
নিজস্ব সংবাদদাতা : শুনানির সময়ে প্রধান বিচারপতি আরও বলেছেন, দুর্নীতি রুখতে কেন্দ্র শর্ত আরোপ করতে পারে, তদারকি করতে পারে, কিন্তু কোনও প্রকল্প এরকম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিতে পারে না।
গত তিনবছর ধরে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে একশ দিনের কাজ প্রকল্পে টাকা বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র। এই নিয়ে রাজ্য সরকার তো বটেই, রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে দিল্লিতে বহুবার ধর্ণা চলেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে গিয়ে এই ইস্যুতে সরব হয়েছিলেন। তবু বাংলাকে ১ টাকাও দেয়নি নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্ত যে রাজ্যের সঙ্গে চরম অসহযোগিতা তা মেনেছিল বাম দলগুলিও। বুধবার সেই প্রকল্পের ব্যাপারে দৃষ্টান্তমূলক রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের নির্দেশ, ১ অগস্ট থেকেই ফের এই প্রকল্প শুরু করতে হবে।
এদিন মামলার শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, “শুরু থেকেই একটা কথা বলছি— ১০টা আপেলের মধ্যে কয়েকটা পচা হতে পারে, কিন্তু বাকিরা তো স্বচ্ছ।” তাঁর কথায়, “যা হয়েছে, সেটা অতীত। কিন্তু প্রায় তিন বছর ধরে প্রকল্প বন্ধ। এবার নতুন করে চালু করতেই হবে। কেন্দ্র এই প্রকল্প স্থগিত রাখতে পারে না।” প্রধানবিচারপতি আরও বলেন, জুলাই কিংবা অগস্ট থেকে চালু করা যায় কিনা ভেবে দেখুন”।
প্রধান বিচারপতি পরামর্শ দিয়েছেন, দুর্নীতি রোধে কেন্দ্র শর্ত আরোপ করতে পারে, তদারকি করতে পারে, কিন্তু কোনও প্রকল্প এরকম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিতে পারে না।
একশ দিনের কাজ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ হিন্দি বলয়ের বিভিন্ন রাজ্যেও রয়েছে। এমনকি সম্প্রতি গুজরাতেও দুর্নীতির ঘটনা ধরা পড়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে প্রকল্প বন্ধ করা হয়েছে এবং পর পর দুটি বাজেটে একটা টাকাও বরাদ্দ করা হয়নি, তার নেপথ্যে রাজনৈতিক অভিষন্ধি রয়েছে বলেই অনেকের মত। এই বিষয়ে অনেকেই মনে করেন, কেন্দ্রের মনোভাব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
আদালতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বলা হয়, যারা প্রকৃতপক্ষে কাজ করেছেন, তাদের বাধা দিতে চায় না কেন্দ্র। কিন্তু কাজ বাস্তবে হচ্ছে কিনা তা দেখবেন কে ? রাজ্য যে বেআইনি ভাবে ব্যবহৃত টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে, তা কেন্দ্রকে ফেরত দিতে হবে। ভবিষ্যতে আবার দুর্নীতি আটকাতে হলে পুরো প্রকল্পের উপর নজরদারি কেন্দ্রের হাতে থাকতে হবে। সে জন্য নোডাল অফিসার রাখতে হবে।
তবে কেন্দ্রের এই বক্তব্য এক্কেবারেই জোরালো মনে হচ্ছে না। কারণ, নজরদারির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে কেন তিন বছর সময় লাগল তার উত্তর কে দেবে ? এই তিন বছর ধরে ধরে লক্ষ লক্ষ গ্রামের মানুষ যে কাজ পেল না তার দায় কার ?
আবার আদালতে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, নোডাল অফিসারের প্রয়োজন নেই, কারণ এই প্রকল্প পুরোপুরি সরকারি পোর্টালের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাই ভুলভ্রান্তি হলে সঙ্গে সঙ্গে নজরে পড়তে বাধ্য। তবে রাজ্যের ভূমিকা যে এ ব্যাপারে খুব ভাল ছিল তা মনে করছেন না অনেকেই। একশ দিনের কাজে ধারাবাহিক ভাবে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল। তা বন্ধ করতে আরও আগে রাজ্য সরকারের উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল।
তবে এদিন কলকাতা হাইকোর্ট যে পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশ দিয়েছে তাকে ইতিবাচক বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে গ্রামের মানুষের কাছে কাজের সুযোগ বাড়বে।