
সম্পূর্ণা সেনগুপ্ত ওঙ্কার ডেস্ক: নিকট ভবিষ্যতে তেমন সম্ভাবনা না থাকলেও, আগামী ৫০০ বছরের মধ্যে সূর্যের মৃত্যু ঘটবে বলে আশঙ্কা রয়েছে বিজ্ঞানীদের। তিল তিল করে সূর্যের জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে, পাশাপাশি চিরতরে মহাকাশেই হারিয়ে যাবে সৌরজগত, এমনটাই দাবি তাঁদের। তবে কী, সুর্যের মৃত্যুর সাথেই পৃথিবীর মৃত্যুও ঘনিয়ে আসছে? এই আশঙ্কাও কিন্তু নতুন কিছু নয়! সূর্যের মৃত্যুর পর ও যাতে পৃথিবীতে প্রাণশক্তি টিকিয়ে রাখা যায়, তার জন্য ইতিমধ্যেই বিকল্প পথের সন্ধান করছেন সৌর বিজ্ঞানীরা। ন্যাশনাল এরোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) এর বিজ্ঞানীরা মনে করছেন সুর্যের অনুপস্থিতিতে কৃষ্ণ- গহ্বর তথা ব্ল্যাক হোল হয়ে উঠতে পারে শক্তির নতুন প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু কিভাবে? এই উত্তর মোটেও সহজ নয়!
সূর্যকে ঘিরেই তৈরী গোটা সৌরমণ্ডল। পৃথিবীর সমস্ত প্রাণশক্তির ও সৃষ্টির আধার সৌরশক্তি। অতএব সূর্য ছাড়া পৃথিবীর অস্তিত্ব একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু সূর্যের মৃত্যু হলে, কী হতে পারে, এই চিন্তা শুধু বিজ্ঞান পিপাসু দের নয় বরং তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বিজ্ঞানীদেরও। আর তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে একাধিক তত্ত্ব উঠে এসেছে।
*মৃত্যুর পথে সূর্য:*
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন আর বেশিদিন নেই সূর্য! নাসার বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণা পত্রে দাবি করেছেন মতে আর মাত্র ৫০০ বছর পরই মৃত্যু হবে সূয্যি মামার! কি অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন কি হবে পৃথিবীর? কোথায় যাবে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীরা? পৃথিবীর বুক থেকে কি চিরতরে মুছে যাবে উদ্ভিদকূল? এই আশঙ্কা কিন্তু খুব একটা ভুল নয়! ক্রমাগত চলতে থাকা নিউক্লিয় বিক্রিয়া সুর্যকে ভিতর থেকে ক্ষয় করে দিচ্ছে। ফলে, সূর্যের কেন্দ্র ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হচ্ছে। ক্রমশ ক্ষয় হওয়ার ফলে সূর্য আসন্ন সময়ে তাপ উৎপন্ন করার ক্ষমতা হারাবে। সূর্যের স্তরগুলো ঠান্ডা হয়ে আলাদা হয়ে যাবে এবং এটি মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছবে। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের পৃথিবীও সূর্যের স্তরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে, এমনটাই দাবী আমেরিকান মহাকাশ বিজ্ঞান সংস্থার।
*সূর্যের সাথে পৃথিবীও বিলুপ্তির পথে* *!!
* সূর্য না থাকার ফলে এর কেন্দ্রাবিমুখী বল শূন্য হয়ে যাবে ফলে সৌরজগতের অন্যান্য সমস্ত গ্রহ গুলির প্রতি সূর্যের আকর্ষণ বলের অস্তিত্ব থাকবে না। সূর্যের স্তর গুলি প্রচন্ড গতিতে ভেঙে সৌরজগতে ছড়িয়ে পড়বে বিক্ষিপ্ত উল্কাপিণ্ডের মত। বিভিন্ন গ্রহ নক্ষত্র গুলির মধ্যেকার তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে, সৌরজগতের কোনো গ্রহগুলি আর নিজের নির্দিষ্ট কক্ষপথে অবস্থান করতে পারবেনা। একটির সাথে আর একটির ধাক্কা লাগবে। এই প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে আমাদের পৃথিবীও বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
*বিকল্প উপায় ব্ল্যাক হোল?*
আগামী দিনে সূর্য যদি বিলুপ্ত হয়, তবে ব্ল্যাক হোল কিভাবে হয়ে উঠবে ত্রাতা?? এর যে উত্তর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা, তা হল, স্যার আইজ্যাক নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সূত্র অনুযায়ী, সূর্যের সমান ভরের কৃষ্ণগহ্বরের ক্ষেত্রে পৃথিবী এবং তার মধ্যে আকর্ষণ বলের তেমন তারতম্য হবে না। ফলে কক্ষপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। পাশাপাশি, অত্যধিক তাপমাত্রার জন্য বর্তমানে যেখানে সূর্যের কাছাকছি ঘেঁষা একেবারেই অসম্ভব, সেখানে কৃষ্ণগহ্বরের কাছে যাওয়ায় সেই সমস্যা থাকবে না।
*সমস্যার শেষ এখানেই নয়!*
পৃথিবী, এবং অন্যান্য গ্রহগুলি যত বেশি কৃষ্ণগহ্বরের কাছে পৌঁছবে পৃথিবী, ততই পৃথিবীর উপর কৃষ্ণগহ্বরের মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাব বাড়বে। আবার, সুর্যের মতো ব্ল্যাকহোলের কোনো আলোক শক্তি না থাকায়, পৃথিবী তথা অন্যান্য গ্রহগুলিকে আলোও দিতে পারবে না। ফলে, প্রাণশক্তি, নতুন সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলেই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ব্ল্যাক হোল যখন আকারে বড়ো হতে শুরু করবে, তার টানে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে পৃথিবী। সম্পূর্ণ সৌরজগত ধুলোর রাশির মতো হারিয়ে যাবে মহাজাগতিক শূণ্যে।তবে আশার কথা, এক্ষুনি এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু, যদি কখনও ঘটে, তার ফল কী হতে পারে, শুধু তারই উত্তর খুঁজতে গিয়ে এই উত্তরগুলি সামনে এনেছেন বিজ্ঞানীরা।