
স্পোর্টস ডেস্ক: সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়ই পোস্ট দেখা যাচ্ছে, ‘আমার কাছে ডার্বির চারটে টিকিট রয়েছে, কারও লাগলে ইনবক্স করুন’। যে বা যারা এই ধরনের পোস্ট করছে, তার ইনবক্স উপচে পড়ছে পাল্টা বার্তায়, ‘যত টাকা লাগবে দেব। কোথা থেকে কখন টিকিট নিতে হবে জানান’।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দী ক্লাবের সমর্থকদের বিক্ষোভ। তারা কেন পর্যাপ্ত টিকিট পাচ্ছে না, এই প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদ দুই ক্লাবের তাঁবুর সামনে। তাতেও সুরাহা হওয়ার আশা কম। কারণ, একটি টিকিটও না কি আর পড়ে নেই। সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে।
এমন অসংখ্য ছবি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে ফুটবল-মক্কার বিভিন্ন প্রান্তে। সব ওই ৯০ মিনিটের এক ফুটবল-যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। যা চিরকালীন, কালজয়ী। এ সব দেখে একটা জিনিসই বোঝা যাচ্ছে, রবিবার বিকেলে ভরে উঠবে যুবভারতীর গ্যালারি, উপছেও যেতে পারে। একদিকে ‘জয় মোহনবাগান’, অন্যদিকে ‘জয় ইস্টবেঙ্গল’ শব্দব্রহ্মে নিশ্চয়ই কেঁপে উঠবে রবিবাসরীয় কলকাতা।
এ তো গেল মাঠের বাইরের কথা। যা চিরকালই একই রকম। কিন্তু মাঠের ছবিটা একই রকম থাকে না। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায়। যেমন গত ৫৫ মাসে পাল্টে গিয়েছিল। এই সময়ে বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা প্রায় ভুলতে বসেছিলেন ডার্বির রণহুঙ্কার। টানা একতরফা ব্যর্থতার জ্বালায় ডার্বি থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করেছিলেন লাল-হলুদ জনতা। সবুজ-মেরুন সমর্থকদের কটাক্ষে জর্জরিত হয়ে নিজেদের ক্লাবকেই দোষারোপ করা শুরু করেছিলেন তাঁরা। গত ১২ অগাস্ট, দেশের স্বাধীনতা দিবসের তিন দিন আগেই যেন তাঁরা নতুন করে স্বাধীনতা ফিরে পান বহুকাঙ্খিত ডার্বি জিতে। ৫৫ মাস ধরে সহ্য করা যন্ত্রণার উপশম হয় যেন সে দিনই।
৬০ মিনিটের মাথায় অসাধারণ এক গোল করে দলকে বহু আকাঙ্খিত জয় এনে দেন ইস্টবেঙ্গলের নতুন ‘হিরো’, সুদূর তামিলনাড়ু থেকে এসে যিনি হয়ে ওঠেন লাল-হলুদ বাহিনীর নয়নের মণি। তিনি নন্দকুমার শেখর।গত জুনে যাঁকে তিন বছরের চুক্তি করে নিয়ে আসে কলকাতার ক্লাব।
সেই ডার্বির আগে ধারে ও ভারে এবং সাম্প্রতিক সাফল্যের বিচারে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে অনেকটাই এগিয়ে রেখেছিলেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু প্রাক্তন আইএসএল চ্যাম্পিয়ন কোচ কার্লস কুয়াদ্রাতের ইস্টবেঙ্গল সে দিন দেখিয়ে দেয়, বড় বড় নাম দলে থাকলেই সাফল্য আসে না। ফুটবলে পারফরম্যান্সই শেষ কথা বলে। সে দিনের পারফরম্যান্সেই চিরপ্রতিদ্বন্দীদের ছাপিয়ে গিয়ে মরশুমের প্রথম ডার্বি জিতে নেয় লাল-হলুদ বাহিনী।
রবিবার ডুরান্ড কাপের ফাইনালে সেই হারেরই বদলা নেওয়ার পালা মোহনবাগানের। ইস্টবেঙ্গলের কাছে হেরে যাদের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠাই অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, সেই সবুজ-মেরুন বাহিনী ডুরান্ড কাপের গ্রুপ পর্বের গণ্ডী পেরয় নিজেদের গোলসংখ্যা ও অন্য দলের সাফল্য-ব্যর্থতার ওপর নির্ভর করে।তখন অবশ্য এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে ওঠার চিন্তাও ছিল সবুজ-মেরুন শিবিরে।
কিন্তু এখন আর সে চিন্তা নেই। কারণ, এএফসি কাপের খেলা আবার সেই সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি। তাই ফেরান্দো-বাহিনীর ফোকাস আপাতত ডুরান্ডের ফাইনালেই। মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালেই তা বুঝিয়ে দেয় তারা। ৫৫ মাস পর যেমন ইস্টবেঙ্গলের কাছে হারে গঙ্গাপাড়ের ক্লাব, তেমনই এই প্রথম মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে জয় পায় তারা। সেমিফাইনালে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়েও জেতে। পরপর দুই ম্যাচে দুরন্ত জয় থেকে পাওয়া এই আত্মবিশ্বাসটাই রবিবার বদলা নিতে সাহায্য করবে তাদের?