
প্রীতম দাস, বীরভূম: বর্তমান প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যেতে বসেছে হস্তচালিত তাঁত শিল্পের মাকুর সেই ঠক ঠক শব্দ। তাঁতশিল্পীরা বেছে নিচ্ছেন অন্য পেশা। বীরভূম জেলার রামপুরহাট ২ ব্লকের অন্তর্গত মাড়গ্রাম, বাসোয়া, বিষ্ণুপুর, তেঁতুলিয়া নতুনগ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে মূলত তাঁত শিল্পীদের বসবাস বেশি। তন্তুবাই গ্রাম বলেও অনেকে বলে থাকেন। প্রায় কয়েক হাজার তন্তুবাই সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন এখানে । বংশ পরম্পরায় তাঁত শিল্পকে পেশা করেই তাঁদের রুজি রুটির যোগান হয়। তাই সকাল হলেই মাড়গ্রাম নিচু বাজার পাড়া, খেদা পাড়া, বটতলা পাড়া পাশাপাশি বাসোয়া বাজার পাড়া, ডাঙ্গা পাড়া, বিষ্ণুপুরের টুঙ্গি পাড়া, ষষ্ঠীতলা প্রায় সমগ্র এলাকা জুড়ে সারি সারি বাড়ি থেকে শোনা যেত মাকুর সেই ঠক ঠক শব্দ, রেশমের গন্ধ।
ঐ এলাকায় কাপড় বুনতে বাড়ির পুরুষদের সাহায্য করতে মহিলাদের ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যেত। কখনও চরকায় সুতো জড়ানো, আবার কখনও বাড়ির পুরুষেরা বাড়ির বাইরে কোনো কাজে গেলে সেই তাঁত বোনের কাজে বিরতি না দিয়ে চালিয়ে যেতেন কাপড় বুনন। কিন্তু এখন সেই সমস্ত এলাকায় যেনো অনেকাংশে কমে গিয়েছে মহিলাদের চরকায় সুতো জড়ানো ব্যস্ততা, রেশমের গন্ধ,মাকুর ঠক ঠক শব্দ। ধুক ধুক করছে এলাকা। এ পেশা ছেড়ে অনেকে বেছে নিচ্ছে অন্য পেশায়। কেউবা খুলেছে জুতোর দোকান কেউ বা আবার সবজির ব্যবসায় মন দিয়েছে, কেউ আবার বিভিন্ন দোকানে যোগানদার এর কাজে লেগে পড়েছে। কেনো দুর্দশা এই গ্রামগুলিতে? এর কারণ খুঁজতে খুঁজতে এলাকার তন্তু বাই সম্প্রদায়ের মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে কিছু তথ্য। এলাকার তাঁত শিল্পীরা জানাচ্ছেন একটা কাপড় বুনতে প্রায় দুই দিন সময় লাগে সঙ্গে একজনকে সাহায্য করতে হয় তাই যে পরিমাণ পরিশ্রম করা হয়, সে পরিমাণে তারা মজুরি পাচ্ছে না। যার ফলে নতুন প্রজন্মের ছেলেরা এই পেশাকে গ্রহণ না করে তারা অন্য পেশায় আগ্রহী হচ্ছেন। ফলে কয়েকটি এলাকায় কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে । আবার কেউ কেউ বাড়িতে বাপ ঠাকুরদার আমলের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে এখনও তাঁত শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।