
ওয়েব ডেস্ক: প্রয়াগরাজে ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু মহাকুম্ভ। এবছর প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলার আয়োজনের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। ১২ বছর অন্তর হয় মহাকুম্ভ। আর ৬ বছরে একবার হয় অর্ধকুম্ভ। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে মহাকুম্ভ।
কুম্ভমেলার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, একনজরে দেখে নেওয়া যাক। সূত্রের খবর, মহাকুম্ভ মেলায় প্রয়াগরাজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫৭টি পুলিশ স্টেশন, ১৩ টি অস্থায়ী স্টেশন থাকছে। ২৩ টি চেক পয়েন্ট থাকছে। মোতায়েন থাকবে ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স। এছাড়া সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী। এছাড়াও থাকছে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি।
কুম্ভমেলার প্রচলন কবে থেকে? এনিয়ে কী বলছে শাস্ত্র? যেমন, কুম্ভমেলার শুরু হওয়ার সঙ্গে আদি শঙ্করাচার্যের নাম যুক্ত। শঙ্করাচার্য প্রসিদ্ধ হিন্দু ধর্মগুরু। প্রাচীন শিলালিপিতে বার্ষিক মাঘমেলার উল্লেখ আছে। ৬ বছর অথবা ১২ বছর পর বর্তমানে যেখানে কুম্ভমেলা বড় ধরনের সমাবেশ হত সেখানে।
কুম্ভ সংস্কৃত শব্দ, যার আক্ষরিক অর্থ কলস। আর মেলা শব্দের সংস্কৃত অর্থ একত্রিত হওয়া। কুম্ভমেলা মানে অমৃত কলসের চারপাশে জনসমাবেশ। ১২ বছর পর কেন হয় মহাকুম্ভ? পুরাণ কী বলছে? মহাকুম্ভ সংক্রান্ত পৌরাণিক কাহিনিতে কথিত আছে সমুদ্রমন্থনের গল্প।
পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, অমৃত পাওয়ার জন্য দেবতা ও অসুরদের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়েছিল টানা ১২ দিন। এই ১২টি দিন ১২ বছরের সমান। একারণে প্রতি ১২ বছরে একবার মহাকুম্ভের আয়োজন করা হয়। ৬ বছরে একবার হয় অর্ধকুম্ভ।
কেন প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলা হয়। কী বলছে পুরাণ? প্রয়াগরাজকে তীর্থরাজ বলা হয়। শাস্ত্র অনুযায়ী, ভগবান ব্রহ্মা এখানে প্রথম যজ্ঞ করেছিলেন, পুরাণে কথিত আছে, সমুদ্রমন্থনের কাহিনি। যে সময়ে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে অমৃতলাভের জন্য প্রচণ্ড যুদ্ধ হচ্ছিল। নারায়ণ তখন মোহিনীরূপ ধারণ করে অমৃতকলস নিয়ে সমুদ্র থেকে উঠে আসেন। অসুররা সেই অমৃত কলসের দখল নিলে বিষ্ণু মোহিনীরূপে সেই কলস ফিরিয়ে আনেন। অমৃতের জন্য অসুর ও দেবতাদের মধ্যে লড়াই তীব্র হয়। দেবরাজ ইন্দ্রের ছেলে জয়ন্তর হাতে অমৃতের কলস তুলে দেন বিষ্ণু। আর ইন্দ্রপুত্র কাকের রূপ ধরে কলসটি নিয়ে উড়ে যান। অসুররা তাঁকে পাকড়াও করতে গেলে কয়েক ফোঁটা অমৃত যে চার জায়গায় পড়ে সেই জায়গাগুলো হল প্রয়াগরাজ, উজ্জয়িনী, হরিদ্বার ও নাসিক। এজন্যে এই চার জায়গায় কুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়।
এদেশের নাগরিকরা ছাড়াও বিদেশি পর্যটকদের কাছে মহাকুম্ভ মেলার অন্যতম আকর্ষণ নাগা সন্ন্যাসীরা। নাগা কথাটি এসেছে নগ্ন থেকে। নাগাসাধু হতে ১২ বছর কঠোর সাধনার প্রয়োজন। নাগা সন্ন্যাসীরা শুধু কৌপিন ধারণ করে থাকেন। কুম্ভমেলায় স্নান করে কৌপিন বিসর্জন দিয়ে নাগা সন্ন্যাসী হিসেবে জীবন শুরুর রীতি প্রচলিত। নাগাসাধুরা বিছানা ব্যবহার করেন না। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা ১২ মাসই ওঁরা মাটিতে শুয়ে থাকেন। ২৪ ঘণ্টায় মাত্র একবার ভোজন করেন।