
ওঙ্কার ডেস্ক : মহাকুম্ভের মহাচক্রে বেসামাল যোগী। কে জানতো, মৌনী অমাবস্যার পুণ্য লগ্নে যোগীর ভবিষ্যৎ এমন গ্রহগ্রস্থ হবে ! স্বয়ং যোগীরই যা কল্পনার অতীত ছিল, সেটাই এখন জাতীয় রাজনীতিতে ঘোর জল্পনার। বিজেপির অন্দরেও। বিজেপির বাইরেও। কারুর মুখে হাসি, কারুর কপালে উদ্বেগের রেখা। আসলে যোগীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন এখন ঘরে বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই। শাহি স্নানের মর্মান্তিক ঘটনার জেরে উত্তর প্রদেশের মুখমন্ত্রী শুধু রাজ্য রাজনীতিতেই তীর বিদ্ধ হচ্ছেন না, অনেকটাই প্রশ্নের মুখে এখন তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়টিও।
প্রথম থেকেই মহাকুম্ভের নিয়ন্ত্রণ তিনি নিজের হাতেই রেখেছিলেন। কাউকেই নাক গলাতে দেননি তিনি। রাজনৈতিক মহলের মতে, আগামী সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীত্বের দৌড়ে তিনি মহাকুম্ভের তাসটি খেলতে চেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, বিশ্বসেরা এক জনসমাগমকে সামলে দিল্লির মসনদে বসার ক্ষমতাটি তিনি সহজেই প্রমাণ করতে পারবেন। বলাবাহুল্য প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড়ে অমিত শাহ্-র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তাঁর নাম ইতিমধ্যে জাতীয় রাজনীতিতে আলোচিত হতে শুরু করেছে। বিজেপির অন্দরেও অমিত ও যোগী শিবিরের কাজিয়া উঠে আসছে মাঝেমধ্যে।
এমন অবস্থায় নিজের ক্ষমতা দর্শনের এমন একটা সুযোগ তিনি হাতিছাড়া করতে চাননি বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ, মহাকুম্ভের মত সর্ববৃহৎ সনাতনী সমাবেশে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীকে সামলে তিনি প্রভাবিত করতে পারতেন হিন্দু ভোট এবং সঙ্ঘ শিবির। তাই তিনি এই বিশাল সমাগম সামলাতে যোগী তৈরি করেছিলেন বিশেষ টিম-‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট’। যা এখন প্রকৃতপক্ষে মুখ থুবড়ে পড়েছে। মৌনী অমাবস্যার শাহি স্নানে পদপিষ্ট হয়ে সরকারি হিসেবে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের, যদিও বেসরকারি মতে তা অসংখ্য। দুর্ঘটনা শুধু এখানেই থেমে থাকেনি, একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে ছড়িয়েছে ব্যাপক আতঙ্ক যা ছিল খুবই উদ্বেগের।
ঘটনার পর নরেন্দ্র মোদী যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাতে যোগীর প্রতি যে পূর্ণ আস্থা নেই এটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। নিন্দা এবং বিরোধীতায় মুখর হয়েছে বিরোধীরা। সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশের যাদব জানিয়েছেন, ‘‘বিশ্বমানের ব্যবস্থাপনা বলে প্রচার চালানো হয়েছিল। কোথায় সে সব ? এবার সকলের সামনে প্রকৃত সত্য চলে এসেছে। যাঁরা মিথ্যা দাবি করেছিলেন, মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছিলেন, তাঁদের সকলকে এই মৃত্যুর দায় এবার নিতেই হবে। তাঁদের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত!’’ অপরদিকে একাধিক প্রশ্নের তির ছুঁড়ে দিয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও। তাঁর কথায়, “সাধারণ মানুষদের তুলনায় ভিআইপিদের গুরুত্ব বেশি দেওয়া হচ্ছে এটাই এই ঘটনার মূল কারণ”।
এই বিরল কুম্ভমেলায় তাই পুণ্যার্থীদের যতটা না হতাশা, হয়তো আড়ালে তারচেয়ে ঢের বেশি কপাল ঠুকছেন আদিত্যনাথ যোগী। আগামী ভোটে নিশ্চিত ভাবে এটাই তাঁর বিরুদ্ধেও মোক্ষম অস্ত্র হয়ে উঠছে বিজেপির ঘরে এবং বিজেপির বাইরেও।