
ওঙ্কার ডেস্ক : ইজ়রায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত এবার আরও রক্তক্ষয়ী ও কৌশলগতভাবে জটিল হয়ে উঠেছে। সোমবার ভোরে ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড কর্পসের নতুন হামলায় ইজ়রায়েলে কমপক্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত শতাধিক। শুক্রবার থেকে এই পর্যন্ত ইজ়রায়েলের মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০ জন, আহত ৪০০ জনের কাছাকাছি। আর ইরানে ইজ়রায়েলের পাল্টা হামলায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২২৪ জনের, ১২৭৭ জন চিকিৎসাধীন, যার ৯০ শতাংশই সাধারণ মানুষ এমনটাই দাবি করেছে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
সোমবারের হামলার পর IRGC-এর তরফে দাবি করা হয়েছে, তারা ইজ়রায়েলের উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ভেদ করার জন্য নতুন একটি কৌশল প্রয়োগ করেছে। রয়টার্সের পেশ করা প্রতিবেদনে বলা আছে, “এই কৌশল ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা অস্ত্রগুলিকে এমনভাবে বিভ্রান্ত করেছে, যে তারা নিজেরাই একে অপরকে নিশানা করতে শুরু করেছে।”
IRGC-র মুখপাত্র বলেন, “আমাদের নতুন অভিযানে যে কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে, তা শত্রুর প্রযুক্তি ও পশ্চিমী সমর্থন থাকা সত্ত্বেও সঠিক ভাবে নিদির্ষ্ট লক্ষ্যে আঘাত করেছে”। তেহরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে এই লড়াই থামবে না।
ইরানের হামলায় তেল আভিভের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরপর ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ে। ধসে পড়ে বাড়িঘর। মার্কিন দূতাবাসের কাছে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়েছে। জেরুসালেমেও গুরুতর হামলা হয়েছে বলে খবর। অন্যদিকে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। হাইফা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে আগুন ধরে এই হামলার জেরে। এই হাইফা বন্দরের পরিচালনার দায়িত্ব ভারতের আদানি গোষ্ঠীর হাতে।
সোমবার ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়াভ গালান্ত হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “তেহরানের বাসিন্দারা এবার বুঝবে, এই খেলার দাম কীভাবে চোকাতে হয়। আমাদের প্রতিটি শহরে যে ধ্বংস ডেকে এনেছে, তার জবাব তারা পাবে।”
শুক্রবার ইজ়রায়েল তেহরানের উপর আচমকা মিসাইল হামলা চালায়, যাতে নিহত হন শীর্ষ ইরানি সেনাকর্তারা ও পরমাণু বিজ্ঞানীর দল। তাতেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে ইরান। যদিও কাতার ও ওমান শান্তির জন্য মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছে, কিন্তু ইরান তা খারিজ করে জানিয়ে দেয়, “যতক্ষণ না প্রত্যাঘাত সম্পূর্ণ হয়, কোনও আলোচনায় বসা হবে না। প্রতিরোধ চলবেই।”
সোমবারের হামলার পর ইজ়রায়েল সরকারের তরফে নাগরিকদের স্পষ্ট নির্দেশ, নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তেল আভিভ, হাইফা, এবং জেরুসালেম জুড়ে। এই মুহূর্তে পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ থামার কোনও লক্ষণ নেই বলে মনে করছেন অনেকেই। ইজ়রায়েল এবং ইরান উভয়েই সংঘর্ষ থামানোর বদলে আরও বড় প্রতিশোধের হুমকি দিচ্ছে। এই যুদ্ধ শুধু দু’টি দেশের যুদ্ধ নয় পৃথিবীর বহু শক্তিশালী রাষ্ট্র, প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও রাজনীতি এখন এই যুদ্ধের ছায়ায়। আগামী দিনে এই সংঘর্ষ বিশ্ব রাজনীতিকে কী দিকে নিয়ে যায়, সেদিকে চোখ গোটা বিশ্বের।