
ত্রয়ণ চক্রবর্ত্তী: গল্প হলেও সত্যি! ১৩ বছর বয়সে বিহারে পাচার হয়ে গিয়েছিলেন লক্ষীকান্তপুরের মধুবনী জতুয়া। ( নাম পরিবর্তিত)। মধুবনীর বয়স এখন ১৭। সকল বাধা অতিক্রম করে মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিচ্ছে এই যুবতী। বাংলার ছেলে মেয়েদের ভিন রাজ্যের পাচার হয়ে যাওয়ার খবর প্রতিনিয়ত আমাদের কানে আসে। নাবালক – নাবলিকদের কিভাবে পাচার করা হয় এবং পাচার করার সময় ঠিক তাদের মনে কি চলে সেই খোঁজ নিতে ওঙ্কার নিউজের প্রতিনিধি পৌঁছে গিয়েছিল, দক্ষিন ২৪ পরগনার লক্ষীকান্তপুরে।
মধুবনী জতুয়ার বাবা দিনমজুর । আর্থিক অনটনের শিকার পরিবার। পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য মধুবনী বিভিন্ন জায়গায় নাচ এবং আঁকা প্রতিযোগিতায় নাম দিত ছোট থেকেই এই ভেবে যে একদিন সে নাম করা শিল্পী হয়ে উঠবে। এরই মধ্যে তারই পূর্ব পরিচিত এক দিদি মধুবনীকে বলেন যে তার কাছে সুযোগ আছে কিন্তু তার জন্য কলকাতা যেতে হবে মধুবনীকে। ১৩ বছরের নাবালিকা মধুবনী টের পায়নি যে সবটাই তাকে পাচার করার পরিকল্পনা। পরিবারের পাশে দাঁড়াবে ভেবে মধুবনি কলকাতা যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে যায়। বাড়ির লোককে না জানিয়েই সে পাড়ি দিয়ে দেয় বাসে । সঙ্গে ছিল সেই দিদি। রাতের অন্ধকারে কলকাতার নাম করে মধুবনিকে নিয়ে যাওয়া হয় বিহারের এক গ্রামে। ওঙ্কার নিউজের প্রতিনিধিকে মধুবনী বলেন, যে তাকে বাস থেকে নামিয়ে কালো কাচের গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রশ্ন করলেই তাকে উত্তর দেওয়া হয় যে কলকাতায় যাওয়া হচ্ছে। পরের দিন সকালে চোখ খুলতেই মধুবনী নিজেকে একটি বদ্ধ ঘরের মধ্যে দেখতে পায়। তারই মতন একাধিক নাবালিকাকে ছিল সেখানে, এমনটাই জানালেন মধুবনী। বিহারের বিভিন্ন বিয়ের অনুষ্ঠানে ১৮ ঘন্টা এই নাবালিকাদের নাচ করানো হত। এদেরই মধ্যে কিছু জনকে যৌনকর্মী হওয়ার কথা বলা হত। রাজি না হলে নেপালে পাচার করে দেওয়া এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হত। বেধড়ক মারধর করা হতো প্রত্যেককে সময় মতন খাওয়ার মিলতো না দেওয়া হতো একাধিক ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগস। যখনই সফল ঘটনা ঘটছে তখনই মধুবনীর মতন এক নাবালিকা তার ফোন থেকে এক বন্ধুকে ফোন করেন। পুরো বিষয়টি বন্ধুকে জানানোর পর পুলিশ এবং সিআইডির কাছে খবরটি পৌঁছয়। ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ সালে মধ্যরাতে পুলিশ এবং সিআইডির যৌথ অভিযানে প্রত্যেকজনকে উদ্ধার করা হয়। পেরিয়েছে চার বছর। সমাজ এদেরকে মেনে নেয়নি এখনও। পাচা্রের শিকার হয়ে সমাজে ফিরে আসা প্রত্যেকের হাত ধরে তৈরি দিল্লির সংস্থা ‘ইলফত’। ভারতের প্রথম প্যান-ন্যাশনাল সারভাইভার ফোরাম ‘ইলফত’। বর্তমানে ৭ টি রাজ্যে ১২ টি শাখা আছে এই সংস্থার।
৪০০০-এর বেশি সদস্য রয়েছে যারা পাচার হয়ে আবার সমাজে ফিরে এসেছে। ১৭ বছর বয়সী মধুবনী একাধিক বাধা অতিক্রম করে মাধ্যমিকের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন। তিনি চাইছেন যে আগামীতে পাচার হয়ে যাওয়া নারীদের এবং পুরুষদের পাশে সে দাঁড়াবেন।