
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়
সংসার সুখী হয় রমণীর গুনে…..। এই প্রবাদ নতুন কিছু নয়, এই প্রবাদ টা ভোট রাজনীতির ক্ষেত্রে অনেকটা যেন বদলে গিয়েছে রাজনীতিতে। এতদিন সংসার সুখী রাখার বড় দায়িত্ব ছিল মহিলাদের হাতে। তবে এখন ভোটে জেতানোর গুরু দায়িত্বও কিন্তু অনেকটাই সেই মহিলার হাতেই। বিশেষ করে শাসক দল, তৃণমূল এর নির্বাচনে জেতার চাবিকাঠির সিংহভাগই সেই ‘লক্ষী’রা।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১০০০ পুরুষ ভোটার আর ৯৬৮ জন মহিলার ভোটার এই মুহূর্তে ভোট দেয় রাজ্যে। মোট ৩ কোটি ৮৫ লক্ষ পুরুষ ভোটার আর মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৩ কোটি ৭৩ হাজারের মতো। অর্থাৎ শেষ লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় ৯.৮% মহিলা ভোটারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রানাঘাট, বর্ধমান-পূর্ব, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ, কৃষ্ণনগর, বোলপুর, বিষ্ণুপুর, ঝাড়গ্রাম, কাঁথি, তমলুক, ঘাটাল, এই আসন গুলি তে মহিলাদের ভোট দেওয়ার সংখ্যা বা প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকী প্রথম দফায় হয়ে যাওয়া নির্বাচনে কোচ বিহার কেন্দ্রে ৪৯.২% আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে ৪৮% ও জলপাইগুড়ি তে ৪৯% মহিলা ভোটের পরিমাণ। এতো হিসাব নিকাশ করার কারণ একটাই, যতো বেশি মহিলা ভোট বৃদ্ধি পাবে তাতো লাভ তৃণমূলের। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ শাশ্বতি ঘোষের মতে, ” একটা কথা বাস্তব, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে মহিলারা অনেকটাই আর্থ সামাজিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন বাজারে মহিলাদের অংশগ্রহণ আরো বেড়েছে আর এটাই তৃণমূলের পাশে মহিলাদের থাকার অন্যতম কারণ।”
বিশিষ্ট সমাজকর্মী বোলান গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে,” বেশ কয়েক দশক আগে পরিবারের কর্তা নির্ধারিত করে দিতেন সেই পরিবারের মহিলারারা কোথায় ভোট দেবেন। কিন্ত মহিলাদের জন্যে সরকারের একাধিক প্রকল্প এখন সেই ধারনা বদলে দিয়েছে মহিলারা এখন অনেক স্বাবলম্বী, গ্রামের দিকে এখন মহিলাদের আর স্বামীর কাছে ছেলের কাছে বা বাবার কাছে হাত পাততে হয় না, তৃণমূলের মহিলাদের কথা মাথায় রেখে চলা রাজনীতি বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে মহিলা ভোট নিজেদের দিকে টানতে।”
অপরদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ দাসের ব্যখ্যা, ” শুধু মাত্র বাংলা নয়, গোটা দেশে এখন মহিলা ভোট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, দিল্লীর আপ সরকার ক্ষমতায় আসার পিছনে যেমন মহিলাদের বিনামূল্যে বাস ভ্রমণ বা মধ্যপ্রদেশে ‘লাডলি-বহেনা’ থেকে বাংলায় লক্ষীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, এমনকী স্বাস্থ্যসাথীতে বাড়ির কর্তা হিসাবে মহিলাদের নাম রাখা একদিকে আত্মমর্যাদা বাড়িয়েছে অপরদিকে আর্থিক এবং সামাজিকভাবে গুরুত্ব বাড়িয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মহিলা ভোটকে আলাদাভাবে টার্গেট করে ৪৪ শতাংশ আর্থিক অনুদান শুধুমাত্র মহিলাদের প্রকল্প গুলোর জন্যই নেওয়া হচ্ছে। তার ডিভিডেন্টতো শাসক দল পাবেই।” বিশ্বজিতের মতে দেখুন যত বেশি মহিলা ভোটের হার বাড়বে ততই হাসি চওড়া হবে শাসক দলের।” এমনকী রাজনৈতিক মহলের মতে ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের অন্যতম বড় ফ্যাক্টর এই মহিলা ভোট। অর্থাৎ এ কথা বাস্তব বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে পুরুষদের থেকে তৃণমূলের ভোট বাক্স উপচে দিয়েছেন মহিলারাই । আর এই অঙ্ক মাথায় রেখেই তৃণমূলের এর হাতে থাকা মহিলা ভোটে থাবা বসাতে উঠেপড়ে লেগেছে বাম কংগ্রেস বিজেপিও।