
ওঙ্কার ডেস্ক: নৃশংসভাবে সহকর্মীকে খুনের অভিযোগে ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়াকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে ইয়েমেনের আদালত। সেদেশে বর্তমানে জেলবন্দি রয়েছেন তিনি। তাঁর মুক্তির জন্য ভারত সরকারের তরফে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মৃত্যুদণ্ড যাতে কার্যকর করা না হয় তার জন্য নিমিশার পরিবারের তরফেও সবরকমের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে নিমিশা প্রিয়াকে যদি নিহতের পরিবার ক্ষমা করে দেন ইয়েমেনের আইন অনুযায়ী তবেই তিনি প্রাণভিক্ষা পাবেন।
নিহতের পরিবারকে ইতিমধ্যে দুই দফায় ব্লাড মানি দেওয়া হয়েছে প্রিয়ার পরিবারের তরফে। দুই পক্ষে চলছে আলোচনাও। নিমিশা প্রিয়ার মায়ের তরফ থেকে ‘পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি’ দেওয়া হয়েছে স্যামুয়েল জেরোম নামের ইয়েমেনের এক সামাজিক কর্তাকে। তিনি জানান, নিহতের পরিবার যদি বলে যে তাদের সম্মতি নেই এবং তারা ক্ষমা করে দিতে চায়, মৃত্যুদণ্ড তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে যাবে।
ইয়েমেনের আইন অনুযায়ী নিমিশা প্রিয়ার পরিবার সরাসরি নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে না। দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনার জন্য মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করতে হয়। ভারতের আদালতে নিমিশা প্রিয়ার পরিবারের উকিল ছিলেন সুভাষ চন্দ্রন। তিনি জানান, ক্রাউড ফান্ডিং করে ইতিমধ্যে নিহতের পরিবারকে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার দিয়েছেন প্রিয়ার পরিবার।
২০১৭ সালে ইয়েমেনি নাগরিক তালাল আবদো মাহদিকে হত্যা করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন নিমিশা প্রিয়া। এক বছর পরে, ইয়েমেনের একটি আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এরপর থেকে মেয়ের মুক্তির জন্য সবরকমভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে তাঁর পরিবার। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরোধিতা করে প্রিয়ার পরিবার ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট তাদের আবেদন নাকচ করে দেয়। সে দেশের প্রেসিডেন্টও প্রিয়ার প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করে দিয়েছে। তবে নিহত ইয়েমেনের নাগরিকের পরিবার ও স্থানীয় উপজাতি নেতা যদি প্রিয়াকে ক্ষমা করে দেন তবে মৃত্যুদণ্ড থেকে রক্ষা পাবেন তিনি।
উল্লেখ্য কেরলের পালাক্কড় জেলার বাসিন্দা নিমিশা প্রিয়া। ২০০৮ সাল থেকে ইয়েমেনের এক হাসপাতালে কাজ করতেন তিনি। ইয়েমেনে স্বামী এবং মেয়েকে নিয়ে থাকতেন তিনি। ইয়েমেনের নাগরিক মাহদির সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। মাহদির সঙ্গে যৌথভাবে সেদেশে একটি ক্লিনিক খোলেন তিনি। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে দুই অংশীদারের মধ্যে বিরোধ তৈরী হয়। অভিযোগ, মাহদি প্রিয়ার পাসপোর্ট কেড়ে নেন এক সময়। এরপর নিজের পাসপোর্ট ফেরত পাবার জন্য বহুবার মাহদিকে বললেও তিনি তা ফেরত দেননি। শেষমেষ ইয়েমেনের পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাই পাসপোর্ট ফিরে পাবার জন্য মাহদিকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছিলেন প্রিয়া। তার ওভারডোজের ফলে মৃত্যু হয় তাঁর। এরপর প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে একজনের সাহায্যে মাহদির দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে জলের ট্যাঙ্কে ফেলে দেন তিনি। পরে ইয়েমেন থেকে পালানোর সময় ধরা পড়ে যান প্রিয়া।