেঙ্গল এফসি, আই লিগে মহমেডান এসসি-র পর এ বার লিগশিল্ড জিতল সেই মোহনবাগান। আইএসএলের নক আউট খেতাবও তারা জিততে পারলে বাংলার ফুটবলে এক নতুন সুবর্ণ যুগের ইতিহাস তৈরি হবে।
এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে শুভাশিস বলেন, “এ মরশুমে আমরা ডুরান্ড কাপ জিতেছি। এ বার লিগ শিল্ড জিতলাম। বাংলাতে এ বছর সব কটা ট্রফিই এসেছে। তাই বলব, বাংলার ফুটবলে এটা সোনার সময় চলছে। আশা করি এখান থেকে বাংলার ফুটবলে আরও উন্নতি হবে। সে জন্য আমি খুবই খুশি”।