
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়
সব ভালোই চলছিল। তবে তাল কাটলো বুধে। নিজের পরিবারের বিরুদ্ধেই মারাত্মক অভিযোগ তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু অভিযোগ নয়, উত্তরকন্যা থেকে কার্যত কঠিন সিদ্ধান্ত ও নিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। লোকসভা নির্বাচন সামনে। ব্রিগেড থেকে রাজ্যে ৪২ আসনে প্রার্থী ঘোষনা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়া লোকসভা আসনে ফের প্রার্থী করেন
প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায়কে, আর তাতেই যেন আগুনে ঘি পড়ে। রীতিমত দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর তার পরই কার্যত নিজের ভাইকে লোভী এবং কার্যত অসৎ বলে তোপ দাগলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার উত্তরকন্যা থেকে জানিয়ে দিলেন বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে তাঁর ও তাঁর পরিবারের আর কোনো যোগাযোগ নেই বলেও স্পষ্ট করে দেন তিনি। এমনকী “লোভীদের পছন্দ করিনা।” বলেও মন্তব্য মমতার।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, “আমি যেদিন থেকে পার্টি করি, কোটি কোটি মানুষের সাথে কাজ করি। আমার পরিবার বলে কিছু নেই। আমার পরিবার মানুষের পরিবার। মা-মাটি-মানুষের পরিবার। আর যদি রক্তের পরিবার ধরেন তাহলে প্রায় ৩২ জন সদস্য। আমাদের কেউ এরকম নয়। এটাতে সবাই খুব ক্ষুব্ধ। আমি সরাসরি বলছি বড় হলে অনেকের লোভ বেশি বেড়ে যায়। আমার পরিবারের ও কোনও সদস্য বলে মনে করি না। আজ থেকে কোনও সম্পর্ক নেই। ভাই বলে কেউ পরিচয় দেবেন না। কোনও সম্পর্ক নেই। পরিবারের সঙ্গে জড়াবেন না। দল যাঁকে প্রার্থী করেছেন, সেই প্রার্থী। যে ভদ্রলোকের নাম আপনারা বলছেন তাঁর অনেক কাজকর্ম আমার অনেকদিন ধরে পছন্দ নয়। তার কারণ আমি অন্যায় সহ্য করি না। সুতরাং তর্ক বিতর্কের কোনও ব্যাপার নেই। যে যেখানে খুশি যেতে পারেন। আমি পরিবারতন্ত্র করি না। আমি মানুষতন্ত্র করি। আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল ভুলে যান। আজ থেকে কোনও সম্পর্ক নেই। ” তাহলে কি খোদ নেত্রীর ঘরেই থাবা বসিয়েছে পদ্ম শিবির? রাজনৈতিক মহলের মতে, বড় কোন আশঙ্কা থেকে নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটু যদি পিছিয়ে যাই,বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছিলেন,খোদ তৃণমূল নেত্রী ঘর তিনি ভাঙবেন। বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ দাসের বক্তব্য,” নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে এই ধরনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত আশঙ্কা থেকে কার্যত বাধ্য হয়েই করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনা একটা জিনিস প্রমাণ করছে, এতদিন যা অনেক ক্ষেত্রে দলীয় নেতা- কর্মীরাদের মধ্যে ছিল, এবার খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের ঘরে সেই বিদ্রোহ দেখা দিচ্ছে। যেটাকে এত হালকা ভাবে নিলে হবে না। ” একটু বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে। এই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায় এর বিরুদ্ধে একাধিক আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসছিল, এর পাশাপাশি, কালীঘাট থেকে হাওড়াতে নিজের মতো করে সংগঠন সাজা ছিলেন বাবুন বন্দোপাধ্যায। যদিও শেষ পর্যন্ত টিকিট না পাওয়ায় দলের বিরুদ্ধে জনগর্জন সভার পর থেকেই কার্যত দলের বিরুদ্ধে সরব হন বাবুন। এমনকী সূত্রের খবর,
ইতিমধ্যেই শুভেন্দু অধিকারীর সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন তিনি। এমনকী একাংশের বক্তব্য, এই হাওড়া থেকে প্রয়োজনে নির্দল হিসাবে ও দাঁড়াতে পারেন তিনি। বিশ্বজিৎ দাস এর মতে, ” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু শুধু মুখ্যমন্ত্রী নন। দলের সুপ্রিমো ও সেই ক্ষেত্রে খোদ তাঁর পরিবারের সদস্যরই এই ভাবে তাঁর সিদ্ধান্তের প্রকাশ্যে বিরোধিতা রীতিমত আশঙ্কার। এর ফলে একদিকে যেমন প্রমাণিত হবে নিজের বাড়িতেই বা সংসারে কার্যt কর্তৃত্বই নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তৃণমূল নেত্রীর ভাই এই ধরনের বিদ্রোহ ঘোষণা করছেন সেক্ষেত্রে জেলায় জেলায় প্রার্থী পছন্দ না হওয় ফলে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীরা আরও বেশি উৎসাহিত হবে যা আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তৃণমূলই ।”
ইতিমধ্যেই বিজেপি সহ একাধিক বিরোধী দলের অভিযোগের আঙুল খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে। শুভেন্দু অধিকারী, অধীর চৌধুরী, মহম্মদ সেলিমরা একাধিকবার আর্থিক দুর্নীতি তে নিশানা করেছেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারকে । রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশের মতে, এদিন কার্যত সেই দুর্নীতির অভিযোগকেই সিলমোহর দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্বজিৎ দাসের মতে, ”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি বক্তব্য একটু ভালো করে দেখুন। ১। বড় হলে অনেকের লোভ বেশি বেড়ে যায়।
2। যে ভদ্রলোক এর নাম বলছেন তাঁর অনেক কাজকর্ম আনার অনেকদিন ধরে পছন্দ নয়। এই দুটি মন্তব্য প্রমাণ করছেন বিরোধী রা দুর্নীতি নিয়ে পরিবারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছে তা অনেক টাই সঠিক। এবং এটাও প্রমাণিত পরিবারের কেউ কেউ দুর্নীতি তে জড়িত থাকলেও তা জানা সত্ত্বেও চুপ ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা ভোটের আগে বিরোধী lদের বড় ইস্যু হয়ে গেলো। ” পাশাপাশি তাঁর আরও ব্যখ্যা, ” তিনি দুর্নীতি নিয়ে কাউকে রেয়াত করেন না, এটা একদিকে যেমন বোঝালেন,এর পাশাপাশি একটা বড় বিপদ ও ডেকে নিয়ে এলেন।” কি সেটা? বিশ্বজিৎ এর ব্যখ্যা, ” এই মুহূর্তে বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায় যদি সত্যি ভোটের ময়দানে নেমে বা সরাসরি বিরোধী রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে পরিবারিক দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন সেক্ষেত্রে সেটা চূড়ান্ত ক্ষতিকারক হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইমেজ এর জন্যে।”
রাজনৈতিক মহলের মতে, নিজের ভাইকে কার্যত সম্পর্কহীন করতে গিয়ে ঘরের ভিতরের বিদ্রোহকে প্রকাশ্যে নিয়ে এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে যেমন বিরোধী দলনেতার কথা মতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরেই ভাঙন ধরানো গেল, অপরদিকে বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাজে লাগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের দুর্নীতির ইস্যু আরও অক্সিজেন পেয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত কি তাহলে ‘ দুধ কলা দিয়ে পোষা কালসাপ’ হলেন বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়? প্রশ্ন থেকে গেলো