
কয়েকটা অত্যন্ত জরুরী কথা জানাতে বা বলতে পারেন সতর্ক করতে এলাম। এর মধ্যে তিনটি ঘটনার অভিজ্ঞতাই আমাদের হয়েছে। ।একনম্বর ঘটনা।
সকাল দশটা নাগাদ আমাদের গৃহপরিচারিকার ফোনে একটি ফোন আসে। ট্রু-কলার দেখাচ্ছে কলারের নাম সাব ইন্সপেক্টর ভেঙ্কটেশ। তিনি ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে মোটা গলায় হিন্দিতে কথা ভেসে এল। ভদ্রমহিলা তামিল, মোটে হিন্দি বোঝেন না। আমার স্ত্রীকে সে ফোন ধরিয়ে দিল। ওপাশ থেকে মোটা গলায় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হল।
আমার স্ত্রী অনুবাদক।
তাঁর স্বামীর নাম বলে তারা জানাল তাদের মেয়ের নাম কি এই? মহিলা ভয়ে ভয়ে জানালেন হ্যাঁ।
সঙ্গে সঙ্গে অপার থেকে জানান হল, ড্রাগ অ্যাবিউসের কারণে তাঁদের মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে পুলিশ স্টেশনে আছে। মহিলা এটুকু শুনেই কাঁদতে শুরু করেছেন ততক্ষণে।
ফোন স্পিকারে ছিল।
আমার স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, “কোন পুলিশ স্টেশানে”
একটু চুপচাপ তারপর বলল সি আই ডি দফতরে।
স্ত্রী বুঝে ফেলেছেন ততক্ষণে বললেন, “কর্ণাটকের পুলিশ তো কন্নড় ছাড়া কথা বলে না, আপনি চমৎকার হিন্দি বলেন তো।”ওপাশে একদম চুপ।
“আমরা হ্যান্ডেল করে নেব কেমন?” বলে স্ত্রী ফোন কেটে দিলেন। ততক্ষণে বাড়িতে ফোন করে মহিলা জেনে নিয়েছেন মেয়ে কলেজ থেকে ফিরে এসেছে এবং বাড়িতেই আছে।
আপনাদের অনেকের পুত্রকন্যা বাইরে পড়াশুনা করে। এমন ফোন গেলে ঘাবড়ে যাওয়া টা খুব স্বাভাবিক। ওরা আরও একটা চালাকি করে বলে নিন ছেলের বা মেয়ের সাথে কথা বলুন। ফোনে ভেসে আসবে কান্না আর চীৎকার তারা বলছে, “মা আমাকে বাঁচাও, বা বাবা আমাকে বাঁচাও।”
সেটাও কেটে কেটে যাবে। মনে হবে নেটওয়ার্ক নেই। ওটা আপনার ছেলে বা মেয়ের গলা কি না, টেনশানে সে কথা মনেও থাকবে না। তারপর তারা দাবী করবে টাকা, কেস না দিয়ে পুত্র/কণ্যাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্যে। বারবার জানাবে একবার কেস দিলে কেরিয়ার শেষ।
।দু নম্বর ঘটনা।
আমার স্ত্রীর ফোনে একটি ফোন এল, অবিকল আমার গলায় কেউ বলল, “আমার ফোনটা পকেটমারী হয়ে গেছে, অথবা আমার অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে, ফোন ভেঙে গেছে। প্লীজ এই নম্বরে আমায় কিছু টাকা পাঠাও। এক্ষেত্রে টাকার অঙ্কটা কম তবু হাজার পাঁচেকের মধ্যে। বেশির ভাগই দ্বিধা না করে টাকা পাঠিয়ে দেন।
আমার স্ত্রী ঘটনাটা জানতেন। তিনি ওই ফোন হোল্ডে রেখে, অন্য ফোন থেকে আমায় ফোন করতেই, কলার ফোন ডিস্কানেক্ট করে দিল। ভয়েস ক্লোন করে এ আই এর সাহায্যে যে কারও কন্ঠস্বর নকল করা সম্ভব এখন।
আমরা একটা ঘরোয়া পন্থা উদ্ভাবন করেছি, আপনারাও করতে পারেন। আমরা একটি ফ্যামিলি কোড ঠিক করে নিয়েছি। কোডটি আমরা চারজন ছাড়া কেউ জানে না। তাই আমার কন্ঠস্বরে অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলে প্রথম প্রশ্ন হবে “ফ্যামিলি কোড বল।”জালিয়াত অবশ্যই আপনার ফ্যামিলি কোড জানবে না। সে কোড যা কিছু হতে পারে। আপনাদের প্রিয় ছবির নাম, বইয়ার নাম, খাওয়ারের নাম। ফ্যামিলি কোড ব্যাপারটি সামান্য হলেও বেশ কার্যকরী।
তিন নম্বরটি অত্যন্ত নিরীহ মনে হবে। তবে খুব মারাত্মক।
আমার কাছে একটি ফোন এল, “অমুক তারিখে আপনি একটি ইলেকটনিক উপকরণ কিনেছেন?”“তারিখ তো মনে নেই, তবে হ্যাঁ কিনেছি।”
“কেমন কাজ করছে সেটি?”“ভালোই তো, মন্দ কী?”
“বেশ বেশ, একটা লিঙ্ক পাঠাচ্ছি, সেটাতে ক্লিক করে আপনার ফিডব্যাক দিয়ে দিন।”
“কিন্তু ভাইটি, অচেনা লিঙ্ক কেন, কোন কিছুতেই যে আমি আঙুল ঠেকাই না।” অত্যন্ত মোলায়েম গলায় বলি আমি।
বললে বিশ্বাস করবেন না, কি দিনকাল পড়েছে, আমার ভদ্রতার উত্তরে কিনা অশ্রাব্য গালাগাল দিয়ে ফোন কেটে দিল ভাইটি। এদের মোডাস অপারেন্ডি একেবারে সিম্পল, ক্লিক করলেই খেল খতম।
জিনিসপত্র কিনে আপনার ফোন নম্বর চাইলে দেবেন না, পয়েন্টের প্রলোভন দেখালেও নয়। এরা মাত্র কয়েকটা টাকার বিনিময়ে আপনার ডেটা বিক্রি করে দেয়। কোন রকম গিফট, কিংবা লাকি ড্রর খপ্পরে পড়বেন না। আপনাকে বিলকুল আনলাকি করে চলে যেতে এরা বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না।
সতর্ক থাকুন, ভালো থাকুন।
রাজা সিনহা