
সুমিত চৌধুরী: আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চ থেকে মূলত কাকে নিশানা করেন সেদিকে রাজনৈতিক মহল কৌতূহলের সঙ্গে তাকিয়ে থাকবে। কারণ একুশে জুলাই কংগ্রেসের যে ১৩ জন কর্মী শহীদ হয়েছিলেন তখন বামফ্রন্টের জমানা। বামফ্রন্টের আমলেই পুলিশখোদ চৌরঙ্গীর বুকে গুলি চালিয়ে তের জন যুব কংগ্রেস কর্মীকে হত্যা করে।
যতদিন তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসেনি একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মূলত নিশানা করা হয়েছে সিপিএম তথা বামফ্রন্টকে। ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে সভা করবার ব্যাপারে কোন বার ই বাম সরকারের পুলিশ অনুমতি দিত না। আর প্রতিবারই পুলিশকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মঞ্চ বেঁধে সভা করতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ক্ষমতায় আসবার পর পরিস্থিতি পুরো বদলায়। একুশে জুলাই এর সভা তৃণমূল প্রথম যেবার জেতে সেবার ব্রিগেডে হয়েছিল।
কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যে দ্রুত পরিবর্তন হয়েছে। সিপিএমের জায়গায় প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। যে বিজেপি কার্যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন করে এন্ট্রি নিয়েছিল।
সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কংগ্রেস এবং সিপিএমের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিক্ত রাজনৈতিক লড়াই হয়েছে।
কিন্তু তারপর জাতীয় রাজনীতিতে যে পট পরিবর্তন হয়েছে তাতে ইয়েচুরি এবং অধীর চৌধুরী নেতারা একইসঙ্গে মমতার সঙ্গে মঞ্চ শেয়ার করেছেন বেঙ্গালুরুতে।
যা নিয়ে তৃণমূল স্তরে বাম কর্মী সমর্থকদের মধ্যে যথেষ্ট দোলাচল।
পরিস্থিতি এতটাই চাপের যে সীতারাম ইয়েচুরি থেকে মোহাম্মদ সেলিম সকলকেই বলতে হয়েছে সিপিএম তৃণমূলের সঙ্গে কোন সমঝোতায় যাচ্ছে না। রাজ্যস্তরে শুভেন্দু অধিকারী পাল্টা প্রচারে নেমে গেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইয়েচুরিকে নিয়ে আরো বেশি করে চুরি করবেন।
সুতরাং এই পরিস্থিতিতে একুশে জুলাই এর মঞ্চ থেকে মমতা কতটা বিজেপিকে আক্রমণ করেন আর কতটা সিপিএমকে আক্রমণ করেন সেটা দেখবার।
অবশ্য রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে মমতা সিপিএমের বিরুদ্ধে আক্রমণে ঝাঁজ কমাবেন না। কারণ সে ক্ষেত্রে তৃণমূল বিরোধী ভোটে সিপিএম কংগ্রেস জোট যেটুকু থাবা বসিয়েছে সেটা আবার চাপের মুখে পড়ে যাবে। বরং সিপিএম কংগ্রেস শিবির যদি তৃণমূল বিরোধী একটা অবস্থান রাজ্যে ধরে রাখতে পারে তাহলে মমতা বিরোধী ভোট পুরোটা বিজেপি পাবে না। সংসদীয় পাটি গণিতের সহজ অংকে সে ক্ষেত্রে আপাতত লাভ মমতার।
ইতিহাসের ছোট তথ্য একটা মনে রাখা দরকার। একুশে জুলাই যখন গুলিতে ১৩জন মারা যান তখন কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম হয়নি। এটা তৃণমূল কংগ্রেস জন্ম নেয়ার পাঁচ বছর আগের ঘটনা। মমতা তখন যুব কংগ্রেস নেত্রী হিসেবে এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। কংগ্রেস একটা অভিযোগ করতো মমতা কংগ্রেসের শহীদদের হাইজ্যাক করে নিয়েছেন। কংগ্রেস প্রতি বছর সেই জন্য আলাদা করে একটা শহীদ স্মরণ করতে একুশে জুলাই। আরে বহড়ে যেটা মমতার সমাবেশ থেকে অনেক ছোট হলেও একটা রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিল। কংগ্রেস আদৌ এবার সেই ছোট অনুষ্ঠানটা করে কিনা সেটাও রাজনৈতিক মহল দেখবে।