
ওঙ্কার ডেস্ক : সুপ্রিম কোর্ট ও দেশের প্রধান বিচারপতিকে ঘিরে বিজেপি সাংসদদের বিতর্কিত মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড়। শনিবার সেই মন্তব্যগুলোর দায় থেকে সরে দাঁড়াল ভারতীয় জনতা পার্টি। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, নিশিকান্ত দুবে ও দিনেশ শর্মার বক্তব্য তাঁদের “ব্যক্তিগত মত”, এর সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই।
এক্স-এ (সাবেক টুইটার) করা পোস্টে নাড্ডা লেখেন, “বিচারব্যবস্থা এবং ভারতের প্রধান বিচারপতি সংক্রান্ত নিশিকান্ত দুবে ও দিনেশ শর্মার মন্তব্য সম্পূর্ণরূপে তাঁদের ব্যক্তিগত মত। বিজেপির সঙ্গে এই মন্তব্যের কোনও সম্পর্ক নেই। বিজেপি এই ধরনের মন্তব্য সমর্থন করে না।”
তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই ওই দুই সাংসদ-সহ দলের অন্যান্য সদস্যদের এমন মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নাড্ডার কথায়, “বিজেপি সবসময়ই বিচারব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা মনে করি, বিচারব্যবস্থা ভারতীয় গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং সংবিধান রক্ষার অন্যতম স্তম্ভ। সর্বোচ্চ আদালত-সহ দেশের সমস্ত আদালতের রায় ও পরামর্শ বিজেপি যথাযথ মর্যাদা দিয়ে মেনে চলে।”
শনিবারই বিতর্কের সূত্রপাত। এক্স-এ নিশিকান্ত দুবে লেখেন, “যদি সুপ্রিম কোর্টই আইন তৈরি করে, তাহলে সংসদ বন্ধ করে দেওয়া উচিত।” পরে এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়কে তিনি দেশের “গৃহযুদ্ধের” জন্য দায়ী করেন। ওই সময় সুপ্রিম কোর্টে ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫ সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলছিল।
অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ দিনেশ শর্মা বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী কেউই লোকসভা, রাজ্যসভা বা রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দিতে পারে না। রাষ্ট্রপতি যেহেতু আইন অনুমোদন করেছেন, তাই তাঁকে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ।”
এই বিতর্কের মধ্যেই দেশের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ও বিচারব্যবস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর মতে, “ভারতের সংবিধান বিচারপতিদের আইনপ্রণেতা, প্রশাসক বা ‘সুপার পার্লামেন্ট’ হওয়ার কথা বলেনি। এটি এক উদ্বেগজনক প্রবণতা।” তিনি এ-ও বলেন, কেন একজন বিচারকের বিরুদ্ধে FIR দায়ের করতে গেলে এত জটিল সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, যেখানে একজন সাংবিধানিক পদাধিকারীকেও (যেমন তিনি নিজে) তেমন রেহাই পান না ?
পুরো বিষয়টিকে “দুঃখজনক” বলে উল্লেখ করেছেন কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সলমন খুরশিদ। মুখ খুলেছেন অন্যান্য বিরোধী দলের নেতারাও।
এই অবস্থায় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে নাড্ডার এই বার্তা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দলের ভিতরে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং জনপরিসরে স্পষ্ট অবস্থান জানাতে এই বিবৃতি বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলেই মত তাঁদের।