
ওঙ্কার ডেস্ক: সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ, একটি ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন যে দেশটি তিন দশক ধরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করে আসছে। আসিফ এটিকে “ভুল” বলেও বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে পাকিস্তানকে তার কর্মকাণ্ডের জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছে। পহেলগাঁও কাণ্ডের পর পাক মন্ত্রীর এই স্বীকারোক্তি কার্যত শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলা এবং তার পরবর্তী সময়ে ৭ মে ভোরে অপারেশন সিঁদুর অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি জায়গায় জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছে ভারত। যার মধ্যে রয়েছে বাহাওয়ালপুর এবং মুরিদকেতে থাকা একাধিক জঙ্গি ডেরা। ভারতের প্রত্যাঘাতে ধ্বংস হয়েছে লস্কর-ই-তৈবা এবং জৈশ-ই-মহম্মদের মতো গোষ্ঠীগুলির ঘাঁটি।
পাকিস্তানকে বারবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। জম্মুকাশ্মীর-সহ ভারতে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলা পাকিস্তান বা পাক-অধিকৃত কাশ্মীর থেকে অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে সংঘটিত করেছে। গত দুই দশক ধরে (২০০৫-২০২৫), ভারত অসংখ্য সন্ত্রাসী হামলার সাক্ষী থেকেছে, যার বেশিরভাগই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মুকাশ্মীরে ঘটেছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে সামরিক ও পুলিশ প্রতিষ্ঠানের উপর ফিদায়েইন হামলা থেকে শুরু করে তীর্থযাত্রী ও পর্যটক-সহ বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলার ঘটনা।
২০০৮ সালে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট এবং পরিচালিত লস্কর-ই-তৈবার ১০ জন সন্ত্রাসী মুম্বইতে নৃশংস হামলা চালিয়েছিল। চার দিন ধরে চলা এই সংঘর্ষে ১৮ জন পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং ২৬ জন বিদেশী নাগরিক-সহ ১৬৬ জন নিহত এবং ৩০৮ জন আহত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের ২৬ থেকে ২৯ নভেম্বর মুম্বইয়ে ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস, লিওপোল্ড ক্যাফে, তাজ হোটেল, ওবেরয়-ট্রাইডেন্ট হোটেল এবং নরিমান হাউস-সহ ১৩টি জায়গায় নির্বিচারে গুলি চালানো, গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য হামলার মধ্যে রয়েছে ২০০৬ সালের কুলহাদ ডোডা গণহত্যা (১৯ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু) এবং শ্রীনগর ও বারামুল্লায় একাধিক আইইডি হামলা, যার ফলে বেসামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। লস্কর-ই-তৈবা এবং হিজবুল মুজাহিদিন এর মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি এই সমস্ত হামলার পিছনে ছিল। যাদের গোপন আস্তানা এবং প্রশিক্ষণ শিবির রয়েছে পাকিস্তানে।
২০১৪ সালের আরনিয়া ও উরি হামলা এবং ২০১৫ সালের রাজবাগ থানায় হামলায় পাক-অনুপ্রবেশকারীরা জড়িত ছিল। ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। যেখানে পাকিস্তানে অবস্থিত জইশ-ই-মহম্মদের আইইডি আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ সদস্য নিহত হন।
২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে হামলায় বদল আনে জঙ্গিরা। রাজৌরি-পুঞ্চ, রিয়াসি, পুলওয়ামা এবং বারামুল্লায় তীর্থযাত্রী, বেসামরিক নাগরিক এবং সেনা কনভয়কে লক্ষ্য করে হামলা সংঘটিত করে। বিশেষ করে ডাংরি (২০২৩), রিয়াসি (২০২৪) এবং পহেলগাঁও (২০২৫)।