
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়ঃ শেষ পর্যন্ত মাঠে নামতেই হলো নেত্রীকে। কার্যত সেই আগের ফর্মুলাতে ফিরে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝের বেশ কয়েকটি মাস, প্রশাসনিক ভাবে সক্রিয় থাকলেও দলীয় কাজ থেকে যেন কিছুটা ‘নির্লিপ্ত’ ছিলেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী।
লাটাই কিছুটা হলেও গিয়েছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর হাতে। সূত্রের খবর, তাতে খুব একটা স্বস্তি মিছিল না। যে স্টাইলে এতদিন নিজের হাতে সংগঠন সামলেছেন মমতা, রাশ বদলের ইঙ্গিতে তাতে কিছুটা হলেও ছেদ পড়ছিল, নবজোয়ার যাত্রা থেকে হঠাৎ করেই ‘নতুন তৃণমূল’ নামক একটা ‘রুমাল থেকে বিড়াল মার্কা’ তত্ত্ব সামনে উঠে আসে সাগরদীঘি’র কংগ্রেস বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস কে তৃণমূল এ যোগদান করানো থেকে ‘নবজোয়ার যাত্রা’র নির্বাচনে ঝামেলা থেকে শুরু করে রক্তাক্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন, সব নিয়ে কিছুটা হলেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, রাজনৈতিক মহলের মতে, না চাইতেও পিসি-ভাইপো’র মধ্যেই একটা ‘বর্ডার লাইন’ তৈরী হয়েছে, আর সেটা যে জোড়ালো ভাবেই হচ্ছে তার ইঙ্গিত মিলেছে নেতাজী ইন্ডোর এ সাংগঠনিক বৈঠকে।
গোটা স্টেডিয়াম জুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি থাকলেও কেন নেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যাযের ছবি? তা নিয়ে সরাসরি মিডিয়ার সামনে প্রশ্ন তোলেন কুনাল ঘোষ। দলে যিনি অভিষেকের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এক কথায় জেলায় জেলায় নিজের নব্য তৃণমূলিদের গুরুদায়িত্বে বসিয়ে একটা পাল্টা টিম সাজাছেন অভিষেক।
আর এতেই ক্ষোভ বাড়ছে দলের অন্দরে। বিশেষ করে পুরনো তৃণমূলি বা যারা দলে আসলে মমতাপন্থী, বয়স্ক তাঁরা কার্যত বিদ্রোহের অবস্থায়। কারণ সূত্রে তাঁরা নিশ্চিত, অভিষেক সম্পূর্ণ দায়িত্বে থাকলে তাঁদের রাজনৈতিক কেরিয়ারে ফুলস্টপ পরে যাবে। একটু খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ এই তথাকথিত মমতাপন্থীদের পদ না আঁকড়ে রেখে নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন। বাগডগরা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কুনালকে ঢালাও সমর্থন করেন অভিষেক। অবস্থা এমন অভিষেক এর হাতে যদি গোটা দলের হাত বদল হয়, তাহলে গৃহযুদ্ধের মুখে পড়তে হবে নেতৃত্বকে। পূর্ব মেদিনীপুরের বিধায়ক, ৩ বারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, যাঁকে মন্ত্রী থেকে সরিয়ে দলের জেলা সভাপতি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি তাকে সেই পদ থেকে সরিয়ে অভিষেক ঘনিষ্ঠ একজনকে সেই পদে বসানো হয়, তার আক্ষেপ, ” দলের জন্যে এতো কিছু করেও এই প্রতিদান পেতে হচ্ছে, দল এখন এমন একজনের হাতে , দু: সময়ে তিনি বাড়ির উঠোনে খেলে বেড়াতেন, প্রতিদিন আমার মতো যারা শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে দল করি, সেই হঠাৎ হওয়া নেতার কাছে তাঁদের এভাবেই অপমান হতে হচ্ছে।” আবার উত্তরবঙ্গের এক প্রাক্তন বিধায়ক, প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ নেতা বর্তমানে একটি উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান এর বক্তব্য,” আমাদের রাজনীতির বয়সের প্রায় কাছাকাছি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর বয়স। তাই রাজনীতি ওর থেকে শিখব না। অপেক্ষায় আছি এখনও খেলা ঘুরিয়ে দিতে জানি।” কিন্ত ওই যে ভোট বড় বালাই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূল নিজেও এখন বুঝতে পারছে, ভাইপো নয় দলের অক্সিজেন আসলে পিসি। এমনকী তৃণমূল সূত্রেরই খবর, বর্তমান বিধায়ক বা মন্ত্রী থাকা ‘দিদি’ ঘনিষ্ঠদের ২০২৬ শের বিধানসভা ভোটে টিকিট না দেওয়ার সব রাস্তাই প্রায় পাকা করে রেখেছেন অভিষেক। আর তা আচ পেয়েই প্রায় ৯০ এর মতো বিধায়ক গোপনে যোগাযোগ বেড়াচ্ছে শুভেন্দুর সাথে। আর মনে মনে বলছে ‘খেলা হবে।’ তবে অভিষেককে সামনে রেখে ২৪ এর লোকসভা বা ২৬ এর বিধানসভা লড়াই করলে ‘ ফল ভুগতে হবে। ‘ আর তাই শেষমেষ দলের দায়িত্ব নিতেই হলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে l উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা,” লোকসভা নির্বাচনের আগে ২৫ জানুয়ারির পর দলের সংগঠনে জেলা থেকে শুরু করে ব্লক স্তর পর্যন্ত বদল করা হবে।” তৃণমূলের একাংশের মতে এই রদবদলে বাদ পড়তে পারেন অভিষেক এর কাছ থেকে দায়িত্ব পাওয়া একাধিক নেতা।
আর তারপর থেকেই রাজনৈতিক মহলে ঘোরাফেরা করছে ‘ তাহলে কি আর অভিষেকে ভরসা নেই মমতার?” আর তাই কি শেষ পর্যন্ত দল বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত রদ বদলের ইঙ্গিত দিচ্ছেন মমতা?