
ওঙ্কার ডেস্ক: পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পর তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই খুলছে বিস্ফোরক তথ্যের ঝুলি। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র দাবি, বৈসরনের পাশাপাশি আরও তিনটি পর্যটন কেন্দ্রে হামলা চালানোর ছক কষেছিল জঙ্গিরা। সেই পরিকল্পনায় মদত দিয়েছিলেন এলাকার অন্তত চার জন ‘ওভার গ্রাউন্ড ওয়ার্কার’— অর্থাৎ স্থানীয় সহযোগী।
সূত্রের খবর, ১৫ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে প্রবেশ করে বৈসরনে রেকি শুরু করে জঙ্গিরা। তবে তাদের নজরে ছিল আরও তিন জায়গা— আরু উপত্যকা, লিডার অ্যামিউজ়মেন্ট পার্ক ও বেতাব উপত্যকা। নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে শেষপর্যন্ত সেগুলি বাদ দিয়েই বৈসরনকে হামলার জন্য বেছে নেওয়া হয়।
ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জন স্থানীয়কে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। ধৃতদের মধ্যে কয়েক জনের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের আশ্রয় ও তথ্য জোগানোর অভিযোগ উঠেছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এই চার ‘ওভার গ্রাউন্ড ওয়ার্কার’ বৈসরনে হামলার আগে রেকির সময় পাকিস্তানি জঙ্গিদের সঙ্গেও ছিলেন। তদন্তে আরও উঠে এসেছে, ওই উপত্যকায় ব্যবহৃত হয়েছে তিনটি স্যাটেলাইট ফোন। তার মধ্যে দু’টির সিগন্যাল ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছে এনআইএ।
তদন্তকারী সংস্থা জানাচ্ছে, সন্দেহভাজন তালিকায় রয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ। তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রয়েছে ১৮৬ জন। চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। হামলার পর ঘটনাস্থলের প্রতি ইঞ্চি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই ৪৫ জন আধিকারিকের বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। এই দলে রয়েছেন আইজি, ডিআইজি, এসপি পদমর্যাদার আধিকারিকরা। দলটি হামলাস্থলের একটি ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করছে। পাশাপাশি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান রেকর্ড করা এবং ফরেন্সিক তদন্তে জোর দেওয়া হয়েছে।
তদন্তে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র উঠে এসেছে— বৈসরনের জিপলাইন অপারেটর মুজ়ামিল আহমেদ কুমহার। এক পর্যটকের মোবাইলে ধারণ করা ভিডিয়োয় তাঁকে দেখা গিয়েছিল হামলার সময় ধর্মীয় ধ্বনি দিতে। এনআইএ তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। যদিও তাঁর পরিবারের দাবি, সেটি ছিল নিছক আতঙ্কের প্রতিক্রিয়া। গোয়েন্দাদের একাংশও মনে করছেন, ভয় পেয়ে ধর্মীয় উচ্চারণ করে থাকতে পারেন মুজ়ামিল।
তবে তদন্তকারীরা বলছেন, এই ঘটনায় কোনও দিককেই হালকা ভাবে নেওয়া হবে না। স্থানীয় সহযোগীদের ভূমিকা, হামলার পরিকল্পনার বিস্তার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা— সব কিছুকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।