
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়ঃ বামেদের সাথে আর কটা আসনে জোট হবে? আদৌ কি আর কোনও আসনে লড়বে কংগ্রেস? জট কেটেও যেন কাটছে না । লোকসভা নির্বাচনে দিন এগিয়ে আসছে কিন্তু এখনও স্পষ্ট নয় জোট। কংগ্রেস- সিপিএম রাজি থাকলেও গোটা রাজ্যে শূন্য থেকেও নীচে নেমে যাওয়া শরিক দের ‘জেদাজেদি’তে সিপিএম এখন সব থেকে বিপদে। ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’ অবস্থা। এর ফোন কংগ্রেসকেও তারা কোনও স্পষ্ট সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে প্রদেশ কংগ্রেস ও পড়েছে বিপাকে। কতগুলো আসনে সমঝোতা তা স্পষ্ট নয়, তবে মধ্যে সিপিএম শনিবারই আরও কয়েকটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। অপরদিকে কোচবিরাট আসনে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। যেই তাকে আসনের প্রার্থী দিয়েছে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে বাম শরিকদের সঙ্গে সিপিএমরই বোঝাপড়াটা স্পষ্ট নয়।
ফলে কংগ্রেসের সঙ্গেও জোট-পর্ব আদৌ কতোটা সহজ হবে তা নিয়ে বড় প্রশ্ন? দ্বন্দ্বতে প্রদেশ নেতৃত্বও। আর গোটা বিষয় নিয়ে আর কয়েক দিন অপেক্ষা করে তারপরই পরবর্তী পদক্ষেপ করবে প্রদেশ কংগ্রেস বলে খবর।
এই পরিস্থিতি হবে, তা আঁচ করে প্রথম থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট আলোচনা চেয়েছিল সিপিএম। কিন্তু গোড়ায় কংগ্রেস তৃণমূলের সঙ্গে জোটে আগ্রহী ছিল। ফলে সিপিএমের সঙ্গে তারা আলোচনা চায়নি। পরে পরিস্থিতি বদলানোর পরও এআইসিসি-সিপিএমের সঙ্গে ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ জোটে যেতে আগ্রহী ছিল না, এমনকী এখনও খুব একটা নয় বলে সূত্রের খবর। সেই কারণেই প্রার্থী বাছাই বা বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট নিয়ে কংগ্রেসের এত গড়িমসি বলে খবর।
ফলে দলে এই প্রশ্নও উঠেছিল যে, রাজ্যে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেস কেন জোট করছে? ইন্ডিয়া জোটে থেকেও রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট এড়িয়েছে তৃণমূল। প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী লাগাতার তৃণমূলকে আক্রমণ করছেন বলে অভিযোগ তুলে বাংলায় কংগ্রেসের হাত তৃণমূল ধরবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই কংগ্রেস হাইকমান্ড চাপে পড়ে যায়। তাদের বিভিন্ন জেলা নেতৃত্ব হাইকমান্ডকে যে যুক্তি দিয়েছে তাতে জানা গিয়েছে, জোট ছাড়া বাংলায় ন্যূনতম আসন প্রাপ্তিও অসম্ভব। তৃণমূলের সঙ্গে আসন রফা হলেই সব থেকে কার্যকরী জোট হত। তা যখন হল না, সিপিএমই সই।
সেই কারণেই কংগ্রেস নিরুপায় হয়েও সিপিএমের হাত ধরছে বলে এখনও পর্যন্ত খবর। তবে বামেদের সাথে আসন সমঝোতা রাজ্যের বেশির ভাগ জেলা সভাপতি থেকে শুরু করে সাধারন কংগ্রেস কর্মীরা চাইছেন না। এমনকী প্রদেশ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভও উগরে দিচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। স্বাভাবিক ভাবেই জোট হলেও আদৌ কংগ্রেস কর্মীরা কতোটা সিপিএম প্রার্থীদের প্রচারে নামবে সেটাই সব থেকে বড় জিজ্ঞাসা চিহ্ন?
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সাল থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে বামফ্রন্ট। তবে সেই জোট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ফ্রন্ট শরিকদের মধ্যে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সিপিএমকে। সিপিএম বা সিপিআই চাইলেও আরএসপি সেভাবে খোলাখুলি কংগ্রেসের সমর্থনের কথা বলেনি। একই অবস্থানে ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকও। শেষে নিজেদের কংগ্রেস-বিরোধী অবস্থান পরিষ্কার করে দেয় ফরওয়ার্ড ব্লক। এই পরিস্থিতিতে বামফ্রন্ট শরিকদের মধ্যে অশান্তি এদিনও বজায় রয়েছে। এর মধ্যেই এআইসিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রার্থীতালিকা নিয়ে এত গড়িমসি হওয়ার মূল কারণ কংগ্রেস হাইকমান্ডের তৃণমূল-প্রীতি। তাহলে কেন সিপিএমের সঙ্গে যাচ্ছে কংগ্রেস? ওই রাজ্যে নেতার কথায়, “কারও সঙ্গে জোট না হলে কংগ্রেসের এই মুহূর্তে বাংলায় লড়াই করা কঠিন। আর সিপিএমের সঙ্গে একটা স্বাভাবিক জোট আমাদের রয়েছে। ফলে নিরুপায় হয়েই হাইকমান্ড সিপিএমের সঙ্গে জোটে যাচ্ছে।”
শেষ পর্যন্ত খবর, নতুন করে বদল না হলে দার্জিলিং আসনে বিনয় তামাংকেই প্রার্থী করছে কংগ্রেস। সেক্ষেত্রে হামরো পার্টির অজয় এডওয়ার্ডের তাঁকে সমর্থন জানানোর কথা। সিপিএম আবার সেখানে নিরপেক্ষ প্রার্থী হিসাবে অজয়কেই চাইছে। মোট ১২টি আসন কংগ্রেসকে ছাড়ার কথা সিপিএমের। ফলে জট থাকছে আরও ৩টি আসন নিয়ে। বসিরহাট আসনটি সিপিআই ছাড়লে সেখানে প্রার্থী দেবে সিপিএম। সেক্ষেত্রে বনগাঁ ছাড়া হবে কংগ্রেসকে। আবার বসিরহাট সিপিএম না পেলে বনগাঁ নিজেরা রেখে বারাকপুর কংগ্রেসকে ছাড়তে পারে সিপিএম। এছাড়া আরও দুটি আসন কংগ্রেসকে ছাড়া হতে পারে। সবটা নিয়েই এখনও দর কষাকষি চলছে।