
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়
এবার কি তাহলে ঘরে ফেরার গান? এবার। মানে এই লোকসভা নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। আর ‘ঘরে ফেরা’ মানে বাম ভোট ফের বামের ঘরে ফেরার কথা বোঝানো হচ্ছে। আর এই ঘরে ফেরার ভরসা তাই আশার আলো জোড়া ফুল শিবিরে। ২০১৯ এর নির্বাচনের পরপরই একটা কথা এই বাংলায় খুব প্রচলিত, বামের ভোট রামে। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক জনসভাতেও অভিযোগ তুলেছেন। তৃণমূলের সহজ হিসাব গত লোকসভা নির্বাচনে কার্যত বাম ভোটেই ঝুলি ভরিয়েছে পদ্ম শিবির। আর তাই অনেক টা হিসাব করেই বিজেপি র পাশাপাশি বামেদের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে ছে ন তৃণমূল নেত্রী। আর ঠিক তার ৫ বছর পর সেই লোকসভা তে ই দলের আসন বাড়াতে তৃণমূলের ভরসা বামেরা? অবাক হলেন তো? যে বামেদের বিরুদ্ধে লড়াই- আন্দোলন করে ক্ষমতায় এলেন মমতা, সেই তৃণমূল কেই কিনা বাচতে হচ্ছে লাল পতাকার হাত ধরে! আসলে ১৯ এর নির্বাচনে এই বাংলা থেকেই প্রায় ২ থেকে আসন প্রায় ১৮ তে বাড়িয়ে ফেলে পদ্ম শিবির। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই নির্বাচনে বামেদের একটা বড় শতাংশ ভোট ‘ ট্রান্সফার ‘ হয়েছে রামে।
আর এবার? বামেরা বারে বারে দাবি করছে, ২০১৯ এর ভুল আর নয়, এবার তাই একদিকে ভোটে জেতা অপরদিকে শতাংশ বৃদ্ধি লাল বাহিনীর টার্গেট। রাজনৈতিক মহলের মতে, খুব সহজ অঙ্ক, রামে চলে যাওয়া বাম ভোট যদি নিজেদের বাক্সে আনতে পারে সেলিম- সুজন- মীনাক্ষী- সৃজন- দীপ্ষিতা প্রতিকূরেরা, তাহলে ভোটার অঙ্কে সব থেকে বেশী লাভবান হবে তৃণমূল। একটু হিসাব ঝাঁলিয়ে নেওয়া যাক, গত লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্য থেকে ১৮ টি আসন পায় বিজেপি, প্রাপ্ত ভোট ২ কোটি ৩০ লক্ষ ২৮ হাজার ৫১৭ অর্থাৎ প্রায় ৪০.৭ শতাংশ ভোট। তৃণমূল পায় ২২ আসন, প্রাপ্ত ভোট ২ কোটি ৪৭ লক্ষ ৫৭ হাজার ৩৪৫ অর্থাৎ ৪৩. ৩ শতাংশ ভোট। অপরদিকে কংগ্রেস ৩২ লক্ষ ১০ হাজার ৪৯১ টি ভোট পায় অর্থাৎ শতাংশ হিসেবে ৫.৬৭ শতাংশ আর ৩৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ২৮৩ টি অর্থাৎ ৬. ৩৩ শতাংশ ভোট পেলেও একটি আসনও জিততে পারেনি বামেরা।
আর ২০১৪ সালের নির্বাচনে ২ কোটি ৩ লক্ষ ১৩ হাজার ২৮০ ভোট অর্থাৎ প্রায় ৩৯.৮ শতাংশ ভোট ও ৩৪ টি আসন পায় তৃণমূল। ৯.৭ শতাংশ ভোট এবং মোট ৪৯ লক্ষ ৪৬ হাজার ৫৮১ টি ভোট সহ মোট ৪ টি আসন পায় কংগ্রেস। ১ কোটি ১৭ লক্ষ ২০ হাজার ৯৯৭ টি ভোট ২ টি আসন এবং ২৩ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পায় বামেরা, আর ২ টি আসন সহ ৮৬ লক্ষ ৯১ হাজার ৭৬৫ টি অর্থাৎ ১৭ শতাংশ ভোট পায় বিজেপি। হিসাব করে দেখলে গত লোকসভাতে বামেদের ভোট কমেছে প্রায় ১৬. ৬৬ শতাংশ। আর কংগ্রেসের ৪.০৩ শতাংশ। বিজেপির ভোট বৃদ্ধি পেয়েছে ২২.৭০ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট গত লোকসভা নির্বাচনে এককথায় বামেদের একটা বড় অংশের ভোট ট্রান্সফার হয়ে যায় রামে। আর এবার কি সেই ভোট ফেরার পালা? আর তাতে লাভ কার? বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ দাসের বক্তব্য,” তৃণমূলের আসন বাড়বে কিনা তা নির্ভর করবে বাম- কংগ্রেসের উপর।
গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভোট শতাংশ বাড়লে ও আসন সংখ্যা কমে যায়, আর বিজেপির আসন সংখ্যার পাশাপাশি প্রায় ২৩% ভোট বৃদ্ধি পেয়েছে বিজেপির। আর ২০১৪ সালের নিরিখে বামেদের ভোট ১৭ শতাংশ ও কংগ্রেসের প্রায় ৪ শতাংশ অর্থাৎ মোট প্রায় ২১ শতাংশ ভোট কমে গত নির্বাচনে। যার মধ্যে বামেদের প্রায় ৮০ শতাংশই যায় বিজেপি, ও কংগ্রেসের ৭০ শতাংশ ভোট যায় তৃণমূলের বাক্সে, সেই নিরিখে কংগ্রেসের নয়, বিজেপিকে হারাতে বামেদের ভোট বৃদ্ধির দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে রাজ্যের শাসক দলকে। আর একটু ভেবে দেখলেই দেখা যাবে, লোকসভা নির্বাচনে আগে আগে বা ২১ এর বিধানসভার পর বাম কংগ্রেসের প্রতি আক্রমণের ঝাঝ অনেকটা কমিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই অঙ্ক বুঝতে পেরেই বারেবারে সিপিএমের কর্মী- সমার্থকদের কাছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপিতে ভোট দেওয়ার আবেদন করেন।” বিশ্বজিৎ দাসের আরও দাবী,” এবার প্রায় ৪-৫ % ভোট ঘরে ফেরাতে পারে বামেরা, আর তাই হলেই বদলে যেতে পারে সব হিসাব।” অর্থাৎ যতোই মঞ্চ থেকে বামেদের বিরুদ্ধে সুর চড়ান মমতা- অভিষেক, আসলে পদ্ম রুখতে লালই ভরসা।