
ওঙ্কার ডেস্ক : ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের হোয়াইট হাউসে পা রাখার মাত্র ১০০ দিনের মাথায় মুখ থুবড়ে পড়েছে আমেরিকার বিগ টেক সংস্থাগুলি। ‘ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন’ নামে পরিচিত অ্যাপল, মাইক্রোসফট, এনভিডিয়া, অ্যামাজন, টেসলা, গুগল (অ্যালফাবেট)ও মেটার সম্মিলিত বাজারমূল্য কমেছে প্রায় ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার, যা শতাংশের হিসাবে ২২%! এই ধসের মূল কারণ ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন ট্যারিফ নীতি, বিশেষত চীনের সঙ্গে সংযুক্ত সাপ্লাই চেইনকে কেন্দ্র করে।
প্রথমে মনে হয়েছিল, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতা পেয়ে টিম কুক, ইলন মাস্ক, সুন্দর পিচাইয়েরা বোধহয় হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন।কিন্তু বাস্তবটা দাঁড়িয়েছে ঠিক উল্টো। হোয়াইট হাউসের দফায় দফায় ঘোষণা করা নতুন আমদানি শুল্ক ও সাপ্লাই চেইনের উপর কড়াকড়িতে বিপর্যস্ত কর্পোরেট আমেরিকা।
এই অবস্থার মধ্যেই জারি রয়েছে বাইডেন আমলের শুরু করা অ্যান্টি-ট্রাস্ট মামলা। অ্যাপল ও অ্যামাজনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগে চলছে শুনানি। মেটার বিরুদ্ধে একচেটিয়া আধিপত্য কায়েমের অভিযোগে তদন্ত চলছে। গুগলের সার্চ ব্যবসাকে ভাঙার দাবি নিয়েও চলছে আইনি চাপানউতোর। এদিকে এনভিডিয়া চীনে তাদের জনপ্রিয় এআই চিপ বিক্রি বন্ধ করায় মাত্র এক ত্রৈমাসিকেই ক্ষতি ৫.৫ বিলিয়ন ডলার।
টেসলারও হাল খারাপ। ইলন মাস্ক ট্রাম্পের খরচ কমানোর নীতিতে সক্রিয় ভুমিকা নেওয়ায় টেসলার গাড়ি বিক্রি কমেছে ১৩%। এই সপ্তাহেই টেসলা ও গুগলের ত্রৈমাসিক রিপোর্ট প্রকাশ পাবে। অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, অ্যাপল ও মেটার রিপোর্ট আসবে আগামী সপ্তাহে। মে ২৮-এ মরশুম শেষ করবে এনভিডিয়া।
বিশ্লেষকদের মতে, হোয়াইট হাউসের বারংবার নীতিগত পালাবদলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছে।সরবরাহ শৃঙ্খলা রক্ষা, বাজারের চাহিদা আন্দাজ, বা ভবিষ্যৎ আর্থিক পরিকল্পনা—সব কিছুই হয়ে পড়ছে অনিশ্চিত।
এদিকে ট্রাম্পের ট্যারিফ প্রভাব শুধু আমেরিকাতেই নয়, ঢেউ তুলেছে ভারতের বেসরকারি বিনিয়োগ ক্ষেত্রেও। গোল্ডম্যান স্যাচসের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্ব জুড়ে আমদানি শুল্ক সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার কারণে আগামী দিনে ভারতের প্রাইভেট ক্যাপেক্স থমকে যেতে পারে।
রিপোর্ট বলছে, “ট্যারিফ এখনও চূড়ান্ত হয়নি, আলোচনার স্তরে রয়েছে। এই অনিশ্চয়তা মেটা পর্যন্ত অনেক সংস্থা নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ আপাতত স্থগিত রাখবে।”
শুধু তাই নয়, আমেরিকার অর্থনৈতিক পরিকাঠামো নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জেফারিজ। তাদের মতে, ট্যারিফ নীতির ধাক্কায় বিশ্ব অর্থনীতিতে আমেরিকার প্রভাব কমছে। ট্রাম্পের আমলে আর্থিক ধারাবাহিকতা রক্ষা কঠিন হচ্ছে। চীন যেখানে সঞ্চয়ে ভরপুর, সেখানে আমেরিকা ডুবে আছে ঋণে। ২০২৪ সালের শেষে আমেরিকার আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৬.২ ট্রিলিয়ন ডলার (জিডিপি-র ৮৯.৯%)। একইসঙ্গে সঞ্চয় হার মাত্র ৪.৩%, যা চীনের ৩১.৮%-এর ধারে কাছে নয়।
জেফারিজ বলেছে, “ট্রাম্পের বড় সমস্যা—চীন যেখানে সঞ্চয় করে, আমেরিকা সেখানে খরচ করে।” এই আর্থিক টালমাটাল অবস্থায় বিগ টেক সংস্থাগুলোর সামনে এখন একটাই প্রশ্ন—কোথায় গিয়ে থামবে ট্রাম্পের ট্যারিফ তাণ্ডব?