
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ঃ টাকা নিয়ে প্রশ্ন! অভিযোগ ওঠার পর অত্যন্ত দ্রুত সেরে ফেলা হয়েছে বহিষ্কারের পর্ব। শুক্রবারই তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে লোকসভায় ধ্বনি ভোটে বহিষ্কার করা হয় লোকসভা থেকে। কিন্তু “টাকা নিয়ে প্রশ্ন” ইস্যু তে যতটা তৎপরতা দেখিয়েছে, “নারদা ঘুষ কাণ্ডে” ততটা অনীহা দেখিয়েছে। অভিযোগ, লোকসভার এথিক্স কমিটিই সিদ্ধান্ত নেওয়া তো দূর, নারদা ঘুষ কাণ্ডের অভিযোগ বিবেচনা করে উঠতে পারেনি।
২০১৬’তে বঙ্গের বিধানসভা ভোটের কিছু আগে প্রকাশ্যে আসে নারদা ঘুষ কাণ্ডে। নারদার গোপন ক্যামেরায় দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের নেতা মন্ত্রী সাংসদদের হাত পেতে ঘুষ নিতে। মন্ত্রীদের একজন এখন দল বদলে চলে গিয়েছেন বিজেপি’তে। তিনি বর্তমানে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দল নেতা। গোপন ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল, ৬ তৃণমূল সাংসদের অর্থ নেবার ছবি। একটি ভুয়ো কোম্পানির নাম করে সেই টাকা দেওয়া হয়েছিল ‘উৎকোচ’ হিসাবে। বিনিময়ে পশ্চিমবঙ্গে সুবিধা পাইয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নেতা মন্ত্রীরা।
নারদার গোপন ভিডিওতে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল, লোকসভার সদস্য সৌগত রায়, কাকলি ঘোষদস্তিদার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুলতান আহমেদ, শুভেন্দু অধিকারী। যদিও সুলতান আহমেদ বর্তমানে প্রয়াত। শুভেন্দু বর্তমানে বিজেপি বিধায়ক, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। বিরুদ্ধে বেআইনি অর্থ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছিল সে সময়ের রাজ্যসভার সদস্য মুকুল রায়ের বিরুদ্ধেও। তিনি বর্তমানে খাতায় কলমে বিজেপি বিধায়ক। যদিও মুকুলকে ভিডিওতে টাকা নিতে দেখা যায়নি।
লোকসভার ইতিহাস বলছে, ২০১৬’তে লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিজেপি’র। এথিকস কমিটির কাছে নারদ স্টিং অপারেশনের ঘটনার অভিযোগ এসেছিল। এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন লালকৃষ্ণ আদবানি। লোকসভায় সিদ্ধান্ত হয় এথিকস কমিটি খতিয়ে দেখবে নারদা ঘুষ কাণ্ডের অভিযোগ। কিন্তু আদবানি কোনও সভাই ডাকেননি এথিক্স কমিটির। এই বিষয়ে কমিটিতে কোনও আলোচনাই করেননি। সেই বছরেই লোকসভায় পরপর দু’টি অধিবেশনে নারদা প্রসঙ্গ ওঠে। টেলিভিশন ক্যামেরায় সাংসদদের টাকা নিতে দেখা যাওয়া সত্ত্বেও এথিকস কমিটির কোনও হেলদোল নেই কেন! সংসদে এই প্রশ্ন তুলেছিল সিপিআইএম, কংগ্রেস সহ বেশ কয়েকটি দল। কিন্তু কোনও উত্তর মেলেনি।
২০১৬ এর সেপ্টেম্বরে এথিক্স কমিটি পুনর্গঠিত হয়। লালকৃষ্ণ আদবানিকে পুনরায় চেয়ারম্যান করে এথিক্স কমিটি তৈরি হয়। ২০১৮তে আবার, দু’বছর পরে সেই আদবানিকেই শীর্ষে রেখে এথিকস কমিটি পুনর্গঠন করা হয়ে। কিন্তু তৃণমূল সাংসদদের বিরুদ্ধে অনৈতিকতার অভিযোগ সম্পর্কে কোনও উচ্চবাচ্যই করতে দেননি বিজেপি।
তারপর গঙ্গা যমুনা দিয়ে বহু জল বয়ে গিয়েছে। কিন্তু নারদা কান্ড নিয়ে এথিক্স কমিটি কোন বাক্যব্যয় করেনি। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে মহুয়া মৈত্রের বেলায় তৎপরতা কেন হল এথিক্স কমিটি! মহুয়ার টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। মহুয়ার বিরুদ্ধে প্রমাণিত একমাত্র অভিযোগ, সাংসদের ই-মেলের পাসওয়ার্ড ব্যবসায়ী হিরানন্দানিকে দেওয়া। মহুয়া মৈত্র নিজেই তা স্বীকার করেছেন। নারদের বেলায় সরাসরি টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল, কিন্তু মহুয়ার তেমন কিছু দেখা যায়নি। অভিযোগ ওঠার পর অত্যন্ত দ্রুত সেরে ফেলা হল বহিষ্কারের পর্ব। কিন্তু কেনও!
এক অংশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলেছে এর কারণ কী! তাঁদের মতে মহুয়া মৈত্র প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং আদানি গোষ্ঠীর যোগাযোগ নিয়ে।