
স্পোর্টস ডেস্ক :যতদিন ধরে ভারতীয় দলের হয়ে খেলছেন সুনীল ছেত্রী, তত দিনে জাতীয় দলে তাঁর বন্ধুর সংখ্যা ক্রমশ বেড়েছে। তাঁদের মধ্যে খুব কাছের বন্ধুও রয়েছেন কয়েকজন। যেমন গুরপ্রীত সিং সান্ধু, সন্দেশ ঝিঙ্গন। ২০১৫ থেকে, অর্থাৎ যে বছর সন্দেশ ভারতীয় দলে প্রথম ডাক পান, তখন থেকে তিনি, সুনীল ও গুরপ্রীত ভারতীয় দলের হয়ে একসঙ্গে খেলে আসছেন। লোকে বলে ফুটবল মাঠে এমন বন্ধুত্ব বড় একটা দেখা যায় না এবং বন্ধুত্বের টানেই নাকি এই তিনজন গত মরশুমে বেঙ্গালুরু এফসি-র হয়ে একসঙ্গে খেলেছিলেন।
গুরপ্রীত ভারতীয় দলে প্রথম ডাক পান ২০১১-য়। সেই থেকে সুনীলের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের সূচনা। ২০১১-র এএফসি এশিয়ান কাপে তাঁরা ভারতীয় দলের হয়ে প্রথম একসঙ্গে খেলেন। বয়সের ফারাক সত্ত্বেও কী ভাবে তিনজনের মধ্যে এমন গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠল, এ প্রশ্ন অনেকের মনেই রয়েছে। ‘ইন দ্য স্ট্যান্ডস’ শোয়ে তাঁর এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্বে সুনীল ভক্তদের সেই কৌতুহল নিরসন করেছেন।
এই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “হ্যাঁ, সত্যিই আমরা তিনজন খুব কাছের বন্ধু। একসময় ওরা একেবারে নতুন, তরুণ ফুটবলার ছিল। এখন ওরা আমার বন্ধু। বোধহয়, আমি ওদের বিশ্বাস অর্জন করেছি এবং তার বদলে ওরা আমার বন্ধুত্ব অর্জন করেছে”।
কেমন সেই বন্ধুত্ব? তার বর্ণনা নিজেই দিয়েছেন ভারতীয় দলের অধিনায়ক, “আমাদের মধ্যে শুধু মাঠের ভিতরের ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে আলোচনা হয় না, মাঠের বাইরের অনেক বিষয়েও আলোচনা হয়। আমি দু’জনেরই ফ্যান। ওদের দু’জনেরই একটা গুণ অসাধারণ, কেউই কোনও অবস্থায় হাল ছেড়ে দেয় না। এই দু’জনের সঙ্গেই আমি বেশি কথা বলি এবং এই দু’জনের কাছেই আমি আমার মনের বেশির ভাগ কথা বলি”।
এখন সুনীল ছেত্রীকে সবাই একজন সিনিয়র ফুটবলার হিসেবেই চেনেন, যিনি তাঁর ক্লাব ও জাতীয় দলের সতীর্থদের মাঠে ও মাঠের বাইরে সব রকম ভাবে সাহায্য করেন, তাদের পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি যখন তরুণ ফুটবলার ছিলেন, তখন কেমন ছিলেন, তা অনেকেরই অজানা।
সেই সময়ের স্মৃতিকথা বলতে গিয়ে সুনীল ছেত্রী এই সাক্ষাৎকারে বলেন, “ওই সময়ে আমি একেবারে পিছনের বেঞ্চে বসা ছাত্রদের মতো ছিলাম। যারা সামনে বসত, তাদের নিয়ে হাসি, ঠাট্টা, ইয়ার্কি করতাম। স্টিভেন ডায়াস, মেহরাজ ওয়াডু, এনপি প্রদীপ, সমীর নায়েক, সুব্রত পাল, গৌরমাঙ্গি সিং আর আমি ছিলাম জুনিয়র। টিম বাসের পিছনের দিকে বসে আমরা সিনিয়রদের সঙ্গে ইয়ার্কি মারতাম। সে অবশ্যই ভদ্রতার সীমার মধ্যে থেকে। কখনওই তা পেরিয়ে যেতাম না। বাইচুং ভুটিয়া-দা আমাকে বলত, ‘তুই আমাকে বয়স্ক বলিস! যখন আমি আর তোদের সঙ্গে থাকব না, তখন বুঝতে পারবি আর দেখবি আমাকে কী রকম মিস করবি’। কয়েক মাস আগেই আমি ওঁকে মেসেজ করি, ‘সে দিন তুমি ঠিক কী বলতে চেয়েছিলে, তা এখন বুঝতে পারি’, এই কথা লিখে”।
গত ১৮ বছর ধরে ভারতীয় দলের হয়ে খেলছেন সুনীল। এই সময়ে সাধারণত দলের সিনিয়ররা মানসিক ভাবে খুবই ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। দলের মধ্যেও নানা ঠাট্টা, ইয়ার্কি সামলাতে হয় তাদের। কিন্ত সুনীল ছেত্রী আগের মতো একই রকম আছেন। তবে ভারতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার আগে যে রকম ছিলেন, নেতৃত্বের দায়িত্ব পাওয়ার পরে বদলে গিয়েছেন।
আগে কেমন ছিলেন? নিজেই বলেছেন সে কথা, “নেতৃত্বের দায়িত্ব আসার আগে আমি ছিলাম বেশ বদমায়েশ। আমি আর স্টিভেন ছিলাম প্র্যাঙ্কস্টার। মহেশভাই (গাওলি), ক্লাইম্যাক্সের (লরেন্স) এত পিছনে লাগাতাম যে, ওরা আমাদের ওপর খুব বিরক্ত ছিল। রেনেডিভাই (সিং), বাইচুংভাইরা (সিং) তো আমাদের ব্যাপারে হাল ছেড়েই দিয়েছিল। কারণ, আমরা ওদের সব সময় বিরক্ত করতাম”।