
সুমিত চৌধুরী: প্রত্যাশিতভাবেই এনডিএ জোটের প্রধান হিসেবে তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু এই প্রথম লৌহ মানবের বদলে একজন নড়বড়ে মোদিকে আমরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখব।
প্রধানত দুই জোট শরিক জনতা দল ইউনাইটেডের নীতিশ কুমার এবং তেলেগু দেশমের উপর নির্ভর করে সরকার চালাতে হবে নরেন্দ্র মোদিকে। এই দুই জোট শরিকের যে কোন একজন বেঁকে বসলে সংখ্যা গরিষ্ঠতা থাকবে না মোদি সরকারের। কারণ ২৭২ থেকে বহুদূরে আটকে গিয়েছে নরেন্দ্র মোদির রথ।
২০১৪ এবং ২০১৯ এ নির অঙ্কুশ গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বিগত সরকারের মোদিরদলের একার আসন ছিল ৩০৩। এবার মোদিকে সর্বময় মুখ করে নির্বাচন লড়তে নেমেছিল বিজেপি। মূল ইস্যু রাখা হয়েছিল অযোধ্যার রাম মন্দির। বিজেপির গ্যারান্টি নয়। বলা হয়েছিল মোদির গ্যারান্টি। রাজস্থান ছত্রিশগড় মধ্যপ্রদেশে জয়ের পর মোদির আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে পৌঁছেছিল। স্লোগান উঠেছিল ‘আপকি বার চারশো পার’।
কিন্তু শেষ অবধি কোন হিসেবে মেলেনি। ২৭২ আসনের বহুদূরে আটকে গিয়েছে মোদির বিজয় রথ। অগত্যা মোদির ভরসা এখন তেলেগুদেশম এবং নীতিশ কুমার।
মুশকিল হচ্ছে নীতিশ কুমার কখন কি করবেন কেউ জানেন না। অনেকে বলছেন বৈঠকে নিতীশ কুমার যে মোদির এত প্রশংসা করলেন এটাও খুব বিপদের লক্ষণ। তার উপরে নীতিশ কুমারের ইসু জাত গণনা জাত সমীক্ষা যা সবকিছুই বিজেপির অপছন্দের, সে সবই এখন বিহারের রাজনীতির বাধ্যবাধকতার কারণে বিজেপিকে ঢোঁক গিলেমেনে নিতে হবে। তারপরও নীতিশ কুমার তার জাদুকা ঝাপ্পি থেকে কি কি কৌশল বার করবেন কেউ জানে না।
অন্যদিকে চন্দ্রবাবু নাইডু ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছেন অমিত শাহ কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার না পসন্দ। তার থেকেও চাপের ব্যাপার চন্দ্রবাবু নাইডুর মুসলিম ভোট ব্যাংক ধরে রাখার মরিয়া চেষ্টা। যে কারণে চন্দ্রবাবুর পক্ষে কেন্দ্রের মন্ত্রিসভায় থেকে ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা মুসলমানদের সংরক্ষণ বাতিল করার মত মারমুখী ঘোষণা কে সমর্থন করা মুশকিল হবে। তেলেগু দেশেমের রাজ্যস্তরের নেতারা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশে যে এনডিএ সরকার এসেছে তা মুসলমান সংরক্ষণ চালু রাখবে। সবমিলিয়ে পরস্পর বিরোধী নীতিমালার এক দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে প্রথম থেকেই চলতে হবে নরেন্দ্র মোদিকে।
নরেন্দ্র মোদি, যে এক নিশান একবিধানের সর্বময় কর্তৃত্বকারী কেন্দ্রীয় সত্বকে সামনে আনবার রাজনীতি তুলে এনেছিলেন, ২০২৪ শে জনা দেশ তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচনের যা ফলাফল তাতে বিভিন্ন প্রান্তে আঞ্চলিক শক্তিগুলির ভাগীদারি প্রকট। একমাত্র ব্যতিক্রমই সান্তনা ওড়িশা।
ফলে মোদির অবস্থা এখন ‘মেলাবেন তিনি মেলাবেন! ঝড়ো হাওয়া আর পোড়ো বাড়িটায় মেলাবেন তিনি মেলাবেন”! এবার ইন্ডিয়া বৈঠকে জয় শ্রীরাম না বলে নরেন্দ্র মোদী বলেছেন জয় জগন্নাথ। রসঘন রাজনৈতিক মহল্লায় সরস মন্তব্য, নরেন্দ্র মোদি জেনে গেছেন, জগাখিচুড়ির রেসিপি তার একমাত্র ভরসা