
ইন্দ্রানী চক্রবর্তী:অবশেষে সোমবার বিকেলে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে রাজি হলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। শনিবার রাত থেকে রবিবার বিকাল পর্যন্ত টানা জেনারেল বডি বৈঠক চলে এন আর এস মেডিকেল কলেজে। বৈঠকের পর সিদ্ধান্তে এসে জুনিয়ার ডাক্তাররা ইমেইল করেন মুখ্য সচিবকে। ইমেলে ১০ দফা দাবি সহ আরো একগুচ্ছ বিষয় উল্লেখ করেছেন জুনিয়ার ডাক্তাররা।
কী কী রয়েছে সেখানে?
পুরনো দশ দফা দাবিকেই আবারও আটটি ভাগে ভাগ করে ইমেল করেছেন তাঁরা। ১০ দফা দাবির প্রথমেই রয়েছে নির্যাতিত মহিলা চিকিৎসকের জন্য বিচারের দাবি। কিন্তু বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই মামলার তদন্ত করছে। তাহলে, সে ক্ষেত্রে রাজ্য কী করতে পারে? এ বিষয়ে, মনোজ পন্থকে পাঠানো ইমেলে তাঁরা লিখেছেন, ৯ই অগস্টের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কারা জড়িত তার উল্লেখ রয়েছে সিবিআইয়ের চার্জশিটে। নির্যাতিতার জন্য সুবিচার নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার যেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এবং আদালতকে সহযোগিতা করে, সেই অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।
দশ দফা দাবির তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ— চারটি দাবিই হাসপাতালের নিরাপত্তা এবং পরিকাঠামো বিষয়ক দাবি যার কাজ শুরু হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে রাজ্য সরকার। রবিবার মুখ্যসচিবকে পাঠানো চিঠিতে জুনিয়র ডাক্তারেরা লিখেছেন, রাজ্যস্তরে টাস্ক ফোর্স গঠন এবং তার কার্যক্রম প্রসঙ্গে রাজ্য কী ভাবছে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশিকার দাবি করেছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, টাস্ক ফোর্সে জুনিয়র ডাক্তারদের অন্তত ১০ জনকে রাখতে হবে। টাস্ক ফোর্সের মাসিক বৈঠক এবং স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর নিয়েও রাজ্যের থেকে নির্দেশিকা চান জুনিয়র ডাক্তারেরা।
এছাড়াও, কলেজ স্তরে মনিটরিং কমিটি গঠন প্রসঙ্গে রাজ্যের থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা চেয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। জুনিয়র ডাক্তাররা চান, ওই কমিটিগুলিতেও ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি এবং রেসিডেন্ট ডাক্তারদের প্রতিনিধি থাকুক। তাঁদের বক্তব্য, মেডিক্যাল কলেজগুলিতে যতদিন না ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে ততদিন অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন করেই কাজ চলুক। চিকিৎসক পড়ুয়া এবং রেসিডেন্ট ডাক্তারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে আপাতত অন্তর্বর্তী কমিটি চালু করার প্রস্তাব দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের দাবি, নির্দেশিকা জারির দু’সপ্তাহের মধ্যে এই কমিটি গঠন করা হোক।
দশ দফা দাবির অন্যতম স্বাস্থ্য সচিবের অপসারণ। শনিবার দিন সকালে ফোন বার্তা চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে সরানো অসম্ভব। যদিও ইমেলে জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন যে তারা সেই দাবিতে। তাঁদের ব্যাখ্যায়, স্বাস্থ্যসচিবের বিরুদ্ধে ‘পদ্ধতিগত দুর্নীতি’ ও ‘প্রশাসনিক ব্যর্থতা’-র অভিযোগ বার বার উঠেছে। মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাও সেই দুর্নীতির একটি ‘সম্ভাব্য ফল’ বলে মনে করছেন তাঁরা। তাঁরা জানিয়েছেন যে এই দাবির জন্য বিশ্বাসযোগ্য ‘প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রমাণ’ তাদের কাছে রয়েছে।
‘হুমকি সংস্কৃতি’-তে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের জন্যও রাজ্যকে প্রস্তাব দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। রাজ্যস্তরে গঠিত অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্রে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদেরও রাখার জন্য বলেছেন তাঁরা। সাথেই রেসিডেন্ট ডাক্তারদের সংগঠনকে মেডিকেল কলেজগুলিতে একটি বিধিবদ্ধ সংগঠন হিসাবে মান্যতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ইমেলে। এ ছাড়া হাসপাতালগুলিতে শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে রাজ্যকে পদক্ষেপের জন্যও অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। এই বিষয়েও রাজ্যের থেকে স্পষ্ট নির্দেশিকা চাইছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
মুখ্যসচিবের ফোনসেটে কথার পর সশরীরে বৈঠকে রাজি হওয়ার জন্য ইমেলে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। যদিও জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে কত জনের প্রতিনিধিদল যাবে বৈঠকে এবং অনশন না তোলার সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইমেলে কিছু লেখেননি তাঁরা।