
নিজস্ব সংবাদদাতা : পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘সুপার নিউমেরিক পোস্ট’ সংক্রান্ত শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিতই থাকছে। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, এই মুহূর্তে রাজ্য সরকার কোনও নতুন নিয়োগ করতে পারবে না। বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার স্পষ্ট নির্দেশ দেয়, সিঙ্গল বেঞ্চের দেওয়া অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।
রাজ্যের শিক্ষা দফতর শারীর শিক্ষা ও কর্মশিক্ষা বিষয়ের জন্য প্রায় ৬,০০০ অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করেছিল। এই সিদ্ধান্তকে ভিত্তি করেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। যদিও এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে। মামলাকারীদের অভিযোগ, এই অতিরিক্ত পদগুলির কোনও বৈধ ভিত্তি নেই।
৭ মে হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর সিঙ্গল বেঞ্চ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে। তখন বলা হয়, সুপার নিউমেরিক নামে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা কী আদৌ আইনসিদ্ধ, তা যাচাই না করা পর্যন্ত কোনও নিয়োগ করা যাবে না।
এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে চাকরিপ্রার্থীদের একটি অংশ ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করে। কিন্তু সেখানে বিচারপতিরা বলেন, “শেষে যদি দেখা যায় এই পদ আইনসিদ্ধ নয়, তাহলে নিয়োগ করে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হবে। এখনই স্থগিতাদেশ তোলার কোনও যুক্তি নেই।”
বিচারপতি সৌমেন সেন এদিন বলেন, “যদি আমরা শেষে দেখতে পাই যে রাজ্য সুপার নিউমারিক পোস্ট করতেই পারে না, তাহলে স্থগিতাদেশ তুলে দিয়ে কী লাভ?” এই মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট, হাইকোর্ট চাইছে নিয়োগের আগে পুরো বিষয়টি আইনানুগ নিরীক্ষা হোক। মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী পার্থ সারথী সেনগুপ্ত বলেন, “দুই বছর ধরে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা অপেক্ষা করছেন। মন্ত্রিসভার অনুমোদন থাকলে নিয়োগ বন্ধ থাকার কোনও মানে হয় না।”
অন্যদিকে, সরকারপক্ষের আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য পাল্টা বলেন, “যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁরা অনেকেই পরীক্ষায় পাশ করেননি। ফলে তাঁদের দাবি গ্রহণযোগ্য নয়।” প্রসিদ্ধ আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “এই মামলা আদৌ টিকবে কি না, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। মামলাকারীদের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে কি না, তা-ও বিচারযোগ্য বিষয়।”
প্রসঙ্গত, এর আগে হাইকোর্ট এই পদসৃষ্টিকে বেআইনি আখ্যা দিয়ে এমনকি সিবিআই তদন্তের নির্দেশও দিয়েছিল। বলা হয়েছিল, প্রয়োজনে মন্ত্রিসভার সদস্যদের জেরা করা যেতে পারে। তবে সুপ্রিম কোর্ট সেই নির্দেশ খারিজ করে জানিয়ে দেয়— রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে পদ সৃষ্টি করা বেআইনি নয়, এবং এতে সিবিআই হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এই রায় রাজ্য সরকারের পক্ষে গেলেও হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ এখনো বহাল থাকায় বাস্তবে নিয়োগ কার্যত বন্ধ।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১৮ জুন, সিঙ্গল বেঞ্চে। সেখানে স্থায়ীভাবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু থাকবে কি না, বা সুপার নিউমারিক পোস্ট আদৌ বৈধ কি না—সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এই মামলাটি শুধু শিক্ষক নিয়োগ বা কিছু চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যতের প্রশ্ন নয়—এটি এক বৃহৎ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও নীতির সাংবিধানিক বৈধতা নির্ধারণের ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ইতিবাচক হলেও, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ আপাতত যে রাশ টেনেছে, তা নিঃসন্দেহে গোটা শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থাকে কিছুদিনের জন্য হলেও স্থবির করে দিল।