
নিজস্ব প্রতিনিধি
………………………………………..
…………………………………………
গত ১৬ ই জুন ২০২৪ রবিবার ক্যালকাটা রোয়িং ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ইলাস্ট্রেটর, পেইন্টার,প্রিন্টমেকার কুহু মিত্র র
একক একদিনের চিত্র প্রদর্শনী।
কুহু মিত্র একজন প্রতিভাবান, উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় চিত্রণ শিল্পী। মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি চিত্রকলায় পারদর্শিতা ও নিপুণতার পরিচয় দিয়েছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে কুহু জানালেন
মাত্র চার-পাঁচ বছর বয়সেই তিনি স্থির করেছিলেন অঙ্কনশিল্প নিয়েই পড়াশুনা ও কাজকর্ম করবেন। ছোটবেলা থেকেই বই পড়তে ভালবাসেন। শিশুদের বহু পিকচার বুক দেখে দেখে বাড়ে তাঁর কল্পনাশক্তি ও পৃথিবীর বহু দেশ, মানুষ ও রীতিনীতির সম্বন্ধ ধারণা। যেতেন বিভিন্ন আর্ট গ্যালারিতে বাবা মা’র সাথে ওই বয়স থেকেই, মুগ্ধ হতেন। বাবা মা’র ঐকান্তিক উৎসাহ তাঁকে চিত্রশিল্পী হয়ে উঠতে সাহায্য করে।
স্কুলে পড়া কালীন বিভিন্ন আর্ট কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করেন কুহু। তাঁর আঁকা ছবি “দ্য টেলিকিডস-এ” ছাপা হয়েছে কয়েকবারই। পেয়েছেন প্রথম পুরষ্কার পত্রিকার তরফ থেকে একবার। ‘ইনট্যাক’ পরিচালিত একটি সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায় স্কুলের তরফ থেকে অংশগ্রহণ করেছেন ও ” রিজিওনাল উইনার (২০১৭-২০১৮)” ট্রফিও পেয়েছেন।
কথা প্রসঙ্গে কুহু মিত্র বললেন
নার্সারি থেকে ক্লাস ১২ পর্যন্ত মর্ডান হাই স্কুল ফর গার্লস -এ পড়েছেন। ওখানকার টিচাররা অনেকেই ওঁকে চিত্রকলা নিয়ে পড়াশুনা করার জন্য উৎসাহ দিতেন, সাহায্য করতেন। স্কুল ম্যাগাজিনের ডিজাইন টিমের সদস্যা ছিলেন।
ছাত্রী অবস্থায় নানা রকমের মিডিয়াম নিয়ে কাজ করতেন কুহু, এস্কপেরিমেণ্ট করতেন। পেন এণ্ড ইঙ্ক, ওয়াটার কালার, এক্রিলিক, গ্রাফাইট, লিনোকাট প্রিণ্টিং, চারকোল ইত্যাদি। এই মুহূর্তে মূলতই ওয়াটার কালার, গুয়াস ও কালার পেনসিল ব্যবহার করছেন চিত্রণ শিল্পের জন্য। পাশাপাশি লিনো ও সিল্কস্ক্রিন প্রিণ্টিং ও করছেন।
আঁকায় আগ্রহ মূলতই শিশুদের ছবির বই দেখে দেখে হয়েছিল। অক্ষরজ্ঞান হওয়ার পরপরই ধরে গেল বই পড়ার নেশা। বইতে যাবতীয় ইলাস্ট্রেশন গুলো যেন পৃথিবীর জানলা খুলে দিয়েছিল। কল্পনার জগতও। বইগুলো ছিল বেশির ভাগই ইংলিশ। পাশাপাশি বাংলা বইগুলোয় ছিল চিত্রণের অভাব।
আবার অন্য দিকে ছবির বই-এর জগতে অনেক বৈচিত্র আসা সত্ত্বেও বিদেশে তো বটেই এমনকি এখানেও আধুনিক বাঙালির সংস্কৃতি বা রীতিনীতির প্রতিফলন ছোটদের বইতে নেই। কুহুর ইচ্ছা কম বয়সীদের জন্য ছবির বই তৈরি করার যাতে বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য নজর কাড়বে। এমন সব বই যেখানে আধুনিক বাঙালি মানুষই মূল চরিত্র হবে।সেই বই পৌঁছে দিতে হবে বিশ্ব দরবারে।
ইতিমধ্যে একটি ১৫ পাতার দুর্গা পুজোর উপর বই স্বহস্তে এঁকে, লিখে, সিল্কস্ক্রীন প্রিণ্টিং ও বাঁধাই করেছেন কুহু।
এক প্রশ্নের উত্তরে কুহু জানালেন
ক্লাস ১২ শেষ করেই ২০২১-এ কুহু মিত্র নিউ ইয়র্ক চলে যান। নিউ ইয়র্ক সিটিতে “স্কুল অফ ভিসুয়াল আর্টসে” ‘ব্যাচেলর অফ ফাইন আর্টস’ করছেন ‘ইলাস্ট্রেশনে’। কলেজের তরফ থেকে আংশিক স্কলারসিপও পেয়েছেন চার বছরের জন্য। তৃতীয় বর্ষ শেষ হয়েছে। চতুর্থ ও শেষ বছরের পাঠক্রম শুরু হবে সেপ্টেম্বরে।
ওখানকার শিক্ষা তাঁকে সমৃদ্ধ করেছে নানা ভাবে। বিখ্যাত পেশাদারি ইলাস্ট্রেটর দের শিক্ষক, শিক্ষিকা হিসাবে পাওয়া এক পরম প্রাপ্তি। নিউ ইয়র্ক শহরে আছে অসংখ্য মিউজিয়াম ও আর্ট গ্যালারি। আছে ‘মোমা’ ও ‘মেট’। পেয়েছেন চিত্রণ শিল্প শেখার অপূর্ব সুযোগ।
স্কুলে পড়ার সময়েই ২০১৮ -তে শুভানু মিত্র-র লেখা কবিতার বই, “সময়ের চোখে”-এর প্রচ্ছদ চিত্রণ করেছেন কুহু। এরপর ২০২০ সালে শ্রেয়া ঘোষের লেখা ছোট গল্প সংকলন, “ওদের গল্প”-র প্রচ্ছদও কুহুর করা।
এটি কুহুর প্রথম প্রদর্শনী। এবারের প্রদর্শনীতে বিভিন্ন বিষয়, মাধ্যম ও সাইজের ছবি আছে। অ্যাক্রিলিক, ওয়াটার কালার, গুয়াস, পেন এণ্ড ইঙ্ক, চারকোল, লিনোকাট, মিক্সড মিডিয়া প্রভৃতি থাকছে। তাঁর তৈরি তিনটি বইয়ের কপিও থাকছে। বইগুলির চিত্রণ, অলঙ্করণ, টাইপোগ্রাফি ও বাঁধাই সবটাই করেছেন নিজের হাতে।
কুহু তার ইচ্ছা এবং তার আগামী পরিকল্পনা সম্পর্কে জানালেন
” বাঙালির সংস্কৃতি ও আধুনিক চিন্তাধারাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেবার”। একজন চিত্রণ শিল্পী হিসেবে সমসাময়িক ও প্রগতিশীল ভাবনায় সমৃদ্ধ চিত্রগ্রন্থ প্রকাশ করতে চান। গতানুগতিক টপকে বাঙালির কৃষ্টি, ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে নতুন আঙ্গিকে পেশ করাই তাঁর স্বপ্ন।