
সম্পূর্না সেনগুপ্ত, ওংকার ডেস্ক :
যৌনতা, যৌনশিক্ষা (sex-education) – এই দুটি শব্দই অনেক গুরুত্ব বহন করে। উপযুক্ত বয়সভিত্তিক যৌন শিক্ষা একটি শিশুর জন্য জীবনে সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠা, সঠিক মূল্যবোধ,সম্ভ্রম, সামাজিক পরিসরে দায়িত্ব পালন; ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
বেশিরভাগ বাবা মাই শিশুর সাথে যৌনতা কিংবা যৌনশিক্ষা বিষয়ে কথা বলতে বিব্রত বোধ করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা এই বিষয়গুলো স্কুল, শিক্ষক- শিক্ষিকা প্রমুখের উপর ছেড়ে দেন। কিন্তু একথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে শিশুর স্বাভাবিক বৌদ্ধিক, সামাজিক ও মানসিক বিকাশের জন্য সঠিক বয়সভিত্তিক যৌনশিক্ষা অত্যন্ত আবশ্যক। আর ই দায়িত্ব কেবলমাত্র বাবা মা ই পালন করতে পারেন। শিশুকে যৌনতা বিষয়ক শিক্ষা দেওয়ার সঠিক বয়স, কী কী শেখাবেন; নীচে রইলো বিস্তারিত বিবরণ বহু মনোবিদ, এবং শিশু বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, একজন শিশুকে বয়সের বিভিন্ন স্তর অনুযায়ী যৌনশিক্ষার পাঠ দান করা উচিত। যৌন বিষয়ক শিক্ষার নিয়ন্ত্রিত প্রভাব শিশুকে সামাজিক এবং ব্যক্তি পরিসরে সঠিক দায়িত্ব পালনে এবং একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। যেহেতু যৌন শিক্ষার সাথে মানব দেহের শারীরিক গঠন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নাম, সঠিক ব্যবহার, প্রজনন, প্রজনন স্বাস্থ্য, সম্মতি, যৌন নিবিড়তা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় গুলি যুক্ত থাকে, সেহেতু অভিবাভকদের এটা জানা খুব দরকার কোন বয়সে শিশুকে কী সেখানো উচিত।
২-৬বছর
যেহেতু এই বছরের শিশুদের মানসিক পরিপক্কতা খুবই কম থাকে, তাই এই বয়সের বাচ্চাদের শরীরের সব অঙ্গের সঠিক নাম শেখান। যৌনাঙ্গের জন্য ছদ্মনাম ব্যবহার না করে প্রয়োজনে মেডিকেল টার্ম ব্যাবহার করুন।
৭-১২ বছর
এই বয়সের শিশুরা বিদ্যালয়ে যায়, বিভিন্ন বন্ধু-বান্ধবীর সাথে তাদের মেলামেশা বাড়ে। স্বাভাবিক ভাবেই এই বয়সের শিশুদের মাথায় বাচ্চা কী করে হয়, মেয়ে বন্ধু, ছেলে বন্ধু, প্রেগন্যান্ট হওয়া, ইত্যাদি নানান বিষয় নিয়ে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। এই সময় থেকেই আপনার বাচ্চাকে নারী-পুরুষের সাবলীল মেলামেশা, সম্পর্ক, সামাজিক স্বাধীনতার বিষয়ে সহজ শিক্ষা দিন। গর্ভধারণের বিষয়ে জানতে চাইলে শিশুকে বলুন বাবা ও মায়ের ভালোবাসায় সন্তান তৈরি হয়, মায়ের পেটে সন্তান থাকে এবং সঠিক সময় মতো তার জন্ম হয়, ইত্যাদি। এছাড়াও, ভাল এবং খারাপ স্পর্শের, পার্থক্য বোঝান।
১৩-১৮ বছর
এই বয়সে আপনার সন্তান মোটামুটি ভাবে সচেতন হয়ে গেলেও সম্পূর্ণরূপে সমস্যা ও জটিলতার ঊর্ধ্বে একেবারেই নয়। বয়ঃসন্ধিকালে কোনো প্রকার ভুল করলে সন্তান কে বোঝান, ভুল সংশোধন করিয়ে দিন। উত্তেজিত হবেন না , আপনার সন্তানের সাথে সহযোগিতা করুন, বাস্তবতা এবং ফ্যান্টাসির মধ্যেকার পার্থক্য বুঝিয়ে দিন। এছাড়াও এই সময়ে আপনার সন্তানের সাথে যৌন সম্পর্কের সম্মতি, গোপনীয়তা ইত্যাদি বিষয়েও খোলামেলা আলোচনা করুন।
মনে রাখুন: যৌনতা এবং যৌনশিক্ষা অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয়। সঠিক শিক্ষার অভাবে আপনার শিশুর ক্ষতি হতে পারে। তাই মনে রাখবেন সংকোচ করবেন না, লজ্জা পাবেন না। সঠিক বয়সভিত্তিক যৌনশিক্ষার পাঠদানের মাধ্যমে আপনার শিশুকে সচেতন এবং উন্নত ভবিষ্যতের অধিকারী হয়ে উঠতে সাহায্য করুন।