
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়: তাহলে কি নেত্রীর বিপরীতে হাঁটছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? ১০ মার্চ ব্রিগেড ।তৃণমূলের জনগর্জন সভা। আর সেখান থেকে কার্যত সেই পথেই হাঁটলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
তবে এই দ্বন্দ্ব কিন্তু আজকের নয়। নবীন-প্রবীণ নিয়ে কার্যত নেত্রীর বিরুদ্ধ লাইনেই হেটেছেন অভিষেক। একটু যদি দেখা যায়, তৃণমূলের এর সদ্য প্রাক্তন মুখপাত্র কুনাল ঘোষ নবীনদের নিয়ে সরব হন। এমনকী সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবীণদের জায়গা ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। যা নিয়ে রীতিমত বিতর্ক তৈরি হয়। তবে পরবর্তী সময়ে বাগডোগরা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে কুনাল ঘোষের সেই বক্তব্যকে সীলমোহর দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তবে প্রকাশ্যেই কুনাল এবং অভিষেকের এই ধরনের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন কি স্পষ্ট করে দেন প্রবীনদের সঙ্গে আলোচনা করি প্রয়োজনে নবীনরা দল চালাবেন। অর্থাৎ ত দলে অভিষেকের লাইন কে কার্যত খারিজ করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজনৈতিক মহলের মতে, দল স্বীকার না করলেও এই মুহূর্তে তৃণমূলে একটা অলিখিত নবীন- প্রবীণ ‘বর্ডার লাইন’ তৈরী হয়ে গিয়েছে।
যা অনেকটাই প্রকোট হয়েছে ইন্ডিয়া জোট থেকে শুরু করে প্রার্থী তালিকা নিয়ে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ দাস এর ব্যখ্যা,” আসলে এই মুহূর্তে মমতা- অভিষেক এর মধ্যে একটা সূক্ষ্ম লড়াই বা ঠান্ডা লড়াই চলছে। বিশেষ করে অভিষেক কার্যত নিজের মতো করে টিম তৈরি করছেন। আর যেহেতু অভিষেক নিজে যুবক, তাই দলে নব জোয়ার আনতে চাইলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তার নিজের টিম দিয়ে দলের রাশ নিজের হাতে রাখতে চাইছেন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই নবীন-প্রবীণ লড়াই সামনে উঠে আসছে।” একটু যদি ফ্ল্যাশব্যাক এ আসা যায়, দেখা যাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর নবজোয়ারে খুব একটা দেখা যায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পাশাপাশি ইন্ডিয়া জোটে কংগ্রেসের সাথে জোট করা নিয়েও কার্যত দ্বিমত দেখা যায়। রাহুলের ভারত ন্যায় যাত্রা থেকে শুরু করে আসন সমঝোতা নিয়ে যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার কংগ্রেসকে আক্রমণের সুর চড়িয়েছেন, সেখানে গোটা ইস্যুতে কার্যত চুপ থেকেছেন অভিষেক।
তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ১০ মার্চ এর ব্রিগেড। যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কংগ্রেসকে নিশানা করে একা লড়াই করার বার্তা দিলেও, সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিষেক জানিয়েদেন,অধীর চৌধুরীর বঙ্গ কংগ্রেস নিয়ে তাঁর লড়াই থাকলেও এআইসিসির সাথে তিনি যে সংঘাত চান না তা ব্রিগেড থেকে স্পষ্ট করে দেন অভিষেক। রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ দাসের বক্তব্য,” অভিষেক কার্যত জোটের দরজা খুলে রেখেই ইচ্ছেকৃত ভাবে কংগ্রেসকে নিয়ে ওই বক্তব্য করেন। ” এর পাশাপাশি এও বুঝিয়েদিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না চাইলেও তিনি কংগ্রেসর প্রতি নরম। এমনকী কংগ্রেসের সাথে তিনি যে বন্ধু তত্ত্বে বিশ্বাসি সেই বার্তাও দিলেন।” রাজনৈতিক মহলের মতে, ৪২ আসনে প্রার্থী হিসাবে বেশ কয়েকজন কে এই নির্বাচনে আর টিকিট দেওয়ার পক্ষপাতি ছিলেন না অভিষেক l বিশেষ করে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বা সৌগত রায়ের মতো ৭০ পার হওয়া প্রার্থীরদের টিকিট দেওয়ার পক্ষের ছিলেন না অভিষেক। বিশ্বজিৎ এর ব্যখ্যা,” দেবাংশু, সায়নী, পার্থ ভৌমিক, মুকুটমনি, উত্তম বারিক, আইপিএস প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায় সহ একাধিক প্রার্থী টিকিট পেয়েছেন যারা কার্যত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর টিম বলে পরিচিত, আর তাঁর প্রার্থীদের টিকিট পাইয়ে দিতে গিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নিতে হয়েছে অভিষেককে। অপরদিকে দলে সামঞ্জস্য আছে তা বোঝাতে যেমন একদিকে অভিষেকের প্রার্থীদের নামে সিলমোহর দিয়েছেন, আর
প্রকাশ্য সেই প্রার্থী তালিকা বলতে দিয়েছেন অভিষেককে। এর থেকে পরিষ্কার কার্যত ধামাচাপা দিয়ে দলের ভিতরের ফাটল ঢাকছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ” তবে বেশ কিছু সিদ্ধান্তে তিনি যে নেত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন তা স্পষ্ট হচ্ছে।