
নিজস্ব সংবাদদাতা, মুর্শিদাবাদ : রাজ্যের রাজনৈতিক উত্তাপের মাঝে শনিবার শমসেরগঞ্জ ও ধুলিয়ানের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসতে পারেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শুক্রবার মালদহ সফর সেরে রাতেই পৌঁছেছেন ফরাক্কায়। শনিবার সকালে তাঁর যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ধুলিয়ানের জাফরাবাদ এলাকায়, যেখানে সাম্প্রতিক হিংসায় প্রাণ হারিয়েছেন পিতা ও পুত্র।
এই সফরকে কেন্দ্র করে তৎপর হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির তালিকা তৈরি করে চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তালিকায় ২৫০-রও বেশি বাড়ি এবং ১০০-রও বেশি দোকান ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শমসেরগঞ্জ ব্লক এবং ধুলিয়ান পুরসভার অন্তর্গত এলাকাগুলিতে।
শুক্রবার বিকেল থেকেই শুরু হয়েছে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ। ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে সিলিং ফ্যান, টিউবলাইট, সুইচ বোর্ড, টর্চ, বিছানা ও বালিশের মতো জরুরি সামগ্রী। আশ্রয়শিবির থেকে ফিরে যাঁরা বাড়ি ফিরছেন, তাঁদের জন্য প্রশাসনের তরফে চলছে জরুরি সহায়তা প্রদান। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র জানান, ‘‘ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আপৎকালীন ভিত্তিতে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
তবে রাজ্যপালের সফরের আগে প্রশাসনের এই তৎপরতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। জেলা বিজেপি-র দাবি, রাজ্যপালের কাছে পরিস্থিতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। জেলা বিজেপি নেতা গৌরীশঙ্কর ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘পাঁচ দিন ধরে ঘরছাড়া পরিবারগুলোর জন্য আজ আলোর ব্যবস্থা হচ্ছে, দেওয়া হচ্ছে পাখা! সদিচ্ছা থাকলে এগুলো অনেক আগেই করা যেত।’’
বিজেপির এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। তাদের দাবি, প্রশাসন শুরু থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে কাজ করছে। শাসকদলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘‘বাইরের কেউ আসছেন শুনে তড়িঘড়ি কিছু করা হয়নি। আমাদের কাজ নিয়মমাফিক চলছে।’’
এই প্রেক্ষিতেই শনিবার ধুলিয়ানের জাফরাবাদে নিহত পিতা-পুত্রের বাড়িতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রাজ্যপালের। পাশাপাশি, শুক্রবারই ওই এলাকায় পৌঁছেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি দল। কমিশনের সদস্যদের সামনে পেয়ে অনেকেই প্রকাশ্যে অভিযোগ জানিয়ে বলেন, তাঁদের সুরক্ষিত জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প।
জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান সরাসরি আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপির দিকে। তাঁর কথায়, ‘‘হিংসার সময় তৃণমূল নেতারা, এমনকি আমি নিজে আক্রান্ত হয়েছি। তবুও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। যারা বাইরে থেকে এসে পরিস্থিতি নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে, তারা যেন মানবিকতা বিস্মৃত না হয়।’’
সাম্প্রতিক অশান্তি এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপ ঘিরে মুর্শিদাবাদের রাজনৈতিক আবহ তীব্র হয়ে উঠেছে। রাজ্যপালের সফরের দিনে চোখ থাকছে শমসেরগঞ্জ ও ধুলিয়ানে। প্রশাসনের উপর প্রশ্ন, আর মানুষের মনে আশঙ্কা—এই টানাপোড়েনের মধ্যেই এগোচ্ছে মুর্শিদাবাদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া।