
চির শান্তির দেশে পাড়ি দিলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি তথা সম্মানীয় ও এবং অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভারতীয় ব্যক্তিত্ব শ্রী রতন টাটা। ভারত আজ রতন হীন। বলা হয় এই বিজনেস টাইকুন কখনো দেশের মানুষের সঙ্গে শুধুমাত্র বিজনেস করেননি বরং নিজের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে পরিশ্রমের দ্বারা তিনি দেশের সেবা করেছেন। তাই এহেন রত্নসম সন্তান হারিয়ে আজ এক অপূরণীয় শূন্যস্থান তৈরি হলো ভারত মায়ের কোলে। ভারতবর্ষের মুকুট থেকে খসে পড়ল একটি রত্ন। চলে গেলেন বিখ্যাত শিল্পপতি তথা দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব রতন টাটা।মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন টাটা গোষ্ঠী সাম্মানিক চেয়ারম্যান।মৃত্যুকালীন বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। গত সোমবার তাঁর অসুস্থতার খবর প্রকাশিত হয়েছিল। সেদিনই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপরে তার স্বাস্থ্য নিয়ে জল্পনা বাড়ছিল তবে, হাসপাতালে ভর্তির কয়েক ঘণ্টা পরে, রতন টাটা এক বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন।সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে লিখেছিলেন, ‘আমার স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক জল্পনা ছড়াচ্ছে। ওইসব জল্পনার কোনও ভিত্তি নেই’। তবে বুধবার থেকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। একটু ফিরে দেখলে মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের কারণে প্রায় একা হয়ে যান রতন টাটা। ঠাকুমার স্নেহেই বড় হয়ে ওঠেন।১৯৬২ সালে বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষে তিনি টেলকো সংস্থায় সাধারণ কর্মী হিসাবে যোগ দেন। আর বাকি পাঁচজন কর্মীর মতোই রোজ ডিউটি করতেন, শিখতেন কাজের খুঁটিনাটি। ১৯৯১ সালে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হন রতন টাটা। অটোমোবাইল থেকে শুরু করে স্টিল- বাণিজ্যকে এক নয়া উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর আমলে। ১৯৯৬ সালে টাটার টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি টাটা টেলিসার্ভিসেস প্রতিষ্ঠা করেন। শুধু এগুলিই নয় প্রায় ত্রিশটি ক্ষেত্রে টাটা গোষ্ঠীর ব্যবসা সম্প্রসারিত করেন তিনি। ভারতীয় অর্থনীতিতে তার অবদান অনস্বীকার্য।রতন টাটার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।এক্স হ্যান্ডেলে টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধারের সঙ্গে একটি পুরনো ছবি পোস্ট করেন। সঙ্গে লেখেন,‘রতন টাটা একজন দূরদর্শী শিল্পপতি ছিলেন। তাঁর মন মমতায় পরিপূর্ণ ছিল। মানুষ হিসেবে অসাধারণ ছিলেন।ভারতের অন্যতম পুরনো এবং অন্যতম সেরা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী নেতৃত্ব দিয়েছেন।’ শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি লেখেন, ‘আমি শোকস্তব্ধ। ভারতীয় শিল্পের একজন অগ্রণী নেতা ছিলেন। মানুষের জন্য নিজের জীবন উতসর্গ করেছিলেন। তাঁর প্রয়াণে ভারতীয় শিল্পজগত এবং সমাজে অপূরণীয় ক্ষতি হল।’ প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করতেই হয় হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা থাকার পরেও দেশের ধনীদের তালিকায় তার নাম কখনো শীর্ষে আসেনি। যার অন্যতম কারণ তার সামাজিক দায়িত্ববোধ তিনি তার উপার্জনের এক বিশাল মাপের অংক। দেশ তথা বিশ্ববাসীর সেবায় দান করে দিতেন। যার কারণে কোনদিনই শীর্ষ ধনীর তকমা তিনি পাননি যদিও শ্রেষ্ঠ ভারতবাসীর তকমা পেয়েছেন। দেশবাসীর থেকে সম্মান ভালোবাসা। তাই বোধহয় রতন টাটার নামের আগে প্রয়াত শব্দটি ব্যবহার করতে প্রতিটি ভারতবাসী কষ্ট অনুভব করছেন। মহাকালের অমোঘ নির্ণয় থেকে মুক্ত নয় কেউই তাই এই বিশিষ্ট মানুষটির উদারতা কর্ম আত্মত্যাগ এবং সমাজ সেবায় তার অবদানকে স্মরণ করে প্রার্থনা, চির শান্তির দেশে শান্তিতে থাকুন শ্রী রতন টাটা।