
স্পোর্টস ডেস্ক : সবুজ-মেরুন বাহিনীর অভিযান থামিয়ে সুপার ফাইনালে জামশেদপুরের মুখোমুখি এফসি গোয়া। গত ম্যাচে যে রকম দাপুটে ফুটবল খেলতে পেরেছিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, এ দিন সেই দাপট ছিল না তাদের পারফরম্যান্সে।
অনভিজ্ঞদের নিয়ে গড়া দল নিয়ে কলিঙ্গ সুপার কাপের আসরে নেমে কোয়ার্টার ফাইনালের গণ্ডী পেরতে পারলেও সেমিফাইনালের তা পেরে উঠল না মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। বুধবার ভুবনেশ্বরে এফসি গোয়া তাদের ৩-১-এ হারিয়ে উঠে গেল ফাইনালে। আগামী শনিবার ফাইনালে তাদের মুখোমুখি হতে চলেছে জামশেদপুর এফসি।
এ দিন অপর সেমিফাইনালে মুম্বই সিটি এফসি-কে ১-০-য় হারিয়ে ফাইনালে ওঠে আইএসএলের অন্যতম সেমিফাইনালিস্ট জামশেদপুর এফসি। ৮৭ মিনিটের মাথায় তাদের জাপানি মিডফিল্ডার রেই তাচিকাওয়ার গোলে ফাইনালে ওঠার লড়াই জিতে নেয় ইস্পাতনগরীর দল। এই প্রথম সুপার কাপের ফাইনালে উঠল তারা।
এ মরশুমের আইএসএলে শিল্ড ও কাপ জেতার পর কলিঙ্গ সুপার কাপে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে ভুবনেশ্বরে এসেছিল। যাঁরা আইএসএলে নিয়মিত সুযোগ পাননি, বেশিরভাগ সময়েই রিজার্ভ বেঞ্চে বসে কাটিয়েছেন, মূলত তাঁদের নিয়ে ও জুনিয়র ফুটবলার, যারা মূলত কলকাতা লিগে ও রিলায়্যান্স ফাউন্ডেশন ডেভলপমেন্ট লিগে খেলেছে, এই টুর্নামেন্টে তাদের নিয়েই অংশ নিতে এসেছিল সবুজ-মেরুন বাহিনী। প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দলের জুনিয়র খেলোয়াড়দের বড় মঞ্চে নামার অভিজ্ঞতা অর্জন করার সুযোগ করে দেওয়া। সেই উদ্দেশ্য সফল হলেও মরশুমের ত্রিমুকুট জয়ের লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না তাদের। বুধবার কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে এফসি গোয়ার পূর্ণ শক্তির দল অনভিজ্ঞ প্রতিপক্ষের ওপর রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করেই জেতে। প্রথমার্ধে মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানে দুই দলের হয়ে পরপর গোল করেন দুই দলের দুই তরুণ ফরোয়ার্ড যথাক্রমে ব্রাইসন ফার্নান্ডেজ ও সুহেল ভাট। বিরতিতে এই দুই গোল সম্বল করেই ড্রেসিংরুমে যায় দুই দল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকেই পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন এফসি গোয়ার স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড ইকার গুয়ারৎজেনা। তাদের আর এক স্প্যানিশ তারকা বোরহা হেরেরা এর পর কর্নার কিক থেকে ‘অলিম্পিক গোল’ করে জয় সুনিশ্চিত করেন।
গত ম্যাচে যে রকম দাপুটে ফুটবল খেলতে পেরেছিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, তেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি কেরালা ব্লাস্টার্স। এ দিন সেই দাপট ছিল না সবুজ-মেরুন বাহিনীর পারফরম্যান্সে। সহাল আব্দুল সামাদ ও আশিক কুরুনিয়ানরাও এ দিন গত ম্যাচের ছন্দে ছিলেন না। প্রতিপক্ষের চাপে তাঁরাও নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স মেলে ধরতে পারেননি। যার প্রভাব পড়ে দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে।
এ দিন শুরু থেকে ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করে এফসি গোয়া। মাঝমাঠের লড়াইয়ে তারাই এগিয়ে ছিল। বাঁ প্রান্ত থেকে বোরহার ফ্রি কিকে ঠিকমতো হেড করতে পারলে হয়তো গোল পেতেন ওদেই ওনাইন্দিয়া। মাঝমাঠের লড়াইয়ে আধিপত্য বিস্তার না করতে পারায় লং বলে খেলা শুরু করে সবুজ-মেরুন বাহিনী, যাতে আশিক, সহাল, সুহেলরা সচল হয়ে উঠতে পারেন।
তবে কোনও দলই সে ভাবে প্রতিপক্ষের গোলে ধারালো আক্রমণ হানতে পারেনি। যদিও গোয়ার দলে আক্রমণের প্রবণতা দেখা যায় বেশি। ম্যাচের কুড়ি মিনিটের মাথায় অসাধারণ এক গোলে এগিয়ে যায় এফসি গোয়া। ফ্রি কিকের পর বরিস সিংয়ের সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে হাওয়ায় ভাসানো দীর্ঘ শটে গোলের দিকে বল পাঠান বোরহা। গোলের সামনে বল দখলের লড়াই দেখা যায় অভিষেক সূর্যবংশী ও ব্রাইসন ফার্নান্ডেজের মধ্যে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্রাইসনই এই লড়াইয়ে জেতেন। কারণ, তাঁর পায়ে লেগে বল গোলে ঢুকে যায় (১-০)।
গোল খাওয়ার মিনিট তিনেকের মধ্যেই তা শোধ করে দেয় মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। বাঁ প্রান্ত দিয়ে উঠে বরিস সিংকে ধোঁকা দিয়ে গোলের সামনে এক দুর্দান্ত ও মাপা ক্রস পাঠান আশিক কুরুনিয়ান, যেখানে পৌঁছে যান সুহেল ভাট এবং গোলে বল ঠেলতে কোনও ভুল করেননি তিনি (১-১)। গত ম্যাচেও এই একই ভাবে গোল পেয়েছিলেন সুহেল। সেই ম্যাচে আশিকের ক্রসটি এসেছিল বাঁ দিক থেকে।
গোল শোধ করার পর থেকে সবুজ-মেরুন বাহিনীর আক্রমনে তীব্রতা ও গতি বাড়ে। তবে ফিনিশিংয়ের অভাবে বারবার গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে তারা। প্রথমার্ধের শেষ দিকে বাঁ প্রান্তে গোলের প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে সহাল আব্দুল সামাদের অসাধারণ এক ফ্রি কিক হাওয়ায় গতিপথ বদল করে কয়েক ইঞ্চির জন্য প্রথম পোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়।
বিরতির পর, ৫১ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে বাঁ দিকে গোলমুখী দেজান দ্রাজিচের পা থেকে বল ছিনিয়ে নিতে যান গোলকিপার ধীরজ সিং। কারণ, রক্ষণের কোনও খেলোয়াড় তখন আশেপাশে ছিলেন না। কিন্তু দ্রাজিচের পা থেকে বল ছিটকে বেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও নিজেকে আটকে রাখতে পারেননি ধীরজ। দু’জনের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজাতে বিন্দুমাত্র দেরি করেননি। সেই পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি ইকের গুয়ারৎজেনা (২-১)।
এই গোলের পরেই ক্রমশ খেলা থেকে হারিয়ে যেতে থাকে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এবং সেই সুযোগে আরও চাপ বাড়াতে শুরু করে এফসি গোয়াও। চাপে পড়ে যান ধীরজও। পেনাল্টি থেকে হওয়া গোলের সাত মিনিট পরে ফের দুঃসময়ের মুখোমুখি হন তিনি। ৫৮ মিনিটের মাথায় অসাধারণ ও মাপা কর্নার কিকে অলিম্পিক গোল করেন বোরহা। বাঁ পায়ে নেওয়া কর্নার কিক বক্সে দাঁড়ানো সবার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে বারের নীচ দিয়ে গোলে ঢুকে যায়। একটু এগিয়ে থাকা ধীরজ লাফিয়ে উঠেও বলের নাগাল পাননি (৩-১)।
এই গোলের পর আর মাত্র একবারই খেলায় ফেরার সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, যখন নুনো রেইসের লম্বা পাস নিয়ে বক্সে ঢুকে গোলকিপার হৃত্বিক তিওয়ারিকেও পাশ কাটিয়ে গোলের সামনে পৌঁছে যান গত ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় সালাহউদ্দিন আদনান। কিন্তু গোলে শট না নিয়ে বেশিক্ষণ পায়ে বল রাখায় প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা সামনে চলে আসায় তাঁর গোলমুখী শট ব্লক হয়ে যায়। এ ছাড়া আর খেলায় ফেরার সুযোগ পায়নি আইএসএলের জোড়া খেতাবজয়ীরা।