
আশিস মণ্ডল, বোলপুরঃ আরজি কর কাণ্ডের আবহে বিশ্বভারতীতে ভিন রাজ্যের আবাসিক ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে চাঞ্চল্য৷ জানা গিয়েছে, আম্রপালি ছাত্রী নিবাসেই বিষ খেয়েছে বারানসির ছাত্রীটি৷ পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয়৷ তবে এই ঘটনায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে ছাড়াই শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ ছাত্রী নিবাসে প্রবেশ করে বলে অভিযোগ। আর এই অভিযোগে মধ্যরাত পর্যন্ত পুলিশকে ছাত্রী নিবাসে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখায় পড়ুয়ারা৷ পরে ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিবের নেতৃত্বে আধিকারিকরা আসেন, অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার আসেন। পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দেন৷ তবে ঘটনাকে কেন্দ্র উত্তাল বিশ্বভারতী।
বিশ্বভারতীর শিল্প সদনের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অনামিকা সিং৷ উত্তরপ্রদেশের বারানসির বাসিন্দা৷ বিশ্বভারতীর আম্রপালি ছাত্রী নিবাসে থেকেই পড়াশোনা করত৷ বিশ্বভারতী ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্রীটি বিষ খায়৷ অসুস্থ অবস্থায় তার সহপাঠীরা প্রথমে তাকে বিশ্বভারতীর পিয়ার্সন মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ পরে অবস্থার অবনতি হলে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানেই সন্ধ্যায় চিকিৎসক ছাত্রীটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷
খবর পেয়েই হাসপাতালে যান বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তবে শুক্রবার রাতে দেখা গেল শান্তিনিকেতন থানার ওসি কস্তুরি মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশ আম্রপালি ছাত্রী নিবাসে আসেন৷ অভিযোগ, বিশ্বভারতীর কোন আধিকারিক ছাড়াই কিভাবে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীর ছাত্রী নিবাসে পুলিশ প্রবেশ করল? ছাত্রী নিবাসের মূল গেটে কেন সিসি ক্যামেরা নেই৷ এই সকল অভিযোগে ওসি সহ পুলিশকে ছাত্রী নিবাসে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা৷ ‘বিশ্বভারতীকে আরজি কর হতে দেব না’ সহ তথ্য লোপাটের চেষ্টা চলছে বলেও স্লোগান ওঠে৷ খবর পেয়ে অতিরিক্ত বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার রাণা মুখোপাধ্যায়, বোলপুরের এসডিপিও রিকি আগরওয়াল। বিশ্বভারতীর তরফে আসেন ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতো, নিরাপত্তা আধিকারিক সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়, ছাত্র পরিচালক গনেশ মালিক৷ তাদের ঘিরেও স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা৷ পুলিশ জানায়, তথ্য যাতে লোপাট না হয় তারজন্য ঘরটিকে সিল করতে তড়িঘড়ি ঢুকতে হয়েছে। যদিও, ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্বভারতী।
উল্লেখ্য, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে হত্যার ঘটনায় উত্তাল রাজ্য৷ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে দিকে দিকে প্রশ্ন উঠেছে। সেই আবহে বিশ্বভারতীতে ভিন রাজ্যের ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু আর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে ছাড়াই ছাত্রী নিবাসে পুলিশের প্রবেশ নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন উঠেছে।
ছাত্রীদের মধ্যে দেবমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সেই বিকেলের ঘটনা৷ আর মধ্য রাতে পুলিশ আসছে মেয়েদের হোস্টেলে তাও বিশ্বভারতীর কোন অধিকারিক নেই। এটা কিভাবে সম্ভব। তথ্য লোপাট করার চক্রান্ত৷ আর মেয়েদের হোস্টেলের গেটে সিসি ক্যামেরা নেই, বিশ্বভারতীর হাসপাতালের কোন পরিকাঠামো নেই৷ আমরা এর বিচার চাই৷ কেন পুলিশ ঢুকলো কোন আধিকারিককে ছাড়াই৷”
বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতো বলেন, “একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আমরা সাথে সাথেই তার পরিবারকে খবর দিয়েছি৷ আর আমরা হাসপাতালে ছিলাম। তাই হোস্টেলে পৌঁছাতে দেরি হয়েছে। যাতে পুলিশ বলতে না পারে আমাদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি, তাই পুলিশ হোস্টেলে গিয়েছে। আমরা পরে এলাম।”
বীরভূম জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাণা মুখোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতাল থেকে খবর পেয়েছি আমরা৷ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে কোন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত করা হবে৷ আর যাতে কোন রকম তথ্য প্রমাণ লোপাট না হয় তাই পুলিশ হোস্টেলের ঘরটি তড়িঘড়ি সিল করেছে৷ প্রয়োজনে ফরেন্সিক দল ডাকা হবে৷ আমরা তদন্তে কোন খামতি রাখব না।”