
সূর্য জ্যোতি পাল, কোচবিহারঃ উচ্চস্বরে রাজবংশী ভাষায় মন্ত্র পড়েন কৃষকরা। সুর ও ছন্দে মাটির টান। বলেন, পোকামাকড় দূর হোক। ধানের ফলন ভাল হোক, ‘ডাক লক্ষ্মী’র কাছে এই তাঁদের প্রার্থনা। উত্তরবঙ্গের রাজবংশী জনজাতির মধ্যে প্রচলিত রয়েছে সেই ‘ডাক লক্ষ্মী’র পুজো বা কাতি-গছা।
আশ্বিনের সংক্রান্তিতে সবুজ ধানের খেতে দেখা গেল সেই লক্ষ্মীর আবাহন। কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি গোটা উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষজন আজ ‘ডাক লক্ষ্মী’র আরাধনা করছেন।
বাড়িতে পুজো দিয়েই চলে আসছেন ধানখেতে। প্রদীপ ও পাটের আঁশের সঙ্গে ঘি মিশিয়ে ভোগা তৈরি করে আগুন জ্বালান ওঁরা। সেই সঙ্গে সর্ষের খোল আর দেশি লেবু গাছের পাতা ভেজে একসঙ্গে গুঁড়ো করে ছিটিয়ে দেন ধানখেতে। ধানই কৃষকদের কাছে লক্ষ্মী। তাই ‘ডাক লক্ষ্মী’র পুজোর উপাচার এমনই।
কোচবিহার জেলার কৃষক অজিত কুমার বর্মন, সনাতন বর্মন,জানান, তাঁরা প্রকৃতির পুজো করেন। বীজ বপন থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত প্রতিনিয়ত পুজো চলে। ধানের শীষ যখন বের হয় সেই সময় পোকামাকড় সবচেয়ে বেশি উপদ্রব করে। ফসল রক্ষা করতেই সেসময় লক্ষ্মীকে ডাক দিয়ে পোকামাকড় দূর করার প্রার্থনা করেন তাঁরা।
কৃষকরা জানান, লক্ষ্মীর ডাকের প্রচলিত রীতিতে যেমন পুজো রয়েছে তেমনি রয়েছে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও। সন্ধেয় আগুন জ্বালিয়ে লেবুপাতা আর সর্ষের ধোঁয়া দিলে এমনিতেও পোকামাকড় মরে যায়। সেগুলিই প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে কাজ করে। তবে ‘ডাক লক্ষ্মী’র সেই প্রাচীন রীতি আগের চেয়ে অনেকটাই কমে যাচ্ছে বলে জানান।উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতেই কেবলমাত্র বেঁচে আছে এই পুজো। তবে বাংলার ঘরে ঘরে যখন লক্ষ্মী আবাহনের তোড়জোড়, তখন রাজবংশীদের লক্ষ্মীবন্দনা অন্য জীবনের গন্ধ বয়ে আনে। সে যেন পূর্ণিমার আলো মাখা প্রকৃতির উৎসব। খেতে খেতে এখন লক্ষ্মীকে খুঁজে চলেছেন তাঁরা।