
৫ই অক্টোবর শুক্রবার বিকেল ৪টেয় কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে শ্যামবাজার মিছিল করলেন নাগরিকরা। কলকাতা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসেসিয়েশন আর সেভ ট্রাম সেভ হেরিটেজের উদ্যোগে আজ ট্রাম বন্ধের বিরুদ্ধে মুখরিত হল কলকাতার রাজপথ।
চলতি মাসে কলকাতার জানজট, কমস গতি ইত্যাদি নানা যুক্তিতে ট্রাম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য পরিবহন দপ্তর। পরিবহন দপ্তর জানায় ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে ধর্মতলা থেকে থাকবে জয়রাইড। তারপরেই রাতারাতি নাগরিকদের প্রতিবাদে মাত্র দুটি রুটে ট্রাম চালিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। আজ কলকাতায় ট্রাম পুনরায় চালু করার দাবি নিয়ে মিছিল করলেন নাগরিকেরা।
সেভ ট্রাম সেভ হেরিটেজের সভাপতি কৌশিক দাস ওঙ্কারকে জানিয়েছেন, “সামগ্রিকভাবে পরিবেশবান্ধব যান ট্রামকে অবলুপ্তির দিকে নিয়ে চলছে প্রশাসন, নানারকম সমস্যা দেখিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা তার বিনিময়ে সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিনিময়ে সাধারণ নাগরিকরা জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে । মহামান্য হাইকোর্ট সাধারণ মানুষের পক্ষে রায় দিয়েছেন যে ট্রাম কলকাতা থেকে অবলুপ্ত হচ্ছে না। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমাদের আরো কয়েকটা পরিষ্কার কথা, কলকাতায় প্রায় ৮০ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে ট্রাম এখনো অবদি সচল হতে পারে, অবিলম্বে সেই সমস্ত রাস্তায় পর্যাপ্ত ট্রাম চালাতে হবে। বেআইনি অটো ট্যাক্সি স্ট্যান্ডগুলোকে তুলে ট্রামের রাস্তা অমলিন করতে হবে। সামগ্রিকভাবে ট্রাম ডিপোর জমি গুলোকে তথা পাবলিক প্রপারটি কে কোন ভাবে কর্পোরেটদের হাতে বেচে দেওয়া চলবে না।”
ওই একই সংগঠনের সম্পাদক আকাশ পাইন জানিয়েছেন, “প্রথমত, ট্রাম পরিবেশবান্ধব যান, এ পরিবেশবান্ধব যান কলকাতার মতো দূষিত শহরে চললে, অন্যান্য গাড়িদের সাথে তাল মিলিয়ে চললে পরিবেশ দূষণের মাত্রা অনেকটা হ্রাস পাবে এবং প্রজন্মের কাছে আমরা একটা সুস্থ পরিবেশ উপহার দিতে পারব। দ্বিতীয়, ট্রাম ভাড়া, অন্যান্য গণপরিববনের চাইতে খানিকটা কম এবং ট্রাম সরকারি গণপরিবহন এই সরকারি গণপরিবহনের সংখ্যা কলকাতা থেকে ক্রমাগত ডুমুরের ফুলের মত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে… গণপরিবহনকে সচল করতে হবে, ইলেকট্রিক বাসের গড় আয়ু মেরে কেটে কুড়ি বছর এবং একটি ট্রাম কমপক্ষে পঞ্চাশ বছর সচল ভাবে সার্ভিস দিতে পারে কাজেই ইলেকট্রিক ট্রাম এর প্রতি কেন বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে পরিবহন দপ্তর কেন ট্রাম কে আরো উন্নত মানের যানবাহনে রূপান্তরিত করে শহরে সচল করানো হচ্ছে না! পরিবহনের খাতে যে অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে তাদিয়ে ট্রামের সংস্করণ কেন পর্যাপ্ত হচ্ছে না! সর্বোপরি ট্রাম আমাদের ঐতিহ্য আমাদের পরিচয়, ট্রাম বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মানে আমাদের ঐতিহ্যে সরাসরি আঘাত আসা।”
এই মিছিলের উদ্যোগ নিয়েছিল কলকাতা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনও। এই সংগঠনের সম্পাদক সাগ্নিক দত্ত জানিয়েছেন, “সরকার কারও সাথে কোনও আলোচনা ছাড়াই একপাক্ষিকভাবে ট্রাম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নাগরিকদের মতামত নিরপেক্ষভাবে এই কাজ অনুচিত। তাছাড়া ট্রাম বন্ধের পিছনে যে যুক্তি রাজ্য সরকার দেখাচ্ছে তা একেবারেই অযৌক্তিক। শহরে যেখানে ট্রাম নেই সেখানে কি যানজট হচ্ছে না। আমরা ট্রাফিক পুলিশকে জিজ্ঞাসা করেছি ট্রাম রাইনের জন্য বছরে কটা বাইক অ্যাক্সিডেন্ট হয়? পুলিশ জানিয়েছে গত দশ বছরে এমন দুর্ঘটনা মাত্র একটা হয়েছে। এছাড়া ট্রাম ট্র্যাকে চলে তাই ট্র্যাকের উপর প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা ট্রামের দায় নয়। তাই আমাদের দাবি, সরকার একটি সুস্থ আলোচনায় আসুক যা থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব।”
পৃথিবীতে এখনও সাড়ে ৪০০টি শহরে ট্রাম চলছে। কলকাতা শহরেও ১৫০ বছরের পরিকাঠামো রয়েছে ট্রামের জন্য। ট্রামকে একেবারে রাতারাতি তুলে দেওয়ার বিষয়ে নারাজ নাগরিকেরা। এই নিয়ে আন্দোলন তাঁরা চালিয়ে যাবেন বলেই তাঁদের বক্তব্য।