
স্পোর্টস ডেস্ক :বেঙ্গালুরু এফসি-র শেষ মুহূর্তের পেনাল্টি গোলে আইএসএলে প্লে অফের দৌড় থেকে তাঁর দল ছিটকে গেলেও ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন মনে করেন, দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসের লাল কার্ড দেখার ঘটনাই তাদের চলতি লিগে সেরা ছয়ে দৌড় থেকে ছিটকে দিল।
এ বারের আইএসএলে ঘরের মাঠে শেষ ম্যাচে রবিবার বেঙ্গালুরু এফসি-র সঙ্গে ১-১ ড্র হওয়ায় তাদের প্লে-অফের যাওয়ার যাবতীয় রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ম্যাচের ১১ মিনিটের মাথায় যে গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন রাফায়েল মেসি বৌলি, সেই গোলেই ৯০ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে ছিল মশাল-বাহিনী। প্রথমার্ধের শেষে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস। ফলে ম্যাচের অর্ধেকেরও বেশি সময় তারা দশ জনে খেলে। কিন্তু ৯০ মিনিটের মাথায় নিজেদের বক্সে নিশু কুমারের হ্যান্ডবল এক অসাধারণ জয়ের দোরগোড়া থেকে ফিরিয়ে আনে লাল-হলুদ বাহিনীকে।
ম্যাচের পর সাংবাদিকদের কোচ অস্কার ব্রুজোন বলেন, “আজ আমাদের সেরা ছয়ের বাইরে থাকার প্রধান কারণ আমাদের একজন খেলোয়াড়ের অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া, যা কখনওই হওয়া উচিত ছিল না। যখন দল আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল, আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছিল, সুযোগ তৈরি করছিল, খেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল, সমর্থকেরাও আমাদের পাশে ছিল। তখন সেই মুহূর্তই আমাদের সেরা ছয়ে থাকার সম্ভাবনা শেষ করে দেয়”।
তবু দশ জনেও তুমুল লড়াইয়ের জন্য দলের ছেলেদের প্রশংসা করে কোচ বলেন, “আজ আমাদের ছেলেরা দুর্দান্ত খেলেছে, বিশেষ করে যখন ম্যাচ ১১ বনাম ১১ ছিল। তখন শুধুমাত্র আমরাই ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করছিলাম। আমরা দুর্দান্তভাবে প্রতিপক্ষকে চাপে রেখেছিলাম, তাদের অর্ধেই বল ছিনিয়ে নিতে নিচ্ছিলাম, দারুণ আক্রমণ সাজাচ্ছিলাম, বলের দখল নিয়ন্ত্রণ করছিলাম এবং প্রচুর সুযোগ তৈরি করছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত, ১-০ হওয়ার পর, যদি আমরা ২-০ করতে পারতাম, তাহলে ম্যাচের ফলাফল অন্যরকম হতে পারত। আমাদের যথেষ্ট সুযোগ ছিল, তবে এটাও সত্যি যে,শেষ ২৫ মিনিটে, যখন তারা আমাদের বক্সে চাপ দিতে শুরু করল, আমরা কিছুটা ভাগ্যবান ছিলাম যে তাদের কয়েকটি শট পোস্টে লেগে ফিরে এসেছে”।
দলের এই পারফরম্যান্সে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন তাদের স্প্যানিশ কোচ। বলেন, “আমার খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের জন্য আমি গর্বিত। আজকের পারফরম্যান্সই আমাদের পথ দেখাচ্ছে, আর যদি আমরা এভাবেই খেলতে থাকি এবং নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় উন্নতি করতে পারি, তাহলে আমি বিশ্বাস করি, ইস্টবেঙ্গল এখন ভাল কিছু করার জন্য প্রস্তুত”।
এ দিন দ্বিতীয়ার্ধে দশ জনে খেলতে হবে, জানার পর তাঁদের পরিকল্পনায় কতটা পরিবর্তন আসে, তা জানতে চাওয়ায় লাল-হলুদ কোচ বলেন, “প্রথমার্ধে আমাদের খেলোয়াড়রা নিখুঁতভাবে আমাদের পরিকল্পনা কার্যকর করেছিল এবং এইকারণেই আমরা তখন আধিপত্য বিস্তার করছিলাম। বিরতির পর আমরা ফর্মেশন পরিবর্তন করে ৫-৩-১-এ খেলার সিদ্ধান্ত নিই। শুধুমাত্র দুটি লাইন নিয়ে খেললে আমরা আরও বেশি ওপেন হয়ে পড়তাম, তাই আমরা তিনটি লাইন ধরে রেখেছিলাম এবং রক্ষণে একজন অতিরিক্ত খেলোয়াড় যোগ করেছিলাম, যাতে প্রতিপক্ষের উইং আক্রমণ ঠেকানো যায় এবং মাঝমাঠ আরও সুরক্ষিত থাকে। দুই স্ট্রাইকার ও তিনজন মিডফিল্ডারের বদলে, আমরা রক্ষণ ও মাঝমাঠের মধ্যে আরও ভারসাম্য আনতে চেয়েছিলাম”।
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “আমরা কৌশলে কিছুটা বদল আনি, যেখানে মহেশ ও বিষ্ণু, যারা উইংয়ে খেলা শুরু করেছিল, তারা সউলের পাশে আসে এবং মাঝমাঠ বন্ধ করার কাজটা করে। যখনই আমরা বল ক্লিয়ার করি বা দখলে নিই, তখনই দ্রুত আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল মেসির পেছনে বল পাঠানো বা মেসিকে বল ধরে রাখতে দেওয়া। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ২০-২৫ মিনিট এই পরিকল্পনা দারুণভাবে কাজ করেছিল, কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই খেলোয়াড়দের শক্তি কমে আসতে থাকে। ম্যাচের শেষ দিকেবেঙ্গালুরুও বলের দখল ছেড়ে দিয়ে ক্রস ও সেট-পিসের মাধ্যমে আমাদের উপর চাপ বাড়াতে থাকে। দুর্ভাগ্যবশত, শেষ মুহূর্তে আমরা গোল হজম করি, যা ম্যাচের ফলাফল বদলে দেয়”।
এ বার যে তাদের ফোকাস থাকবে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে, তা স্পষ্ট জানিয়ে অস্কার বলেন, “আমরা আজ পর্যন্ত পুরোপুরি আইএসএলে সেরা ছয়ে থাকার লক্ষ্যেই মনোনিবেশ করে ছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম এবং বিশ্বাস করেছিলাম যে সেরা ছয়ে জায়গা করে নিতে পারব। তবে এখন যেহেতু সেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়, আমাদের সামনে এখন একটিই লক্ষ্য—এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ। এখন আমাদের মূল লক্ষ্য হবে খেলোয়াড়দের রিকভার করা। আজ আমরা আরও বেশি রোটেশন করতে চেয়েছিলাম। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের ম্যাচ শেষ করতে হয়েছে মাত্র তিনজন বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে। লাল কার্ডের পর, একজন বিদেশি খেলোয়াড়কে আর পরিবর্তন হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। ক্লেটন সিলভা বেঞ্চে অপেক্ষা করছিল, কিন্তু তাকে মাঠে নামানো সম্ভব হয়নি”।
এই ম্যাচে দলের আরও একটি ক্ষতি হয়েছে এবং তা হল আনোয়ার আলির চোট। যার ফলে তিনি ম্যাচ শুরুর আধ ঘণ্টা পরেই মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। আনোয়ারের চোট প্রসঙ্গে তাদের কোচ বলেন, “আনোয়ার আলির চোট আমাদের জন্যআরেকটা বড় ধাক্কা। আমাদের সেন্টার-ব্যাক আনোয়ার ধীরে ধীরে ফর্মে ফিরছিল এবং সে আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়। আগামীকাল আমরা ওর এমআরআই করাব, যাতে আরও ভালভাবে বোঝা যায় চোটকতটা গুরুতর। আপাতত মনে হচ্ছে ওর হ্যামস্ট্রিংয়ে সমস্যা হয়েছে, কারণ ও হাঁটতেও ব্যথা অনুভব করছে। আমার ধারণা, আমরা অন্তত কয়েক সপ্তাহের জন্য আনোয়ারকে পাব না”।
লিগের শেষ ম্যাচে নর্থইস্টের মুখোমুখি হবে ইস্টবেঙ্গল, যা নিয়ে কোচ অস্কার বলেন, “অ্যাওয়ে ম্যাচের আগে আমাদের হাতে এক সপ্তাহ সময় থাকবে। আমাদের শিলংয়ে খেলতে হবে, যা উচ্চতার কারণে তুলনামূলক ঠাণ্ডা জায়গা। তবে আমরা সেই ম্যাচ নিয়ে এখনই বেশি ভাবছি না। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে খেলোয়াড়দের তরতাজা রাখা এবং এএফসি লিগের ম্যাচে এই শক্তি ধরে রাখা। কারণ, পারফরম্যান্সের দিক থেকে আমরা এখন দারুণ জায়গায় রয়েছি। এখন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের রিকভার করতে হবে। তবে আমরা দলীয় কৌশল বা আমাদের খেলার স্টাইল খুব বেশি পরিবর্তন করব না”।