
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ঃ জম্মু কাশ্মীর ভারতের অভিন্ন অঙ্গ। সুপ্রিম কোর্টের রায় জম্মু কাশ্মীরে সংবিধানের ৩৭০ ধারার প্রয়োগ বাতিল করা ছিল বৈধ পদক্ষেপ। আদালতের মতে, ৩৭০ ধারা কোনও স্থায়ী বন্দোবস্ত নয়। দেশের শীর্ষ আদালতের রায়, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের পক্ষে তা বলাবাহুল্য।
বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। সদ্য তিন রাজ্য জয়ের পর, ৩৭০ ধারা প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সংবিধান বেঞ্চের রায়, বিজেপির কাছে বাড়তি শুদ্ধ হাওয়া। উচ্ছ্বসিত পদ্ম শিবির। তার ওপর, জানুয়ারি মাসে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধনের পর সংসদ দখলের রাস্তা চওড়া হবে। এমনটাই দাবি গেরুয়া শিবিরের।
একটু ইতিহাস ঘটলে দেখা যায়, বিজেপির পূর্বসূরি জনসংঘের বহু পুরনো দাবি জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের। জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের প্রধান স্লোগানই ছিল, এক দেশে এক বিধান, এক নিশান ও এক প্রধানই থাকবে। পৃথক বিধি থাকতে পারে না জম্মু কাশ্মীরে। আর শ্যামাপ্রসাদ, দীনদয়ালের স্বপ্নকে পূরণ করতে চেয়েছিল বিজেপি।
অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন সরকার ছিল ২৩ শরিক দলের উপর নির্ভরশীল। তাই তখন বিজেপির ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়া ব্যাপারে আগ্রহ থাকলেও উপায় ছিল না। কিন্তু ২০১৪ তে কেন্দ্রে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতেই স্বপ্নপূরণ করার চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সাংসদের দু’কক্ষে ২০১৯ সালের অগস্ট মাসে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করেন। সে সময়, জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিলের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে বহু মামলা দায়ের হয়েছিল। সেগুলি একত্রে এনে শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টে। শুনানি শেষে, ৫ সেপ্টেম্বর এই বিষয়ে রায়দান স্থগিত রাখে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর, উজ্জীবিত করে তুলল বিজেপিকে তা চোখ বুজে বলা যায়। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার তাঁদের মতাদর্শগত দুটি বিষয়কেই লোকসভা ভোটের আগে তাজা ও সতেজ ভাবে পেয়ে গেল। এক, সঙ্ঘ পরিবারের রাম মন্দির। দুই জনসংঘের জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার। রায় বেরতেই, সেই হাওয়াতে গা ভাসিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ঘোষণা হতেই প্রধানমন্ত্রী এদিন টুইট করে বলেন, “৩৭০ ধারা বাতিল করা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় ঐতিহাসিক। এই রায় শুধু আইনি কোনও বিষয় নয়, এটা একটা আশার আলো। ভারতকে আরও ঐক্যবদ্ধ ও মজবুত করে গড়ে তুলতে এই রায় আমাদের উজ্জীবিত করছে এবং এক উজ্জ্বল ভারতের পথ দেখাচ্ছে।”
এক ভাগ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সন্দেহাতীত ভাবেই সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সামনে রেখে জাতীয়তাবাদের আবেগ আরও উস্কে দিতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বোঝাতে চেয়েছেন, ঐক্যবদ্ধ ও মজবুত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি যে সঠিক পদক্ষেপ করেছিলেন। কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেরনি বিজেপি। বেকারত্বকে এখন ও জয় করতে মোদী। লোকসভা ভোটের আগে রামমন্দির এবং ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারকে দিয়ে সাধারণ মানুষের না পাওয়াগুলোকে চাপা দিতে চাইবে বিজেপি তা বলাইবাহুল্য।