
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়ঃ এতদিন রাজনীতিতে খুব সহজ কথা ছিল ‘পরিবারবাদ।’ যার মূল টার্গেট আবশ্যই গান্ধী পরিবার। নেহেরু-ইন্দিরা- রাজীব- সোনিয়া-রাহুল- প্রিয়াঙ্কা। তবে শুধুমাত্র কংগ্রেস এই নয় বর্তমান শাসক বিজেপিতেও কিন্তু একই ভাবে উঠে এসেছে পরিবার বাদ। তবে গোটাটাই আটকে বাবা- ছেলে- মা -মেয়ে।
কিন্তু এর বাইরেও যে পরিবার বাদ হতে পারে তার হাতে গরম উদাহরণ পিসি কালচার অর্থাৎ পিসির হাতে ধরে রাজনীতিতে ভাইপোর উত্থানের ‘কালচার’। এর আগে রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ এর রাজনীতিতে পিসি-ভাইপো র রম রমা দেখা গেছিল তবে তাদের রাজনীতির আদর্শ ছিল আলাদা পিসি বসুন্ধরা রাজে সিনধিয়া ছিলেন পদ্ম শিবিরে আর ভাইপো জ্যোতিরাদিত হাত শিবিরে ( তবে এখন দুজনেই পদ্ম ফুলে) ।
তাই স্বাভাবিকভাবেই সেখানে ঠিক পিসির হাতে ভাইপোর উত্থান বলা যাবে না। রাজনীতিতে পাকাপাকিভাবে পিসির হাতে ভাইপোর সিংহাসন লাভ এর শুরু এই বঙ্গ থেকে, পাঠকরা বুঝতেই পারছেন ঠিক কার কথা বলছি। ঠিক ধরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কথা। তবে এবার ‘দিদি’র দেখানো পথেই এবার পা বাড়ালেন ‘বহেনজী’ । মানে মায়াবতি, বিএসপি সুপ্রিম। দলিতদের স্বঘোষিত ‘মসিহা’।
দিদির মতো নিজের ভাইপো র হাতে রাজ্য পা ট তুলে দেওয়ার রাস্তা পরিষ্কার রাখলেন তিনি। এমনকী ভাইপোর সিংহাসন অভিষেকে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এমন নেতৃত্বকে সাসপেন্ড করতে ও পিছপা হলেন না পিসি। এ যেন এক নতুন ‘পরিবারবাদ’। তবে ২৮ বছর বয়সী আকাশের রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছিল ছয় বছর আগে মাত্র ২২ বছর বয়সে। সদ্য লন্ডন থেকে এমবিএ পাশ করে আসা আকাশকে সেদিন দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে মায়াবতী বলেছিলেন, এখন থেকে আকাশ সক্রিয়ভাবে বিসপির কাজকর্ম দেখবে। তারপর ধীর গতিতে ক্রমশ উত্তান হয়েছে আকাশের। এবার চূড়ান্ত ঘোষণা হলো। অর্থাৎ আগামী লোকসভা নির্বাচন আকাশের নেতৃত্বে লড়বে বিসপি।
একসময় উত্তরপ্রদেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন মায়াবতী। একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তার লড়াই ছিল মূলত মুলায়মের সঙ্গে। পরে মুলায়ম দিল্লির রাজনীতিতে সরে গিয়ে জায়গা করে দেন ছেলে আখিলেশকে। সেই সময় বিজেপি সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে উত্তরপ্রদেশ দখলের অভিযানে নামে। সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংক কব্জা করে রাখা এসপিকে কোণঠাসা করতে গিয়ে সমস্ত হিন্দু ভোটকে নিজেদের কব্জায় নিতে রণকৌশল নির্মাণ করে বিজেপি। এই পথে প্রধান অন্তরায় হন মায়াবতী।
তার হাতে তখন একচেটিয়া দলিত ভোট। মায়াবতীকে কোণঠাসা করতে দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে গেরুয়া শিবির। ক্ষমতায় থাকাকালীন আকন্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে গিয়েছিলেন মায়াবতী। কংগ্রেস আমলে তিনি নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও, বিজেপি এই ইস্যুতেই পেড়ে ফেলে প্রবল পরাক্রমশালী মায়াবতীকে। হিন্দু ভোট একজায়গায় এনে সমাজবাদী পার্টিকে ক্ষমতা থেকে ছুড়ে ফেলে দেয় বিজেপি। নিজেকে বাঁচাতে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নেন মায়াবতী। শুধু তাই নয়, জেলের কাল কুঠুরির আতঙ্কে বহুবার বিজেপিকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সাহায্য করতেওর বাধ্য হয়েছেন তিনি। এবার দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ভাইপোকে নিয়ে এলেন সামনে।
নতুন মুখ হিসেবে আকাশ আনন্দ দলকে সামনে এগিয়ে নিতে পারবেন ? একটু ফ্ল্যাশ ব্যাক এ গেলে দেখা যাবে আজ আকাশকে যে পদ্ধতিতে দলীয় সংগঠনে উড়িয়ে নিয়ে এলেন মায়াবতি। সেই একই স্টাইলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃণমূলের
শীর্ষ থেকে তৃণমূলস্তরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ স্ক্রিপ্ট এক, টার্গেট এক, শুধুমাত্র কুশিলব আলাদা। আর এই নতুন পরিবারতন্ত্র’র নাম ‘পিসি কালচার।”……….. যাই হোক আমার কথাটি ফুরলো নটে গাছটি মুরলো। ও হ্যাঁ যাওয়ার আগে একটা কথা,- এই নতুন পরিবারবাদেও কিন্তু ‘এগিয়ে বাংলা।’