
তাপসী রায় প্রধানঃ লোকসভা ভোটের দামামা বেজে গেছে। যেকোন দিন ঘোষণা হবে ভোটের দিনক্ষণ। প্রার্থী বাছাইও শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। প্রার্থীদের নাম ঘোষণার আগে চলছে জোর জল্পনা। কে হবেন প্রার্থী! শাসক দল তৃণমূলের হয়ে কারা লড়বেন ৪২ টি আসনে!
সূত্রের খবর, একাধিক আসনে নতুন মুখ চাইছে নেতৃত্ব। সবার প্রথমে যে কেন্দ্রের নামগুলি উঠে আসছে তা হল আরামবাগ, বসিরহাট, যাদবপুর।
আজ প্রথম পর্বে আমরা বলবো হুগলী জেলার আরামবাগ কেন্দ্র নিয়ে-
১৯৬৭ সালে আরামবাগ লোকসভা আসন থেকে প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হন সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লকের অমিয়নাথ বোস। ১৯৭২ এর নির্বাচনে সাংসদ হন সিপিআইএম’র মনোরঞ্জন হাজরা। ১৯৭৭ সালে আরামবাগ কেন্দ্রটি দখল করে ভারতীয় লোক দল। সাংসদ নির্বাচিত হন প্রফুল্লচন্দ্র সেন। ১৯৮০ সালে আসনটি ফের দখল করে সিপিআইএম। সাংসদ নির্বাচিত হন বিজয়কৃষ্ণ মোদক। ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৪ হুগলির আরামবাগ লোকসভা আসনে টানা সাতবার সাংসদ নির্বাচিত হন অনিল বসু। ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে ৫ লক্ষ ৯২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন তিনি। সেই ভোটে আরামবাগে অবাধ রিগিং ও বুথ দখলের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। ২০০৯ লোকসভা নির্বাচনে, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্ক্সবাদী প্রার্থী করে শক্তি মোহন মালিকে। বড় ব্যবধানে জিতে সাংসদ নির্বাচিত হন শক্তিমোহন মালিক।
২০১৪ সালে আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রে ঘাসফুল ফোটে। সাংসদ নির্বাচিত হন সাংসদ অপরূপা পোদ্দার ওরফে আফরিন আলি। ২০১৪ সালে এহেন আরামবাগ আসনে তৃণমূলের জয় ছিল ঐতিহাসিক মাইলফলক। সিপিএম প্রার্থীকে শুধু পরাস্ত করা নয়, তৃণমূল সাড়ে ৩ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট আসতে আসতেই অপরূপার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তৈরি হতে শুরু করে। বিশেষ করে ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের সময়ে যে নারদ স্টিং অপারেশনের ফুটেজ প্রকাশিত হয়, তাতেও দেখা যায় অপরূপাকে। শুধু তা নয়, অপরূপা ও তাঁর স্বামী সাকির আলির বিরুদ্ধে দলের মধ্যে থেকেই অভিযোগ উঠতে শুরু করে। তার পরেও উনিশের লোকসভা ভোটে প্রার্থী করা হয়েছিল তাঁকে। উনিশে একবারে কান ঘেঁষে জিতেছিলেন অপরূপা। বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে ব্যবধান ছিল মাত্র ১১৪২ ভোটের। তৃণমূল সূত্রে খবর, আরামবাগ বর্তমান সাংসদ অপরূপা পোদ্দার ওরফে আফরিন আলির টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা এবার খুবই ক্ষীণ।
তার উপর তণমূলের সাংসদের বিরুদ্ধে স্থানীয় স্তরে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তৈরি হয়েছে। শুধু জেলা সংগঠনের রিপোর্ট নয়, দল সমীক্ষা করে দেখেছে অপরূপার জনপ্রিয়তা নেই। তাই মুখ বদল করতে চাইছে তৃণমূল। আরামবাগ লোকসভা আসন ২০১৪ সাল থেকে তা তফশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। ফলে আরামবাগে নতুন মুখ বাছতে হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এবার একটি তফশিলি মুখ খুঁজে আনতে হবে। রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাকে আরামবাগ থেকে প্রার্থী করতে পারে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।