
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা : পদাধিকার বলে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি হাঁকিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চ্যাটার্জী। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে মেইল করে এই তথ্য সমৃদ্ধ অভিযোগ জানিয়েছেন RSS ঘনিষ্ট আরেক বিজেপি নেতা অজয় মুখার্জী। তাঁর অভিযোগ, মাত্র দু’ বছরে তিনি দলের নাম ভাঙিয়ে নানান উপায়ে এই বিশাল অঙ্কের সম্পত্তি গড়েছেন। এবিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি জগন্নাথবাবু। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাননি দলের মুখপাত্র, সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যও। তবে এই নিয়ে রীতিমতো জল্পনা শুই হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে তার নিকটাত্মীয়দের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি গড়েছেন বঙ্গ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চ্যাটার্জী। এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে তদন্ত করার আর্জি জানিয়েছেন আরেক বিজেপি নেতা অজয় মুখার্জী। তাঁর অভিযোগ, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর মাত্র দু’ বছরের মধ্যে জগন্নাথ চ্যাটার্জী তাঁর নিকটাত্মীয়দের নামে প্রচুর পরিমাণে সম্পত্তি কিনেছেন। এইসব আত্মীয়দের মধ্যে রয়েছেন তাঁর বাবা, মা, ভাই এবং শ্যালিকা।
বিশ্ব বাংলা সরণির ৮ নম্বর তলায় অন্তত চার কোটি টাকা মূল্যের গ্যারেজ সহ একটি সুসজ্জিত অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। অজয় মুখার্জী জানিয়েছেন, জগন্নাথ কৌশলগতভাবে আইন এড়াতে নিজের নামে সম্পত্তি কেনেননি। পরিবর্তে, তিনি এই সম্পত্তিগুলি তার ৭০ বছর বয়সী মা, ৮০ বছর বয়সী বাবা, ৪২ বছর বয়সী ভাই এবং ৩৪ বছর বয়সী শ্যালিকা সহ বিভিন্ন পরিবারের সদস্যদের নামে রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন। এখানে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই ব্যক্তিরা গত তিন বছরের আগে কোনও সম্পত্তি লেনদেনে জড়িত ছিলেন না।
বিজেপিতে যোগদানের পর থেকে জানা গেছে যে, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার অনুমোদন ছাড়া রাজ্য বিজেপির ভেতরে কোনও চেক ইস্যু করা হয় না। অজয়বাবুর অভিযোগ, তিনি এই চেক অনুমোদনের জন্য একটি কমিশন নিয়ে থাকেন। তাছাড়া, নির্বাচনের সময় – তা পঞ্চায়েত, পৌরসভা বা উপ-নির্বাচনের জন্যই হোক, তিনি তার প্রভাবশালী কিছু জেলা সভাপতির সাথে যোগসাজশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। উদাহরণ হসেবে তিনি জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের পূর্ববর্তী লোকসভা নির্বাচনের জন্য নির্বাচন সহ-ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকাকালীন, তিনি কিছু জেলা সভাপতিদের যোগসাজোশে প্রচুর কাল্পনিক বুথ দেখিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ১০০টি ভুয়া বুথের জন্য তিনি প্রায় বিশ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কারণ দলের তরফে প্রতিটি বুথের জন্য বিশ হাজার টাকা ধার্য ছিল।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তহবিলের সম্ভাব্য অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে আশঙ্কা করা হয়েছিল, এইসব কাল্পনিক বুথের অতিরিক্ত খরচ বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হতে পারে। যুক্তি হিসেবে অজয়বাবু জানিয়েছিলেন, কলকাতা এলাকায় বিজেপি কর্মীদের একত্রিত করার ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তার ফলে জগন্নাথ দাবি করেছেন যে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় প্রায় ১,৫০০টি বুথ কমিটি রয়েছে। এটি আশঙ্কা জাগিয়ে তোলে উত্তর কলকাতা এবং দক্ষিণ কলকাতা এই দুটি নির্বাচনী এলাকার প্রায় দুই হাজার বুথ ভুয়া হতে পারে, যা মোট চার কোটি টাকার আত্মসাৎকে সহজতর করে।
তিনি জানিয়েছেন, জগন্নাথ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে অতীতের যোগাযোগের কারণে সরাসরি তাকে সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহ করছেন বলে জানা গেছে। কল সেন্টার, ডেটা সেন্টার এবং বুথ শশক্তিকরণ প্রধানের তত্ত্বাবধানে থাকাকালীন, তিনি বুথ স্তরের প্রাসঙ্গিক তথ্য সরাসরি তার সাথে ভাগ করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জগন্নাথ চ্যাটার্জীর এইসব দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন অজয় মুখার্জী। এইসব অভিযোগের ব্যাপারে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চ্যাটার্জীর অভিমত চাওয়া হলে, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।