
স্পোর্টস ডেস্ক :তাদের ঘরের মাঠে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসিকে হারিয়ে চলতি আইএসএলের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিল জামশেদপুর এফসি। শেষ চার থেকে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তারা মুখোমুখি হবে শিল্ডজয়ী মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের। রবিবার শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ইস্পাতনগরীর দল ২-০-য় হারায় নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-কে। যে দলকে লিগ পর্যায়ে দু’বারই হারিয়েছিল নর্থইস্ট, সেই জামশেদপুরের বিরুদ্ধে এ দিন হার এড়ানোর মরিয়া চেষ্টা করেও পারেনি তারা।এ দিন ম্যাচের ২৯তম মিনিটে স্টিফেন এজের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর কোচ খালিদ জামিলের দল জামশেদপুর এফসি মূলত নিজেদের দূর্গ রক্ষা করার দিকেই বেশি মন দেয়। প্রায় ৬৯ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রেখে, বারবার আক্রমণে উঠেও সফল হতে পারেনি তারা। সারা ম্যাচে ১৪টি শটের মধ্যে তিনটি লক্ষ্যে রেখেও জালে জড়াতে পারেনি হুয়ান পেদ্রো বেনালির দল। বারবার ব্যর্থ হয়ে হতাশ হয়ে ওঠা নর্থইস্টের বিরুদ্ধে জয় সুনিশ্চিত করেন হাভিয়ে হার্নান্ডেজ, ম্যাচের শেষে সংযুক্ত সময়ের নবম মিনিটে গোল করে। প্রতিপক্ষের ১৪টি শটের তুলনায় তাদের মোট শটের সংখ্যা ছিল সাতটি, যার মধ্যে চারটিই ছিল বার-পোস্টের মধ্যে।
ঘরের মাঠের সমর্থকদের সামনে গোল শোধ করতে মরিয়া হয়ে ওঠা নর্থইস্ট ইউনাইটেড ম্যাচের শেষ দিকে আক্রমণের ঝড় তুললেও শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষের দুর্ভেদ্য রক্ষণে বারবার আটকে পড়ে তারা। তাদের মরক্কান গোলমেশিন আলাদিন আজারেই, যিনি লিগ পর্বে জাশেদপুরের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচেই জোড়া গোল করেছিলেন, তাঁকে এ দিন পুরোপুরি আটকে রাখেন ইস্পাতনগরীর ডিফেন্ডাররা। বিশেষ করে বাংলার অভিজ্ঞ ফুটবলার প্রণয় হালদার এ দিন সেন্টার ব্যাক হিসেবে তাঁর নতুন ভূমিকা অসাধারণ ভাবে পালন করে ম্যাচের সেরার খেতাব জিতে নেন। দ্বিতীয়ার্ধে আলাদিন কিছু সুযোগ পেলেও রক্ষণের কড়া পাহাড়া এড়িয়ে সফল হতে পারেননি। ম্যাচের শেষ দিকে তাঁর একটি শট পোস্টে লেগেও ফিরে আসে।
সারা ম্যাচে জামশেদপুর এফসি যেখানে সাতটি গোলের সুযোগ তৈরি করে, সেখানে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এ দিন ১৫টি গোলের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। ম্যাচের শেষ দিকে উত্তেজনা এতটাই চরমে ওঠে যে জামশেদপুর এফসি-র মিডফিল্ডার মোবাশির রহমান ৮৮ মিনিটের মাথায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। অর্থাৎ পরবর্তী ম্যাচে তাঁকে মাঠে নামাতে পারবেন না খালিদ জামিল।
এ দিন প্রথমার্ধে আশুতোষ মেহতার লম্বা থ্রো-ইন থেকে বল পেয়ে বক্সের মধ্যে কঠিন কোণ থেকে শট নিয়ে প্রথমে জালে বল জড়ান জামশেদপুর এফসি-র দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডার স্টিফেন এজে। এই গোল খাওয়ার পর বহুবার আক্রমণে উঠেও সফল হয়নি নর্থইস্ট ইউনাইটেড, যাদের এই ম্যাচের ফেভারিটের তকমা দিয়েছিলেন অনেকেই।
ম্যাচের শেষ দিকে যখন খেলা মূলত জামশেদপুরের গোল এরিয়াতেই হচ্ছিল এবং ইস্পাতনগরীর দলের রক্ষণ যখন প্রবল চাপে, তখন, সংযুক্ত সময়ের নবম মিনিটে, এক প্রতি আক্রমণে উঠে বাইলাইনের সামনে থেকে বক্সের মাঝখানে থাকা হাভিয়ে হার্নান্ডেজকে প্রায় গোলের বল সাজিয়ে দেন ঋত্বিক দাস। ছ’গজের বক্সের সামনে থেকে বল গোলে ঠেলতে ভুল করেননি স্প্যানিশ তারকা।
প্রতিবেশী রাজ্যের দলের এই লড়াকু পারফরম্যান্স যে সেমিফাইনালে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে চিন্তায় রাখবে এই নিয়ে সন্দেহ নেই। লিগ পর্বে কলকাতায় সবুজ-মেরুন বাহিনীর কাছে তিন গোলে হারলেও ঘরের মাঠে তারা টানা দু’বারের শিল্ডজয়ীদের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করেছিল। আসন্ন দুই সেমিফাইনালে (৩ ও ৭ এপ্রিল) তারা সেই প্রতিরোধ ফের গড়ে তুলতে পারে কি না, সেটাই দেখার।