
বিপ্লব দাশ : গোটা দেশ জুড়ে যেন চাপা বারুদের গন্ধ। চরম উত্তেজনা ভারত পাক সীমান্তে। চলছে দু পক্ষের গোলা বর্ষণ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। তার ফলে প্রবল চাপে ওই প্রতিবেশী দেশ। এবং প্রতিবারের মতো দুর্বলতা ঢাকতে এবারেও বালখিল্য আচরণ থেকে বেরোতে পারছে না পাকিস্তান। বিশেষ করে তার অস্তিত্ত্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষী পাক সেনাবাহিনী। সামরিক শক্তি তুলনা নাই বা করলাম, শুধু সিন্ধুর জল আটকে দিলেই যে দেশের সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী, তাদের মুখে যুদ্ধের হুঁকার খুবই হাস্যকর। তবুও গলা হাঁকাচ্ছে। যা বোঝার বুঝছে দু দেশের সাধারণ নাগরিক। কিন্তু পাক সেনাকে বোঝাবে কে ? তারা তো আর দেশের মানুষ নয়, দেশের মানুষকে চালিত করার মানুষ। এখানেই ভারতের একটা বড় কৌশল কাজ করছে। কারণ, পররাষ্ট্র নীতি অনুযায়ী ভারত কখনো আগে থেকে যুদ্ধে যাবে না। কিন্তু কোনো ভাবে পাকিস্তান যদি হামলা করে তাহলে প্রত্যাঘাত করতে নিশ্চয়ই নীতিতে বাধবে না। ভারত পাকিস্তানের সম্পর্কটা এখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আর দেরীটাও এজন্যই।
মক ড্রিলের আরেকটা সার্থকতা সামনে আসছে। তা হল সেনা ঘাঁটিগুলোর কিছুটা সংস্কার করে নেওয়ার সুযোগ। এখানেও একঢিলে সেই দুই পাখির গপ্প। এই সুযোগে ভারতীয় সেনাবাহিনী চিনে নিতে পারবে বিভিন্ন রাজ্যের সিভিল এরিয়া, নাগরিক সুরক্ষার জন্য সেনাবাহিনীতে যে সব ব্যবস্থা আছে তা একবার ঝেড়ে মুছে নেওয়া যাবে। যেমন, সাইরেন ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে কি না, সেনা যাতায়াতে সড়ক ব্যবস্থা ঠিক আছে কিনা, এমন কি যুদ্ধের সময় যে জনসংযোগও পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজে লাগে সেটাকেও ঝালিয়ে নেওয়া।
ফলে “ডাল মে কালা” কিছু নয়, ডালের ফোড়নটা ঠিকঠাক দিতেই এই ব্যবস্থা, এই মুহূর্তে এরচেয়ে জুতসই উপায় আর কী হতে পারে ! কারণ, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তোয়াক্কা করে না ভারত, কিন্তু কেন্দ্রের মাথা ব্যথা আছে তার দেশের মানুষদের নিয়ে। পহেলগাঁয়ে জঙ্গি তাণ্ডবের পর সারা দেশ জুড়ে প্রত্যাঘাতের যে রব উঠেছে, তাতে বিলম্বের কারণে এখন ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙছে। মানুষের এই আবেগ যাতে বিরুদ্ধে না চলে যায়, যুদ্ধের চেয়ে তা কম চ্যালেঞ্জের নয় ক্ষমতাসীন দলের কাছে। যে মক ড্রিল শুরু হচ্ছে, তা কি সেই অর্থে এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল নয় তো ! একদিকে পাকিস্তানকে দেখানো, ভারত যুদ্ধের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে দেশের মানুষ ভাববে যুদ্ধ এল বলে। এখানেই কিছুটা সময় পেয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র। আর আবেগ ভোঁতা করতে সময়ের জুড়ি কিছু হয় কি ?